ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে করা মামলায় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনের জামিন হয়নি। তাঁর জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
আজ বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তাঁর (রফিকুল আমীন) আরও কিছুদিন ভেতরে (কারাগারে) থাকা উচিত বলে শুনানিতে মন্তব্য করেন আদালত।
এর আগে ওই মামলায় জামিন চেয়ে রফিকুল আমীন হাইকোর্টে আবেদন করেন। এটি গত বছরের ২ মার্চ খারিজ হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে জামিন চেয়ে একই বছর আবেদন করেন রফিকুল আমীন। আজ শুনানি নিয়ে লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন আদালত।
একই মামলায় হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনের জামিন আবেদন পুনরুজ্জীবিত (রিস্টোরেশন) চেয়ে করা আবেদন শুনানির জন্য আগামী ১৭ নভেম্বর দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ।
আরও পড়ুন: গাছ না লাগিয়ে বরাদ্দের ১৬৯ কোটি টাকা লোপাট : অনুসন্ধান চেয়ে রিট
এর আগে ওই মামলায় মোহাম্মদ হোসেনের করা আপিল গত বছরের ১২ জানুয়ারি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এই আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে আপিল বিভাগে জামিন চান তিনি। কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় গত ১২ জুন এই আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। আবেদনটি পুনরুজ্জীবিত চেয়ে আবেদন করেন মোহাম্মদ হোসেন, যা আজ রফিকুল আমীনের করা লিভ টু আপিলের সঙ্গে একসঙ্গে কার্যতালিকায় ওঠে।
আদালতে মোহাম্মদ হোসেনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস। রফিকুল আমীনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহীন আহমেদ।
পরে আইনজীবী শাহীন আহমেদ বলেন, ‘এখানে বিপুল পরিমাণ অর্থের অভিযোগ, যা পাবলিক মানি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান জিরো টলারেন্স এবং তাঁর (রফিকুল) জামিনের বিষয়ে সহানুভূতিহীন উল্লেখ করে আপিল বিভাগ লিভ টু আপিলটি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন। এর ফলে তাঁকে আপাতত কারাগারেই থাকতে হচ্ছে।’
মামলাটি এখন সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। ২১৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে বলে জানান দুদকের এই আইনজীবী।
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনসহ ডেসটিনির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর কলাবাগান থানায় দুটি মামলা হয়। মামলা ২টিতে মোট ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
দুই মামলার মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের ওই মামলায় ২০২২ সালের ১২ মে রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক। রায়ে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন, কোম্পানির প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদসহ ৪৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। রফিকুলকে ১২ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন রফিকুল আমীন। হাইকোর্ট গত বছরের ২২ জুন আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে রফিকুলের ক্ষেত্রে ২০০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড স্থগিত করেন। অপর মামলাটি এখন বিচারিক আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।