রিমান্ড শুনানিতে আদালতকে যা বললেন তাপস-শমী কায়সার

রিমান্ড শুনানিতে আদালতকে যা বললেন তাপস-শমী কায়সার

রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় সংগীতভিত্তিক টিভি চ্যানেল গান বাংলার চেয়ারম্যান কৌশিক হোসেন তাপস এবং ই-কর্মাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাবেক সভাপতি অভিনেত্রী শমী কায়সারের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ বুধবার (৬ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে আদালতের এজলাসে তোলা হয় তাপস ও শমী কায়সারকে। কিছুক্ষণ পর ওই আদালতের বিচারক ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামান এজলাসে উঠলে তাদের রিমান্ড শুনানি শুরু হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। অপরদিকে আসামিপক্ষে জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। শুনানির পর বিচারক আসামিদের বক্তব্য শুনতে চান।

প্রথমে তাপস আদালতকে জানান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং আন্দোলনকে সমর্থন করে ফেসবুক প্রোফাইল পিকচারও লাল করেছিলেন।

এরপর বিচারক তাকে প্রশ্ন করেন— তাহলে পালিয়েছেন কেন? জবাবে তাপস বলেন, আমি কোথাও পালাইনি। ৫ আগস্টের পর থেকে নিয়মিত অফিস করেছি। আমার লোকেশন ট্র্যাক করলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন: গান বাংলার চেয়ারম্যান তাপস গ্রেপ্তার

আসামি শমী কায়সারও আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ১৮ জুলাইয়ের যেদিনের ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেদিন আমি ই-ক্যাবের মিটিংয়ে ছিলাম। সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ায় তা যেন দ্রুত চালু করা হয় সে বিষয়ে আমরা সরকারকে অবহিত করি। আন্দোলনে এত মানুষের মৃত্যু আমি মেনে নিতে পারিনি। আমি আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম।

বিচারক তাদের প্রত্যেককে তিনদিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। যৌক্তিক গ্রাউন্ড না থাকায় শমী কায়সার ডিভিশন পাবেন না বলে আদেশ দেন আদালত। তবে দুই আসামির চিকিৎসার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন বিচারক।

এর আগে রোববার মধ্যরাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে তাপসকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ। পরদিন সোমবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। ওইদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপস্থিত না থাকায় আদালত শুনানির জন্য আজ বুধবার দিন ধার্য করেন। একই সঙ্গে তাপসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আরও পড়ুন: অভিনেত্রী শমী কায়সার গ্রেপ্তার

এদিকে ৫ নভেম্বর দিবাগত রাতে শমী কায়সারকে রাজধানীর উত্তরা ৪নং সেক্টরের ৬নং রোডের ৫৩ নং বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন।

এ ছাড়া, ২০২৪-এর নির্বাচনে ফেনী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থন চেয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তবে মনোনয়ন পাননি তিনি। অভিনয় থেকে বিরতি নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন তিনি ই-ক্যাবের সভাপতি ছিলেন।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ১৪ আগস্ট ই-ক্যাবের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন শমী কায়সার।

জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই ইশতিয়াক মাহমুদ নামে এক ব্যবসায়ীসহ অন্যান্যরা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। উত্তরা পূর্ব থানার ৪নং সেক্টরের আজমপুর নওয়াব হাবিবুল্লাহ হাই স্কুলের সামনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ হামলা চালায় এবং গুলিবর্ষণ করে। এ সময় ইশতিয়াকের পেটে গুলি লাগে। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।

এ ঘটনায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর ইশতিয়াক মাহমুদ বাদী হয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ১২৬ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় কৌশিক হোসেন তাপস ৯ নম্বর ও শমী কায়সার ২৪ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি।