বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থীদের বয়স ২৫ এর স্থলে ১৮ বছর নির্ধারণ করতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের পক্ষে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহামমদ কাউছার ই-মেইল যোগে নোটিশটি পাঠিয়েছেন।
জাতীয় সংসদের স্পিকার, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৬৬ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো নাগরিকের বয়স ২৫ বছর না হলে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯, জেলা পরিষদ আইন ২০০০, উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮, সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ এবং স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ অনুযায়ী প্রত্যেক নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে অন্তত ২৫ বছর বয়স্ক হতে হয়। অন্যথায় অযোগ্য বিবেচিত হয়ে থাকেন।
আইনের বিদ্যমান বিধানের ফলে দেশের কোটি কোটি তরুণ অন্যান্য সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শুধু বয়সের বাধার কারণে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই ধরনের বয়সভিত্তিক অযোগ্যতা অনুমান করা সংবিধানের মৌলিক ধারণা এবং মর্মার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তথা কোটি কোটি তরুণদের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন।
সংবিধানের ৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গণতন্ত্র হবে বাংলাদেশে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি। অনুচ্ছেদ ১১ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার সব পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিধান রয়েছে। অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী এই রাষ্ট্রের মালিক হলো জনগণ এবং সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। বিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্য প্রত্যেক আইন বা বিধান আপনা আপনি বাতিল বলে গণ্য হয়।
অন্যদিকে ১৮৭৫ সালের সাবালকত্ব আইন অনুযায়ী ১৮ বছর পূর্ণ হলে একজন ব্যক্তি সাবালক হিসেবে গণ্য হন এবং নিজের পছন্দ অপছন্দ অনুযায়ী যেকোনো কর্ম আইন অনুযায়ী করতে স্বীকৃতি পান। বিষয়টি বিবেচনা করেই ২০০৯ সালের ভোটার তালিকা আইনের ৭ ধারা অনুযায়ী ১৮ বছর বয়স্ক ব্যক্তি যেকোনো নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার অর্জন করেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয় অন্যান্য সব যোগ্যতা অর্জন করা সত্ত্বেও ২৫ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত কোন ভোটারই কোন ধরনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে না। এ ধরনের বিধান অযাচিত অযৌক্তিক নিপীড়নমূলক এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামো তথা মূল মর্মার্থের সঙ্গে চরম সাংঘর্ষিক। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে ২৫ বছরের বয়সভিত্তিক যোগ্যতার মাপকাঠি অসাংবিধানিক এবং কোটি কোটি তরুণ ভোটারদের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন।
সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সম সুযোগ লাভের অধিকারী। অনুচ্ছেদ ৩৮ সব নাগরিককে আইন অনুযায়ী যেকোনো সমিতি বা সংঘ গঠন করার অধিকার দিয়েছে। অনুচ্ছেদ ৩৯ প্রত্যেক নাগরিকের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিয়েছে।
কাজেই যেকোনো নির্বাচনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের অংশগ্রহণ, ভোটাধিকার প্রয়োগ তথা নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি হওয়ার প্রত্যাশায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার একটি সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার।
অথচ সংবিধানের ৬৬ (১) অনুচ্ছেদে এবং অন্যান্য সব বিদ্যমান নির্বাচনী আইনে ২৫ বছরের বয়সের মাপকাঠি আরোপ করে কোটি কোটি তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারদের সাংবিধানিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে।
৫২ বছর আগে আমাদের সংবিধানে ২৫ বছরের যোগ্যতার বিধান যুক্ত করা হয়েছিল। দীর্ঘ ৫২ বছরে দেশের আর্থসামাজিক ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের মাঝে শিক্ষার প্রসার ঘটার কারণে প্রত্যেকের চিন্তা চেতনা এবং রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের কোটি কোটি তরুণ জেগে উঠেছে স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিপ্রায়ে। তারা শিক্ষা দীক্ষায় এগিয়েছে অনেক।
এমন একটি প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে জনপ্রতিনিধি হওয়ার ক্ষেত্রে ২৫ বছরের বয়সভিত্তিক যোগ্যতার মাপকাঠি কোনোভাবেই রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর নয়। রাষ্ট্র পরিচালনায় সুযোগ পেলে আজকের ‘জেনারেশন জি’ আগামীর ‘আলফা জেনারেশন’র বুদ্ধিবৃত্তিক সমন্বয়ে আমাদের জন্য একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণের সক্ষম হবে। কাজেই ২৫ বছরের বাধা পরিবর্তন করে সব প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া আবশ্যক।
এসব বিষয় উল্লেখ করে সব নির্বাচনে ১৮ বছর বয়সের প্রত্যেক ভোটারকে বাংলাদেশের যেকোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দিতে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর অনুরোধ করে আইনি নোটিশটি পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।