মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম: বাংলাদেশে জনমালিকানা ভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে এবং ফ্যাসিজম বা স্বৈরতান্ত্রিক শাসন পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা রোধ করতে কিছু জাতীয়ভিত্তিক সংস্কার এর উদ্যোগ গ্রহন নিঃসন্দেহে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। স্বৈরশাসক হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ইতোমধ্যে বিচার বিভাগ, দুদক, নির্বাচন এবং প্রশাসনসহ সংবিধান সংস্কারে কমিশন গঠন করা হয়েছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিককে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। ড. শাহদীন মালিক বাংলাদেশে সংবিধান বিশেষজ্ঞ হিসেবে অত্যন্ত সুপরিচিত।
নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। এসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার জনমালিকানা ভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায়ও অবদান রাখবে। এর পাশাপাশি করে সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব ও স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বার্তাকে প্রতিফলিত করার জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
০৬টি খাতের সংস্কারে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে সম্প্রতি ০৬টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া কমিশনগুলোর আলোচনা ও পরামর্শসভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছাত্র, শ্রমিক, জনতা আন্দোলনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত রাখা জরুরী। বিচার বিভাগ এবং সংবিধান সংস্কারের কমিশনে সাচিবিক দায়িত্ব পালনের জন্য বিচার বিভাগের সদস্যদেন মনোনীত করা উচিত। পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ আগামী পহেলা অক্টোবর থেকে শুরু তবে এবং এটি পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে কমিশন পারবে কিনা সে বিষয়ে অনেকে ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলছেন।
তবে আমি আশাবাদী।কমিশন আন্তরিক হলে সবই সম্ভব। গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যান । এর মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ০৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই সপ্তাহ না যেতেই দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে নজিরবিহীন বন্যার ধাক্কা সামলাতে হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। এখন মূল আলোচনা সংবিধান সংশোধন ও সংস্কারের বিষয়ে আলোকপাত করি।
সংবিধান হচ্ছে একটি দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার অভিব্যক্তি বা প্রকাশ। রাস্ট্র, সমাজ, রাজনীতি পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে দেখা দেয় নতুন প্রয়োজন ও চাহিদা। তাই কোনো সংবিধানই চূড়ান্ত বা স্থায়ী কিছু নয়। এরও রয়েছে পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংশোধন। এমনকি সম্পূর্ণ সংবিধান বাতিল হয়ে নতুন সংবিধান গৃহীত হতে পারে যেমন টি শুধু ফ্রান্সে হয়েছে। তবে এর নজির খুব বেশি নেই। সংবিধান সংশোধন ও অহরহ ঘটে না। বাংলাদেশের সংবিধান ইতোপূর্বে ১৭ বার সংশোধন করা হয়েছে। উল্লেখিত কারণে সংবিধান সংশোধনের আবশ্যকতা দেখা দিতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক লিখিত সংবিধানে সংশোধনী সংক্রান্ত বিধান লিপিবদ্ধ থাকে। সেটা থাকাই স্বাভাবিক। তাই বলে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে সব দেশে এক ও অভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না। দেশে দেশে তা ভিন্ন হয়। যেমন যুক্তরাজ্যে (গ্রেট ব্রিটেন) সাধারণ আইন তৈরির নিয়মে পার্লামেন্ট সংবিধানের লিখিত অংশের কোথাও সংশোধন বা নতুন কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। অন্যদিকে আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে এ পদ্ধতি কিছুটা জটিল ও “ভারসাম্য নীতি” নির্ভর। সেখানে হয় কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য অথবা অঙ্গরাজ্যসমূহের দুই-তৃতীয়াংশ আইনসভা প্রথমে সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাব আনবে। এরপর বিশেষ কনভেনশনের মাধ্যমে বা অন্য উপায়ে অঙ্গরাজ্যসমূহের আইনসভার তিন-চতুর্থাংশের অনুসমর্থনে সংশোধনী পাস ও কার্যকর হয়। কোনো কোনো দেশে এ জন্য জনমত যাচাই বা রেফারেন্ডামের বিধান আছে।
বাংলাদেশে সংবিধানের সংশোধন পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪২ নং অনুচ্ছেদে সংবিধান সংশোধনের সুনির্দিষ্ট নিয়ম বা পদ্ধতি উল্লেখিত রয়েছে। সে মতে জাতীয় সংসদকেই এর উদ্যোগ নিতে হয়। এরপর যেসব শর্ত বা নিয়ম অনুসরণ হয়, সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হলো—
