বিচারের নামে অবিচার বন্ধ হোক

বিচারের নামে অবিচার বন্ধ হোক

মোহাম্মদ রাশেদ: ধরুন, কেউ একজন আপনাকে গালে একটি চড় মারল, আবার আরেকজন আপনাকে রশি দিয়ে বেঁধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মারল। এই মারধরের কারণে আপনি ২০ দিন বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি। আপনি কি মনে করেন এই দুটি অপরাধ একই রকম? আমি জানি, আপনার উত্তর হবে না। কিন্তু আদালতে এই দুটি অপরাধ সমান বিবেচিত হয়।

পুলিশ এই দুই মামলায় দণ্ডবিধির ৩২৩ ধারায় রিপোর্ট করবে, যার শাস্তি এক বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। আর এটি চেয়ারম্যান সাহেবের দ্বারা বিচার্য হবে। তাহলে কি ব্রিটিশরা এতটাই অদক্ষ ছিল যে এমন একটি অবান্তর আইন আমাদের জন্য তৈরি করেছে? উত্তর হবে না, আসলে ব্রিটিশরা এমন কোনো আইন তৈরি করেনি। আমরা, আইনজীবী এবং বিচারকরা, নিজেদের মতো করে আইনকে ব্যাখ্যা করেছি।

দণ্ডবিধির ৩২৩, ৩২৪, ৩২৫, ৩২৬ এবং ৩২৬(ক) ধারায় কোথাও বলা নেই যে, ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে ৩২৩ বা ৩২৫ ধারায় শাস্তি হবে, আর ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে ৩২৪ বা ৩২৬ ধারায় অপরাধ হবে।

আরও পড়ুনযেখানে পরিবারের সদস্য আইনজীবী সেখানে বিচারককে বদলি নয়

এখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, যদি কেউ কাউকে আঘাত করে, সেটি একটি অপরাধ হবে। আর যদি আঘাতটি এমন কোনো যন্ত্র, বন্দুক বা এমন কিছু দিয়ে করা হয় যা দিয়ে মানুষ হত্যা করা সম্ভব, তবে সেটিকে ভয়ংকর অস্ত্রের সাহায্যে আঘাত হিসেবে বিবেচনা করা হবে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, এমন কোনো বস্তু যা দিয়ে আঘাত করে মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত করা যায়, সেই ধরনের কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করা হলে তা ৩২৪ বা ৩২৬ ধারার অপরাধ হবে।

“ডেডলি ওয়েপন” এবং “ডেঞ্জারাস ওয়েপন”-এর মধ্যে পার্থক্য আছে। ডেডলি ওয়েপন মানুষের হত্যা করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়, আর ডেঞ্জারাস ওয়েপন মানুষের ব্যবহারের উপর নির্ভর করে। একটি লাঠি, ইটের টুকরা, লোহার রড—এসব কিছুই ডেঞ্জারাস ওয়েপন হতে পারে, যা মানুষের ব্যবহারের উপর নির্ভর করে।

সুতরাং, পুলিশ যদি সাধারণ আঘাত বা ভোঁতা অস্ত্রের আঘাত উল্লেখ করে, তবে এটি ৩২৩ ধারার অপরাধ হবে না। মূলত, আঘাতে যদি কোনো প্রকার যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, তবে সেটি অবশ্যই ৩২৪ বা ৩২৬ ধারার অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। আর যদি আঘাতের সময় কোনো ধরণের যন্ত্র ব্যবহার করা না হয়, তবে সেটি ৩২৩ বা ৩২৫ ধারার অপরাধ হতে পারে।

লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।