অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ছাড়া সুশাসন অসম্ভব

‘অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ছাড়া সুশাসন অসম্ভব’

অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসনে সংস্কার কমিশন গঠন, সংবিধানে সামাজিক মালিকানার স্বীকৃতি ও অর্থব্যবস্থার ৮ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ও আলোচনা সভা করেছে ফোরাম ফর ইকোনোমিক জাস্টিস (ফিজা)।

সম্প্রতি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র সাগর-রুনি হলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা সমাজ গড়ে তোলার প্রথম এবং প্রধান শর্তই হচ্ছে অর্থব্যবস্থার গণতান্ত্রয়ন।

তারা বলেন, প্রচলিত মালিকানাভিত্তিক অর্থব্যবস্থা বহাল রেখে কখনোই বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই সমাজের প্রতিটি স্তরে সম্পদের স্বত্ব বা মালিকানায় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং অংশীজনের মধ্যে ন্যায্য হারে মুনাফার বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। ন্যায়ভিত্তিক মুনাফা’র বণ্টন নিশ্চিত করতে উৎপাদনে শ্রমিকের মালিকানা, লভ্যাংশের অংশীদারত্ব ও প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

বক্তারা আরো বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন পুঁজিবাদ সামাজিক শোষণ ও অনাচারের মূল কারণ, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সমাজতন্ত্র রাষ্ট্রীয় শোষণ ও অনাচারের উৎস এবং সামাজিক ব্যবসা হলো ক্ষয়িষ্ণু ব্যক্তিকেন্দ্রিক পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার নূতন কৌশল। দরিদ্র অসহায় মানুষকে ক্ষুদ্র ঋণ বা সামাজিক ব্যবসা’র ফাঁদে ফেলে পুঁজিবাদ তার শোষনমাত্রাকে প্রশমিত করে টিকে থাকার অপচেষ্টায় আরো আরো সচেষ্ট।

অন্যদিকে বৈশ্বিক পুঁজিবাদ তার টিকে থাকার কৌশল হিসেবে ব্যক্তি মালিকানার শোষনযন্ত্রকে বহাল রাখতে মুসলিম বিশ্বে তথাকথিত ইসলামিক অর্থনীতির আশ্রয় নিয়েছে। ইসলামিক ব্যাংকিং কিংবা ব্যাংক ব্যবস্থার মুসলমানিকরণের নামে এটি ঘৃণ্য সুদপ্রথাকে ভিন্ন নামে প্রলম্বিত করে চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে ফোরাম তাদের ৮দফা অর্থনৈতিক সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরে জানায়, মৌলিক চাহিদাসমূহকে অলাভজনক পণ্য ঘোষনা করতে হবে। অবিলম্বে সকল অংশীগণ মুনাফার অংশীদার’ — এ স্বীকৃতির মাধ্যমে উৎপাদন ও সেবা খাতে সামাজিক মালিকানা’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৮ দফায় ব্রিটিশ বেনিয়া কোম্পানি আইন বাতিল করে অংশীগণের সমন্বয়ে প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবসা ব্যবস্থাপনা’ প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়। এছাড়া সোনাকে মূল ভিত্তি ধরে মুদ্রা ব্যবস্থাপণা ও নির্ধারিত মেয়াদ সম্বলিত মুদ্রার প্রবর্তন করার জন্য দাবি জানানো হয়।

আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নতুন রেজিস্ট্রার

প্রচলিত কর ব্যবস্থাকে নিপীড়নমূলক আখ্যায়িত করে ফোরাম। তারা কর ব্যবস্থার সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে বলে, ৮৭.৫ গ্রাম ২৪ কেরেট সোনার সমপরিমান আয় এবং সম্পদের মালিকানার ভিত্তিতে সমহারে আয়কর ও সম্পদকরের সীমা নির্ধারণ করতে হবে যার দেয় পরিমাণ হবে মোট আয় ও সম্পদের শতকরা ৫ ভাগ। এছাড়াও ঋণের পরিমাণ বাদ দিয়ে সম্পদ মূল্যের বাকি অংশ করের আওতাভুক্ত করার দাবি জানায় ফোরাম যেখানে ঋণ অংশের কর পরিমাণ ঋণদাতা বহন করবেন।

৮ দফায় সুদবিহীন ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ‘টাকার প্রকৃত মূল্য’ অনুযায়ী ঋণের লভ্যাংশ নির্ধারণ এবং মৌলিক চাহিদা পূরণে রাষ্ট্রীয় জামানতে মুনাফাবিহীন ঋণ ব্যবস্থা চালুর আহ্বান জানানো হয়।

সভায় বক্তারা বলেন, স্থায়ী মজুরি কমিশন ও ব্যাংক কমিশন গঠন করে গণতান্ত্রিক অর্থকাঠামো সৃষ্টির মাধ্যমেই শুধুমাত্র টেকসই গণতন্ত্র সম্ভব। তারা বলেন, নতুবা ৭১ -এর মতোই আমাদের স্বাধীনতা একটি নতুন ভূখন্ড পাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। ৩৬ জুলাইয়ে প্রাপ্ত আমাদের নতুন স্বাধীনতাকে আমরা ৭১ কিংবা ৯০ – এর বিজয়ের মতো মলিন করে দিতে চাই না।

কোটা সংস্কার থেকে বৈষম্য নিরসন, বৈষম্য নিরসন থেকে রাষ্ট্র সংস্কার ২০২৪ এর বিজয়কে বিপ্লবে রূপান্তর করতে আমাদেরকে অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতেই হবে।

সংগঠনের আহ্বায়ক ফররুখ খসরু’র সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সদস্য সচিব মোহাম্মদ সেলিম হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক মো: নূর আলম, ড. ফোরকান উদ্দিন আহমেদ, তপন কুমার নাথ, ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার, মুশরিকুল ইসলাম শিমুল, আশরাফুল ইসলাম আশু প্রমূখ।

সংগঠনের যুব সচিব শাহরিয়ার ইসলাম শোভনের সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক গোলাম রহমান, যুব সংগঠক মো: জিল্লুর রহমান, হাবিবুর রহমান, মোসাম্মৎ রিমা, তাপসী রাবেয়া ও অন্যান্য।