দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে জনগণকে সহজভাবে সেবা দেওয়া এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিতে ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
গত ১৮ সেপ্টেম্ববরের এই ১২ দফা নির্দেশনা মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নোটিশ আকারে জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ৩৮টি এবং আপিল বিভাগে ১৯টি শাখা রয়েছে। একজন রেজিস্ট্রার জেনারেল, তিনজন রেজিস্ট্রার, চারজন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার, একজন স্পেশাল অফিসার, ১২ জন ডেপুটি রেজিস্ট্রার, ২০ জন সহকারী রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন কোর্ট ও শাখায় মোট ২ হাজার ৫০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত রয়েছেন।
এদের মধ্য থেকে কর্মরত সহকারী রেজিস্ট্রার হতে তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের কনফারেন্স কক্ষে ১৮ সেপ্টেম্বর ১২ দফা নির্দেশনা দেন প্রধান বিচারপতি।
প্রধান বিচারপতির ১২ দফা নির্দেশনা
• দায়িত্ব পালনে কোড অব কন্ডাক্ট যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
• দায়িত্ব পালনকালে কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন সম্পূর্ণভাবে বর্জন করতে হবে।
• সেবা গ্রহীতাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
• সেবা প্রদানের সময় কোনো বিলম্ব সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য করতে হবে।
• সেবা গ্রহীতাদের কোনো প্রকার হয়রানি করা যাবে না।
• সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সেবা গ্রহীতাদের সঙ্গে সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে।
• প্রতিটি শাখায় প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন সম্পন্ন করতে হবে এবং কোনো কাজ পেন্ডিং রাখা যাবে না।
• প্রত্যেক শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রারদের তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখাসমূহে প্রতিদিন সরেজমিনে মনিটর করতে হবে।
• প্রত্যেক শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রাররা তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখার কার্যক্রম সম্পর্কে স্ব স্ব অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারদের (শেখ মো. আমিনুল ইসলাম, আপিল বিভাগ, মুহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন এবং আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী, হাইকোর্ট বিভাগ) নিয়মিত অবহিত করতে হবে।
• এই মনিটরিং কার্যক্রম ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু।
• প্রতি চার সপ্তাহ পরপর অতিরিক্ত রেজিস্ট্রাররা মনিটরিং কার্যক্রমের প্রতিক্রিয়া ও ফলাফল আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের নিকট রিপোর্ট করবেন।
• যদি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী আচরণবিধি এবং উপরিউল্লিখিত নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো সেবা গ্রহীতাকে হয়রানি করেন বা আর্থিক লেনদেন করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কয়েকটি বিষয় অনুসরণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে- প্রধান বিচারপতি এই ১২ দফা নির্দেশনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকতে হবে। বিচারপ্রার্থী জনগণের সেবা পাওয়ার অধিকার বিষয়ে সচেতন থাকবেন। সেবার বিনিময়ে কোনো লেনদেন বা আর্থিক সুবিধা গ্রহণ হতে বিরত থাকবেন।
প্রত্যেক শাখার সম্মুখে প্রকাশ্য স্থানে সেবা গ্রহীতাদের অধিকার সংক্রান্ত সিটিজেন চার্টার প্রদর্শনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট সহকারী রেজিস্ট্রাররা গ্রহণ করবেন। প্রত্যেক শাখার সামনে অভিযোগ বা পরামর্শ বক্স স্থাপন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সহকারী রেজিস্ট্রাররা তাদের অধীন প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামফলক বা অফিস পরিচয়পত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) স্থাপন ও প্রদর্শনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, যেন সেবাগ্রহীতারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শনাক্ত করতে পারেন।
এ সংক্রান্তে সেবা গ্রহীতাদের কোনো অভিযোগ, পরামর্শ দেওয়ার করার লক্ষ্যে একটি হেল্পলাইন চালু থাকবে। (০১৩১৬-১৫৪২১৬) এ নাম্বারটির তথ্য শাখার প্রকাশ্য স্থানে প্রদর্শন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শাখার সুপারিনটেনডেন্টদের নির্দেশনা দেওয়া হলো।