আইন পেশায় সফল হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই উল্লেখ করে আইনপেশায় সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে একাগ্র নিষ্ঠা, সততা, ধৈর্য ও পরিশ্রম প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির আয়োজনে সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এ্যানেক্স ভবন মিলনায়তনে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, একটি ন্যায় ভিত্তিক শোষণহীন সমাজ গঠন এবং সমাজের সর্বস্তরের সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের শাসনের কোনো বিকল্প নেই। আইন পেশায় সফল হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নেই। আইনপেশায় সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে প্রয়োজন একাগ্র নিষ্ঠা, সততা, ধৈর্য ও পরিশ্রম। একজন আইনজীবীর পড়ালেখার কোনো শেষ নেই। আইনের সর্বশেষ সংশোধন সম্পর্কে আপনারা নিজেদের আপডেটেড রাখবেন।
তিনি বলেন, বার ও বেঞ্চ একত্রে বিচার বিভাগ। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় একে অন্যের পরিপূরক, প্রতিপক্ষ নয়। কোর্ট অফিসার হিসেবে আইনজীবীদের প্রথম কর্তব্য ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আদালত ও আইনের বিধিবিধানের ওপর পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আদালতকে সহযোগিতা করা। বিচার বিভাগের সম্মান বজায় রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ডে যেন আমরা জড়িয়ে না যাই, সেদিকে সর্বদা লক্ষ রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: নেতৃত্বের মূল লক্ষ্য ক্ষমতার চর্চা নয়: প্রধান বিচারপতি
জুলাই-আগস্টের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্বরন করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সব শহীদদের মানুষ চিরকাল গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। এসময় তিনি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী অকুতোভয় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের প্রতি। যারা একটি শোষণ মুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে তাজা বুলেটের সামনে নিজেদের বুক পেতে দিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, বরিশাল আদালতে বিভিন্ন পর্যায়ে ৪৭ জন বিচারক মামলা দায়েরের তুলনায় শতভাগ মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। কিছু কিছু আদালতের বিচারক মামলা দায়েরের তুলনায় শতভাগের বেশি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন।
সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, পরিসংখ্যান অনুসারে এ বছর ৮ হাজার ৯২৪টি দেওয়ানী ও ফৌজদারি মামলার বিপরীতে ৮ হাজর ৯শ ৩৬ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। যা প্রমাণ করে যে, জন আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশের পথে আমরা হাঁটছি। শত বাধা সত্ত্বেও আস্থা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বিচারকরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে চলছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারবিভাগকে আমাদের এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যেন বিচার প্রার্থীর সময় ও খরচ উল্লেখযোগ্যহারে কমে এবং আদালত প্রাঙ্গণে তাদের বার বার আসতে না হয়। তবে এ বিষয়টি বিচারকদের একার ওপর নির্ভর করে না। এজন্য আইনজীবীদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণের লক্ষ্যে পৃথক বিচার সচিবালয় গঠনের কথা বলেছি। সেলক্ষ্যে শীঘ্রই আমরা সুপ্রিমকোর্ট হতে আইন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব প্রেরণ করছি।
তিনি আরও বলেন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও গণমানুষের অধিকার রক্ষায় বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতি সব সময় সোচ্চার রয়েছে।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আলহাজ মো. গোলাম কবির বাদল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খান মোহাম্মদ মোর্শেদ।