দেশের সর্বোচ্চ আদালতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে প্রথমবারের মতো বিচারপতি হিসেবে একসঙ্গে ৫ নারী আইনজীবী নিয়োগ পেয়েছেন। নারীর ক্ষমতায়নে বিচার বিভাগে এই নিয়োগ মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। এতে নারীরা অনুপ্রেরণা পাবেন এবং আইনপেশায় ক্যারিয়ার গড়তে তারা উদ্ধুদ্ধ হবেন।
নতুন নিয়োগ পাওয়া ৫ নারী বিচারপতি হলেন- বিচারপতি মুবিনা আসাফ, বিচারপতি নাসরিন আক্তার, বিচারপতি আইনুন্নাহার সিদ্দিকা, বিচারপতি তামান্না রহমান ও বিচারপতি সাথিকা হোসেন।
এই নিয়োগের বিষয়ে আইন কমিশনের প্রথম নারী চেয়ারম্যান ও আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি জিনাত আরা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘২৩ জনের মধ্যে ৫ জন নারী, এটা ভালো সংখ্যা। আইন পেশায় নারীরা ভালো করছেন। নারীদের যে অগ্রগতি হয়েছে, এ নিয়োগ থেকে তা বোঝা যায়। ভবিষ্যতে নারীরা আইন পেশায় আরো ভালো করবেন।’
আরও পড়ুন: শপথ নিলেন হাইকোর্টের ২৩ বিচারপতি
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, ‘যে ৫ নারী আইনজীবী বিচারপতি হয়েছেন, তাদের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তাদের কর্মদক্ষতা ও মেধার বলেই তারা বিচারপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেয়েছেন। নিশ্চই তাদের দেখে অন্য নারীরা অনুপ্রাণিত হবেন।’
নতুন পাঁচ নারী বিচারপতির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
মুবিনা আসাফ
মুবিনা আসাফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে আইন-পেশায় যোগদান করেন। ১৯৯৩ সালে জজ কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি আইনপেশার শুরুতে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসে কাজ করেছেন। ১৯৯৬ সালে হাইকোর্টে ও ২০০৯ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন তিনি।
২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিচারপতি মুবিনা আসাফ ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টের প্রধান ছিলেন।
নাসরিন আক্তার
তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করে আইনপেশায় যোগদান করেন। ১৯৯৭ সালে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্য নির্বাহী সদস্য, সিনিয়র সহ-সম্পাদক ও ট্রেজারার হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন নাসরিন আক্তার।
আইনুন নাহার সিদ্দিকা
আইনুন নাহার সিদ্দিকার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায়। বাবা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি জজ কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৪ সালে হাইকোর্ট বিভাগের ও ২০২০ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি দীর্ঘ ২০ বছর বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইনজীবী হিসেবে উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে বিভিন্ন মামলা পরিচালনা করেছেন।
তামান্না রহমান
বিচারপতি তামান্না রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে আইনপেশায় যোগদান করেন। তিনি ১৯৯৫ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০১৫ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলএলএম ল’ ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য।
সাথিকা হোসেন
সাথিকা হোসেন ১৯৯৯ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৩ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ লাভ করেন।