সদ্য প্রকাশিত সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগ নিয়ে চট্টগ্রাম বারে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এরমধ্যে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগের তালিকায় একাধিক আইনজীবীর নাম দুইবার/তিনবার করে এসেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এই নিয়োগ নিয়ে বারের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের কারও কারও অসন্তুষ্টি রয়েছে বলেও জানা গেছে।
ইতোমধ্যে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী উনার নামে প্রকাশিত অতিরিক্ত পিপি হতে ইস্তফা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম থেকে মুঠোফোনে যোগাযোগ হলে, এর কারণ হিসেবে তিনি পিপি নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম এবং যোগ্যদের যথাযথ মূল্যায়ন না করার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির একাধিক সদস্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ পেয়েছেন এমন প্রমাণ মিলেছে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের অনুসন্ধানে।
তারা হলেন- চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সদ্য নিয়োগ পাওয়া সহকারী পাবলিক প্রসিকিটর অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট আরাফাত হোসেন রাবু।
তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আইনজীবী হিসেবে ২০২১ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও সরকারি কৌঁসুলি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাওয়ার জন্য ২০১৮ সালে বার কাউন্সিলে তালিকাভুক্ত হয়েছেন বলে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আইনজীবী সমিতির একাধিক সদস্য ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেন, সাধারণ আইনজীবীদের অনুরোধ হচ্ছে যোগ্যদের যথাযথ মূল্যায়নসহ যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে পিপি নিয়োগ পেয়েছে তাদের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করে পুনরায় পিপির তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম আদালতে ৩৪৬ জন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ
অভিযোগ ওঠা সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত দুই এপিপির বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে উল্লেখিত তথ্য থেকে জানা গেছে, এই দুজনের তালিকাভুক্তির তারিখ ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। তবে সদ্য প্রকাশিত সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগের তালিকায় ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সমিতিতে যোগদানের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের কারও কারও অসন্তুষ্টি
এদিকে তালিকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ভূমিকা রাখা বিএনপি ও জামায়াত–সমর্থিত জ্যেষ্ঠ কয়েকজন আইনজীবীর নাম না থাকায় তাঁরা অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে পিপি পদে নিয়োগ পাওয়া আহমেদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তিনি এ তালিকায় সন্তুষ্ট। তবে যোগ্য প্রার্থী যাঁরা বাদ গেছেন, তাঁদের নাম যুক্ত করে সম্পূরক তালিকা সরকার প্রকাশ করবে বলে আশাবাদী তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে ভূমিকা পালন করা সাবেক মহানগর পিপি ও নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সাত্তারের নাম তালিকায় নেই।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেনের নেতৃত্বে ছিলাম। আমি আন্দোলনে গুরুতর আহত হয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমিই বৈষম্যের শিকার হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, আইন কর্মকর্তাদের তালিকায় এমন কয়েকজন আইনজীবীর নাম এসেছে, যাঁরা আন্দোলন–সংগ্রামে ছিলেন না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গসংগঠন লইয়ার্স কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল আলমের নামও তালিকায় নেই। তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেও আমি বৈষম্যের শিকার। আমার মতো অনেকেই বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।’