অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সংবিধানের মূলনীতি ও আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগের দাবিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আজ রোববার (২৭ অক্টোবর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে উক্ত আইনি নোটিশ প্রেরণ করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ মাহমুদুল হাসান।
আইনি নোটিশে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়ের সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, ৫ই অগাস্ট ২০২৪ এ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে এবং নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। সাধারণত গণঅভ্যুথানের পর বিপ্লবী সরকার গঠিত হয় । কিন্তু বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক দলগুলো জাতির সাথে বেইমানি করে বিপ্লবী সরকার গঠন করতে দেয়নি।
ফলশ্রুতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বর্তমান সংবিধানের অধীনে শপথ নিতে হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারমূলক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কখনোই চায়নি বরং পরোক্ষভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নামে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়েছে যারা খুব দ্রুত নির্বাচন দিয়ে তাদের কে ক্ষমতায় এনে দেবে।
আরও পড়ুন: বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠনে আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টের
যার মাধ্যমে বর্তমানের কোন কোন রাজনৈতিক দল নিজেরাই পরবর্তীতে ফ্যাসিস্ট সরকারে রূপান্তরিত হবে এবং বাংলাদেশ কে পুনরায় দূর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করবে। প্রকৃতপক্ষে ২০২৪ এর জুলাই-অগাষ্টে এদেশের ছাত্র জনতা একটি জনকল্যাণমূলক ও দূর্নীতি মুক্ত রাষ্ট্র গঠনের জন্য নিজেদের রক্ত দিয়েছে।
আইনি নোটিশে আরো বলা হয়েছে যে, বর্তমান রাষ্ট্রপতির নামে শপথ লংঘনের অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণই বর্তমান রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চাচ্ছে। কিন্তু নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক জটিলতা দেখা দিয়েছে কারণ বর্তমানে সংসদ নেই এবং সাবেক স্পিকার ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। যদি বর্তমানে বিপ্লবী সরকার থাকতো তাহলে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোন সমস্যা থাকতো না। কিন্তু বর্তমান সরকার বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে শপথ নেওয়ায় কারণে সাংবিধানিক জটিলতা দেখা দিয়েছে।
উক্ত আইনি নোটিশে আরো বলা হয়েছে, বর্তমানে রাষ্ট্রপতি নিয়ে সাংবিধানিক জটিলতায় সরকারের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদেরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করছে । কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেহেতু কোন বিপ্লবী সরকার নয়, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর অসাংবিধানিক পরামর্শ গ্রহণ করে রাষ্ট্রে বিশৃংখলা সৃষ্টি করা যাবে না । এক্ষেত্রে সরকার কে সংবিধানের মূলনীতি ও আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী উক্ত সমস্যা সমাধান করতে হবে ।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সংবিধানের মূলনীতি ও আইনের ব্যাখ্যার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নিয়োগের সমস্যা সমাধান করতে হবে । যেহেতু বর্তমানে সংসদ নেই, তাই রাষ্ট্রপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের কে সংবিধানের মূলনীতি, আইনের ব্যাখ্যা ও “ডকট্রিন অফ নেসেসিটি” (Doctrine of Necessity) নীতি প্রয়োগ করতে হবে যা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেফারেন্স মামলা ১/২০২৪ কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে।
উক্ত আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, বর্তমানে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ সংক্রান্ত আইনি জটিলতায় আমাদের কে সংবিধানের মূলনীতি, আইনের ব্যাখা, ডকট্রিন অফ নেসেসিটি (Doctrine of Necessity) প্রয়োগ করে দুইটি পদ্ধতির যেকোন একটি প্রয়োগ করে উক্ত রাষ্ট্রপতি নিয়োগের সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে । পদ্ধতি দুইটি হলো :
পদ্ধতি -১ :
বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮ এর অধীনে সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রের মুলনীতি অনুসরণ করে সংবিধান ব্যাখা করতে পারে । এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের এটর্ণী জেনারেল সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টের বিভাগের রিট এখতিয়ার সম্পন্ন যেকোন মোশন কোর্টে একটি স্যুমোটো (Suo Moto) রুলের জন্য আবেদন করবেন যেখানে তিনি মহামান্য হাইকোর্টের কাছে সংবিধানের মূলনীতি ব্যাখা করে এবং ডকট্রিন অফ নেসেসিটি (Doctrine of Necessity) অনুসরণ করে সংসদের অবর্তমানে কিভাবে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রার্থনা করবেন । এক্ষেত্রে হাইকোর্ট সংবিধানের মূলনীতি ব্যাখা করে এবং ডকট্রিন অব নেসেসিটি (Doctrine of Necessity) নীতি অনুসরণ করেন রাষ্ট্রপতি নিয়োগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারেন । এক্ষেত্রে হাইকোর্ট নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কমিটি গঠন করে দিতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিতে পারেন । এছাড়া রাষ্ট্রপতির অসুস্থতা বা বিদেশে গমনের কারনে বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়ের সচিব রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এই মর্মে দিক নির্দেশনা দিতে পারেন । এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করবেন ।
পদ্ধতি -২ :
যদি উপরের পদ্ধতি অনুসরণ করতে গিয়ে হাইকোর্ট স্যুমোটো (Suo Moto) রুল দিতে অস্বীকৃতি জানায় সেক্ষেত্রে এই দ্বিতীয় পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে । এক্ষেত্রে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি সার্চ কমিটি গঠন করবে । এই সার্চ কমিটিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৪ সালের জুলাই-আগষ্ট গণঅভ্যুথানে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দল থেকে একজন করে প্রতিনিধি নিবেন । উক্ত সার্চ কমিটি একজন যোগ্য ব্যাক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য বাছাই করবেন । অতঃপর সরকার সার্চ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করবেন । এক্ষেত্রে নতুন রাষ্ট্রপতি তার অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু করার প্রারম্ভেই তিনি নিজে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কাছে সংবিধানের ১০৬ অনুযায়ী আবেদন করবেন ।
এক্ষেত্রে নতুন রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কাছে এই মর্মে রেফারেন্স চাইবেন যে, সংসদের অবর্তমানে জাতীয় স্বার্থে তার নিয়োগ আইন অনুযায়ী বৈধ কিনা ? এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সংবিধানের মূলনীতি, জনস্বার্থ , ডকট্রিন অফ নেসেসিটি (Doctrine of Necessity) অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতির নিয়োগ বৈধ হয়েছে কিনা এই মর্মে সিদ্ধান্ত দিবেন । এক্ষেত্রেও রাষ্ট্রপতির অসুস্থতা বা বিদেশে গমনের কারনে বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়ের সচিব রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এই মর্মে দিক নির্দেশনা দিতে পারেন । উক্ত দুইটি পদ্ধতির যেকোন একটি প্রয়োগ করে বিদ্যমান রাষ্ট্রপতি নিয়োগ সংক্রান্ত সাংবিধানিক জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
আইনি নোটিশে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষেত্রে “প্রধান উপদেষ্টা” ও “উপদেষ্টা” শব্দগুলো ব্যাবহার করা যাবে না । এই শব্দগুলো আমাদের সংবিধানের নেই এবং পৃথিবীর কোথায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষেত্রে ব্যাবহার হয় না । এসব শব্দের পরিবর্তে “প্রধানমন্ত্রী” ও “মন্ত্রী” শব্দগুলো ব্যাবহার করতে হবে । অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হলো স্বাভাবিক সরকারের মতোই একটি সরকার। এই সরকার কে পূর্ববর্তী সরকারের মেয়াদ সম্পন্ন করতে হবে । কারন পূর্ববর্তী সরকারের তৈরি শূন্যতার জন্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে।
নোটিশ পাওয়ার ০৩ (তিন) দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে সংবিধানের মূলনীতি ও আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগের ব্যাপারে ব্যাবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে বলেও আইনি নোটিশে উল্লেখ করা হয়।