ক) বিলের সম্পূর্ণ শিরোনাম- সংশোধনীর জন্য আনীত বিলের সম্পূর্ণ শিরোনাম এবং সে শিরোনামে সংবিধানের কোন বিধান সংশোধন করা হবে, তা স্পষ্টরূপে উল্লেখ থাকতে হবে। অন্যথায় বিলটি বিবেচনার জন্য গ্রহণ করা যাবে না।
খ) দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহীত-বিলটি সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহীত হতে হবে।
গ) রাষ্ট্রপতির সম্মতি-উপরিউক্ত উপায়ে কোনো বিল গৃহীত হওয়ার পর সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট তা উপস্থাপিত হবে। উপস্থাপনের সাত দিনের মধ্যে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করবেন এবং কোনো কারণে তিনি তা করতে অসমর্থ হলে উক্ত মেয়াদের অবসানে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করেছেন বলে গণ্য হবে।
ঘ) গণভোটের (Referendum) বিধান-সংবিধানের প্রস্তাবনা অথবা অনুচ্ছেদ ৮ (রাষ্ট্রীয় মূলনীতি), ৪৮ (রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, তাঁর ক্ষমতা ও মর্যাদা) বা অনুচ্ছেদ ৫৬ (প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগদান) সংক্রান্ত কোনো সংশোধনী বিল নিয়ম অনুযায়ী গৃহীত হওয়ার পর সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপনের সাত দিনের মধ্যে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করবেন কি করবেন না, এ প্রশ্নটি গণভোটে প্রেরণের ব্যবস্থা করবেন।
সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতকৃত ভোটার তালিকা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আইনের দ্বারা নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে গণভোট পরিচালনা করবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট উক্ত বিলে সম্মতিদানের পক্ষে পড়লে রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সম্মতিদান করেছেন বলে গণ্য হবে। আর বিপক্ষে পড়লে রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সম্মতিদানে বিরত রয়েছেন বলে স্থির হবে। শেষের ক্ষেত্রে বিলটি আর কার্যকর হবে না। ১৯৭৮ সালে এক আদেশ বলে জেনারেল জিয়াউর রহমান গণভোটের এ নিয়ম করেন, যা পরবর্তীকালে পঞ্চম সংশোধনীর অন্তর্ভুক্ত হয়
বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনের প্রধানত ০৪টি দিক রয়েছে। এর প্রথম তিনটি সংবিধানের সাধারণ কোনো বিষয় সংশোধনীর জন্য অনুসরণ করতে হয়। আর প্রস্তাবনার মতো মৌলিক বিষয় সংশোধনীর জন্য এর সঙ্গে গণভোটের শর্ত পূরণ অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে
সংবিধান সংস্কার রাস্ট্র সংস্কারের যেসব দাবি উঠছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। সেই বিষয়ে কিছুদিন আগে ড. শাহদীন মালিক সংবিধান সংস্কার ইস্যুতে বিবিসি বাংলার সঙ্গে কথা বলেছিলেন । তাঁর সেই অনুষ্ঠানে দেওয়া কিছু ভাষণের অংশ বিশেষ তুলে ধরার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি।
তিনি বলেন, “বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে যা যা দরকার তা বর্তমান সংবিধানেই আছে। বিদ্যমান সংবিধান দিয়েই চাইলেই সংকটের সমাধান সম্ভব। বাংলাদেশের সংবিধানে ১৫৩টি অনুচ্ছেদ আছে। এখন অনেকে সংস্কারের কথা বলে। কিন্তু আমার প্রশ্ন এই সংবিধানের যে ধারাগুলো আছে সেটাতে আসলে অসুবিধা কোথায় সেটা তো জানতে হবে। যারা সংস্কারের কথা বলছে তারা কোনটা সংস্কার চায় সেটা স্পষ্ট করে বলেনি তবে কেন বলেনি তার কোন সদুত্তোর নাই।
সংবিধানে পুনর্লিখন না করে সংশোধন বা রাষ্ট্রের আইনের সংস্কার করে এটি সম্ভব কিনা? অনেকে এমন প্রশ্নে উদাহরণ টানছেন এভাবে যে, ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের সংস্কারের কথা। কেউ কেউ মনে করছেন, ‘জোড়াতালি দিয়ে যদি সংবিধান সংশোধন বা আইনের সংস্কার’ করা হলে স্বৈরতন্ত্র রোধ করা সম্ভব না। তবে এর বিপরীতে ভিন্ন যুক্তিও আছে। যেমন- গত ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে, নতুন দেশ গঠিত হয়নি। তাই সংবিধান পুনর্লিখনের কোন প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করেন না।
আগেই বলেছি বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের ১৭ টি বার সংবিধানে কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় ব্যবস্থা পাল্টে দিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা যেমন প্রবর্তন করা হয়েছিল, অন্যদিকে দু’বার সামরিক শাসনকে বৈধতা দেয়া হয়েছিল।সংবিধান সংশোধন করে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে ঘোষণা করা হয় ১৯৮৮ সালে সামরিক শাসকের ছাতার তলায় ‘নির্বাচিত’ সংসদে । পরে রাজনৈতিক সরকারগুলো বিভিন্ন সংশোধনী আনলেও তারা রাষ্ট্রধর্মের জায়গায় আর হাত দেয়নি।
