মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : ২০ হাজার ইয়াবা টেবলেট পাচারের মামলায় এক রোহিঙ্গা সহ ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড, একইসাথে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৫ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সাইফুল ইলাহী সোমবার (২৮ অক্টোবর) এ রায় প্রদান করেন।
একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মফিজুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
দন্ডিত আসামীরা হলেন- মিয়ানমারের আকিয়াবের গোয়াল্ল্যার ডেইল এলাকার মৃত নুর আলম ও আরেফা খাতুনের পুত্র রোহিঙ্গা জাহেদ হোসেন এবং অপরজন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মহেশখালীয়া পাড়ার আবুল কাসেম ও ফাতেমা খাতুনের পুত্র মোঃ মাহমুদুল হক। রায় ঘোষণার সময় দন্ডিত আসামী জাহেদ হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং অপর আসামী মোঃ মাহমুদুল হক পলাতক রয়েছে।
রাষ্ট্র পক্ষে অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সুলতানুল আলম মামলাটি পরিচালনা করেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
২০২২ সালের ৩ জুন সন্ধ্যা ৬ টার দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টেকনাফ বিশেষ জোনের একটি টিম টেকনাফের নাফ শিশু পার্ক সংলগ্ন রেইনড্রপ রেস্টুরেন্টের পশ্চিমে মেরিন ড্রাইভের পূর্ব পাশে রাস্তার উপর এক অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা জাহেদ হোসেন ও মোঃ মাহমুদুল হককে আটক করে। পরে তাদের স্বীকারোক্তি মতে তাদের কাছ থেকে ২০ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টেকনাফ বিশেষ জোনের উপ পরিদর্শক মোঃ নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে রোহিঙ্গা জাহেদ হোসেন ও মোঃ মাহমুদুল হককে আসামী করে টেকনাফ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ১৩, তারিখ : ০৪/০৬/২০২২ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ৫২৭/২০২২ ইংরেজি (টেকনাফ) এবং এসটি নম্বর : ১৩৯৭/২০২৩ ইংরেজি।
বিচার ও রায়
২০২৩ সালের ৩১ মে কক্সজবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার কাজ শুরু করা হয়। মামলায় ৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে তাদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা, আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে মামলাটি বিচারের জন্য সোমবার দিন ধার্য্য করা হয়।
ধার্য্য দিনে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ সাইফুল ইলাহী আসামী রোহিঙ্গা জাহেদ হোসেন কে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬ (১) সারণির ১০ (গ) ধারায় এবং আসামী মোঃ মাহমুদুল হককে একই আইনের ৩৬ (১) সারণির ১০ (গ)/৪১ ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে ২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, একইসাথে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৫ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।
একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মফিজুর রহমান জানান, মামলাটি চার্জ (অভিযোগ) গঠন করার মাত্র এক বছর ৪ মাস ২৮ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
এ রায় সম্পর্কে রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সুলতানুল আলম বলেন, আদালতে মামলাটি যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ উত্থাপন করে আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ রাষ্ট্র পক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। এ রায় মাদক কারবারী ও অপরাধ কর্মে জড়িতদের কাছে একটা ম্যাসেজ যাবে।