মোঃ রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী: পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে সম্প্রতি মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে দেয়া একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তার কাছে নেই। রাষ্ট্রপতির এই বক্তব্যের পর তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র-জনতা।
এরূপ পরিস্তিতে দেশের রাষ্ট্রপতি যদি পদত্যাগ করেন বা অন্য কোনো কারণে যদি রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হয়, তখন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন কীভাবে বা সেটি কোন প্রক্রিয়ায় হবে। সেই প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করছে অনেকেই। দেশের বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী সংসদ রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করতে পারে। কিন্তু জুলাই—আগষ্ট বিপ্লব পরবর্তী রাষ্ট্রপতি সংসদ বাতিল করে দেওয়ায় সংসদ কার্যকর নেই।
সংবিধানের ৪৮ (১) অনুচ্ছেদে বলাহয়েছে, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ—সদস্য কর্তৃক নির্বাচিত হবেন। ৫২ অনুচ্ছেদে সংবিধান লংঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করার সুযোগ আছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে নানা প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে এবং সংসদের কমপক্ষে দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন লাগবে।
৫৩ অনুচ্ছেদে শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে পদ থেকে অপসারণের যে কথা বলা আছে, সেখানেও সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থনের শর্ত আছে। যেহেতু বিগত ৬ আগস্ট ২৪’ মহামান্য রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন এবং বর্তমানে সংসদ যেহেতু কার্যকর নেই, ফলে জাতীয় সংসদে মহামান্য রাষ্ট্রপতির অভিসংশনের কোন সুযোগ নেই।
মহামান্য রাষ্ট্রপতিযদি পদত্যাগ করেন বা অসুস্থাতা বা অন্য কোনো কারণে অনুপস্থিাত থাকেন বা দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হন, তাহলে কী হবে? সেটিও সংবিধানে বলা আছে। রাষ্ট্রপতি চাইলে জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র দাখিল করতে পারেন। নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত বা রাষ্ট্রপতি আবার কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করবেন স্পিকার।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস!
সংবিধানের ৭৪(৬) অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল রয়েছেন বলে গণ্য হবে। কিন্তু বিগত ২ সেপ্টেম্বর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন। স্পিকারের অবর্তমানে দায়িত্ব পালন করতেপারেন ডেপুটি স্পিকার। কিন্তু গত ১৫ অগাস্ট ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু গ্রেপ্তার হয়েছেন।
যেহেতু স্পিকার পদত্যাগ করেছেন এবং ডেপুটি স্পিকার কারাগারে। তাহলে সেটিও সম্ভব নয়।
আমি মনে করি, জুলাই-আগষ্ট ২৪’ ছাত্র জনতার আন্দোলনে পতিত স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিষ্ট সরকারের রেজিম পরবর্তী জন আকাঙ্ক্ষার আলোকে গঠিত বর্তমান সরকারের সবকিছু তো সংবিধান অনুযায়ী করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নিয়ম বা সংবিধানের প্রশ্ন অবান্তর। সুতরাং বিপ্লবের স্পিরিটে আকাঙ্ক্ষার এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সরকারকে দেশ পরিচালনার যে কোন সিদ্বান্ত নিতে হবে।
পরিস্থিাতি বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি যদি পদত্যাগ করেন বা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হয়, তখন জন—আকাঙ্ক্ষা এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি নিয়োগে কোন যোগ্যতার কথা বলা না থাকলেও কিছু অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের ৪৮ (৪) অনুচ্ছেদ, “কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হইবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি (ক) পঁয়ত্রিশ বৎসরের কম বয়স্ক হন; অথবা (খ) সংসদ—সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য না হন; অথবা (গ) কখনও এই সংবিধানের অধীন অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ হইতে অপসারিত হইয়া থাকেন।”
বর্তমান সরকারের আমলে যদি পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করতে হয় তাহলে এই যোগ্যতা— অযোগ্যতা বিবেচনায় রাখতে পারেন।
লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর, মহানগর দায়রা জজ আদালত চট্টগ্রাম।