যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ হুমায়ুন কবিরের রিমান্ড শুনানিতে হট্টগোল করেন বিএনপি সমর্থিত কয়েকজন আইনজীবী। এসময় আদালত তাদের উদ্দেশে বলেছেন, কোর্ট রাগ দেখানোর জায়গা নয়, যতক্ষণ গাউন পরে থাকবেন।
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালত রোববার (৬ অক্টোবর) এ কথা বলেন।
এ দিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন মডেল থানার উপ-পরিদর্শক তন্ময় কুমার বিশ্বাস তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে সহযোগিতা করে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
শুনানিতে তিনি বলেন, এই আসামি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব। অন্যায়-অপকর্মে সাহায্য করায় তাকে নমিনেশন দেওয়া হয়। জোর করে সিল মেরে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৪ বছর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অবস্থান করে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কায়েম করেছেন। বিরোধীদের হত্যা ও গুমে তার ভূমিকা ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় ব্যবহার করে বিরোধীদের হয়রানি করতে ইন্ধন জুগিয়েছেন। গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা চালাতে তার ভূমিকা ছিল। সেখানে যুবদল নেতা শামীম মারা যান।
আবুল কালাম আজাদের পক্ষে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, তিনি একজন সফল সচিব।
এ সময় আইনজীবীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি।
তখন ওমর ফারুক প্রশ্ন রেখে বলেন, তিনি যে সফল সচিব, সেটি কীভাবে প্রমাণ করবেন?
তখন বিচারক বলেন, ভুলে যাবেন না আইনজীবীদের আচরণ আইনজীবীদের মতো হতে হবে। উনি একজন সিনিয়র আইনজীবী।
আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, তিনি বারের সদস্য। এসডিজির সচিব। এসডিজির সচিব আর মুখ্য সচিব কিন্তু এক না, সম্পূর্ণ সেপারেট। বাংলাদেশ, জাপানের বন্ধুত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তিনি ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন প্রজেক্ট বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছেন।
এ সময় বিএনপির আইনজীবীরা বলেন, মামলার মেরিট নিয়ে কথা বলুন।
আরও পড়ুন: সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে লিগ্যাল নোটিশ
বিচারক বলেন, ফ্যাসিবাদ মানে ইনটলারেন্স টু আদার্স। এ রকম হট্টগোল আগে দেখিনি। বড় বড় মামলা করেছি। উনাদের (আসামিপক্ষ) সুযোগ দিতে হবে।
পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ৭০৪ জন আসামির মধ্যে তার নাম নেই। বাদী ভুলেও উচ্চারণ করেননি। একজন সচিব হিসেবে জাপানের মতো দেশে রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে তাকে। তিনি কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী নন, এসডিজির মুখ্য সচিব।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আরও বলেন, তিনি ২০১৮ সালে অবসরে যান। মামলার বিষয়ে জানেন না। এমপি হিসেবে এলাকায় অনেক কাজ করেছেন। এত কাজ করেছেন যে, তার কাছে কিছু চাইতে হয়নি। এলাকাকে আলোকিত করেছেন।
তখন বিরোধীরা বলেন, এত টাকা কোথায় পেলেন? ভোট তো চাইতে হয়নি। ভোট চুরি করেছেন।
তখন বিচারক বলেন, বায়োডাটা না দিয়ে ফ্যাক্ট বলুন।
এরপর তার আইনজীবী বলেন, ২০১৮ সালে অবসরে গেছেন। সম্প্রতি একটা ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়। রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করছি।
এরপর হট্টগোল শুরু হলে আইনজীবীদের উদ্দেশে বিচারক বলেন, আদালতে হট্টগোল করলে নিউজ হয়। আমি সবার বক্তব্য শুনতে এখানে বসেছি। আপনারা হট্টগোল করে বিষয়টা এমন যেন কোর্টকে প্রেশার দিচ্ছেন। প্রেশার নেওয়ার মানুষ আমি না। এ জন্য এতদিন এখানে (ঢাকায়) আসিনি। আগে তো আপনারা এখানে অনেককে (বিচারক) দেখেছেন।
আরও পড়ুন: আয়কর আইন সংস্কারে সাত সদস্যের টাস্কফোর্স
বিচারক বলেন, আর আপনারা যে হট্টগোল করছেন, আপনাদের তো নাম আসছে না। কারণ আদালতের ভেতরে কোনো টেলিভিশন নেই। বাইরে গিয়ে যত বক্তব্য দেওয়ার দেবেন। এমন করলে মানুষ বলবে এটা ক্যাঙারু কোর্ট। কোর্ট রাগ দেখানোর জায়গা নয়, যতক্ষণ গাউন পরে থাকবেন।
এ সময় বিচারক কয়েকজন আইনজীবীকে ডেকে ডেকে চিৎকার, হট্টগোল করতে বারণ করেন।
এরপর আদালত আবুল কালাম আজাদ ও হুমায়ন কবিরের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শুনানিতে থাকাবস্থায় আবুল কালাম আজাদকে অশ্রুসিক্ত দেখা যায়।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী মহাসমাবেশ ডাকে। এই মহাসমাবেশকে পণ্ড করার জন্য একই দিনে আওয়ামী লীগ পাল্টা সমাবেশ ডাকে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা ও গুম করার উদ্দেশ্যে পুলিশের সহায়তায় বিএনপির ঢাকার মহাসমাবেশে হামলা চালানো হয়। এতে অনেক বিএনপির নেতা কর্মী আহত হন। যুবদল নেতা শামীম মারা যান। এ ঘটনায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।