৫০৬ কোটি টাকার ঋণখেলাপির মামলায় ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল হাসানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান রোববার (২০ অক্টোবর) এক আদেশে ক্যাপ্টেন সোহেল হাসানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন।
অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রোজাউল করিম বলেন, ব্যাংক এশিয়ার ৫০৬ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মামলায় ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের এমডি ক্যাপ্টেন সোহেল হাসানের বিরুদ্ধে এই দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
শুধু ব্যাংক এশিয়াই নয়, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় দেশের অন্যতম এই জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সম্পদ এর আগে ২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর নিলামে তোলে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখার পক্ষে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এই নিলাম নোটিশ।
রোজাউল করিম বলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে আনুমানিক ২ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মামলা রয়েছে। বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য অত্যন্ত নগণ্য। তারা ইতোমধ্যে পার্লামেন্টে ঘোষিত শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির মধ্যে অন্যতম। খেলাপি ঋণের দায় স্বীকার করলেও দায় পরিশোধে এগিয়ে আসছেন না তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হতো পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডকে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে দফায় দফায় ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানিটি পরিণত হয় দেশের অন্যতম শীর্ষ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানে। এর আগে ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির তালিকা প্রকাশ করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের নাম।
সাবেক অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তখন প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা খেলাপি। ঢাকা ব্যাংক ছাড়াও ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের কাছে তখন ন্যাশনাল ব্যাংকের ৮৯৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও ব্যাংক এশিয়ার ৫০৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: হয়রানিমূলক মামলা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে প্রবেশ করে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। মান সম্পন্ন সমুদ্রগামী জাহাজ রপ্তানির মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যেই আন্তর্জাতিক জাহাজ নির্মাণ শিল্পে ছড়িয়ে পড়ে তাদের সুনাম। নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, কেনিয়া, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারতসহ বিশ্বের ১২টি দেশে ৩৩টি জাহাজ রপ্তানি করেছে তারা।
প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিকের। তবে ২০২০ সালের পর থেকেই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। প্রতিষ্ঠানটির ঘাড়ে জমা হয় বিপুল অঙ্কের ঋণের বোঝা। এছাড়া কোভিড মহামারির ধাক্কাও তীব্রভাবে পড়ে প্রতিষ্ঠানটির ওপর।
অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রোজাউল করিম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা দেশত্যাগের পাঁয়তারা করছেন। বিবাদীগণ দেশত্যাগ করতে পারলে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায় অযোগ্য হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিবাদীগণের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রদানের প্রার্থনা করে ব্যাংক এশিয়া।
তবে আইনজীবী জানান ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় ডাউন পেমেন্টের অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। তবে তারা দেশত্যাগ করবেন না। তারা জাহাজ নির্মাণ খাতের সফল উদ্যোক্তা। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হলে বিবাদীগণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হবে এবং ব্যবসায় বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৫০৫ কোটি ৯০ লাখ ১ হাজার ৯২৪ টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের দাবিতে ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর ঋণ খেলাপির মামলা করে ব্যাংক এশিয়ার আগ্রাবাদ শাখা। পরে ৬ নম্বর বিবাদী লিখিত বর্ণনা দাখিল করেন। বাদী ব্যাংকের সঙ্গে আপস মীমাংসায় নালিশি ঋণ পরিশোধের জন্য বিগত দেড় বছর ধরে সময়ের আবেদন করছেন।
আপস মীমাংসার অংশ হিসেবে ৬নং বিবাদী ৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন। অন্য বিবাদীগণ এখন পর্যন্ত মামলায় হাজির হননি। আপসে দায় নিস্পত্তির জন্য যথেষ্ট সময় প্রদান করা হলেও প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট প্রদান করেননি। আংশিক ডাউন পেমেন্ট প্রদান করে ৬নং বিবাদী নালিশি ঋণের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। কিন্তু দায় পরিশোধে সদিচ্ছা দেখাননি।