গণতন্ত্রের জন্য ৯০ এর দশকের শুরুতে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের বিজয়ের পর দেশে আবার সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংসদে সংবিধানের এই সংশোধনী পাস হয়েছিল।নির্বাচনী ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনে রাজনৈতিক সরকারের বদলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। পরবর্তীতে পাল্টা সংশোধনী এনে সেই তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক দ্রুততার সাথে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছে।১৯৭২ সালের ১০ই এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের গণপরিষদের (সংসদ) যাত্রা শুরু হয়েছিল। গণপরিষদে সংবিধান বিল গৃহীত হয়েছিল ৪ নভেম্বর। ১৯৭২ সালেই ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে কার্যকর হয়েছিল সংবিধান।এত অল্প সময়ে আর কোন দেশে সংবিধান প্রণয়নের নজির নেই বলে বলা হয়ে থাকে।
তবে সংবিধানে বার বার সংশোধনী আনার পর অনেক বিষয় নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে।স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদেই সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে চার বার। শুধু একটি সংসদে অর্থ্যাৎ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মেয়াদের সপ্তম সংসদে কোন সংশোধনী আনা হয়নি।স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের জন্য ড: কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণ পরিষদের সদস্য এবং রাজনীতিকদের নিয়ে ৩৪ সদস্যের কমিটি করা হয়েছিল ১৯৭২ সালের ১১ই এপ্রিল। ০৮ মাসের মধ্যেই কমিটি সংবিধানের খসড়া তৈরি করেছিল।
মূল সংবিধানের মৌলিক বিষয়গুলোতে বার বার সংশোংধন যে করা হয়েছে, তা অনাকাঙ্খিত। অন্যতম একজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড: শাহদ্বীন মালিক মনে করেন, বেশিরভাগ সংশোধনী হয়েছে ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি এবং দলের রাজনৈতিক স্বার্থে এবং সেজন্য অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক অধিকার সংকুচিত হয়েছে।
গত ০৫ অগাস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ‘রাষ্ট্র সংস্কারের’ দাবি তুলেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এমন অবস্থায় এই সংস্কার করতে সবার আগে সংবিধান সংশোধনের পরামর্শও দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার বলছেন, এই মুহূর্তে সংবিধান পুনর্লিখন ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব না।
বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধানকে এমন কিছু ক্ষমতা দিয়েছে যার মাধ্যমে ওই পদে বসে যে কেউ ‘স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার’ সুযোগ পায়। এক্ষেত্রে সংবিধান পুনর্লিখনে গণপরিষদ গঠনেরও পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। সংবিধান পুনরায় লেখার জন্য যারা সবচেয়ে বেশি জোরদার দাবি ও যুক্তি তুলে ধরছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ও যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী রিয়াজ। এই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা হলো, দেশকে স্বৈরশাসনমুক্ত করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। জনগণের এই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে হলে সংবিধানের পুনর্লিখন করতে হবে।
যেহেতু দেশে থাকা স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে মাত্র নতুন দেশ হয়নি তাই সংবিধান পুনর্লিখন নয় সংশোধন করেই রাস্ট্র সংস্কার এর পূর্ণতা দিতে হবে। তাছাড়া সংবিধান পুনর্লিখন করতে অনেক সময় প্রয়োজন।
যেহেতু ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ অনুযায়ী পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে এবং সেই সরকার সংবিধান সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে ছাত্র-জনতার সমর্থন রয়েছে। তবে সংবিধান সংস্কার, পুনর্লিখন বা সংশোধন যাই করুক না কেন নিয়মিত পার্লামেন্ট ব্যতীত কিভাবে করা সম্ভব হয় সংবিধান অনুযায়ী সেখানে গুরুতর আইনগত প্রশ্ন জড়িত রয়েছে। পরবর্তীতে নির্বাচনের মাধ্যমে দলীয় সরকার আসলে পার্লামেন্টে যথানিয়মে সংবিধানে বর্ণিত উপায়ে সংবিধান সংশোধন করে রাস্ট্রের সংস্কার কাজ সমাপ্তি করতে হবে। তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে দলীয় সরকার যেই ক্ষমতায় এসেছে ইতোপূর্বে তারা নিজের দলের আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে চেয়েছে। জনকল্যাণে সংবিধান সংশোধন তো করেইনি বরং সংবিধান সংস্কার ও সংশোধন নিয়ে জনগণের সাথে তামাশা করেছে। যার ফলাফল হয়েছে অত্যন্ত ভয়ানক।
লেখক: মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম (পিএউচডি ফেলো) এবং আইন গবেষক ও কলামিস্ট।