পঞ্চগড়ে আদালতের এজলাসে বসা বিচারককে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপের দায়ে মিনারা বেগম (২৬) নামের এক নারীকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
পঞ্চগড়ের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুজ্জামান গত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) এ রায় দেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের (সদর) জিআরও কাবুল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত মিনারা পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতেমেরা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
রায় ঘোষণার সময় ওই নারীর পাঁচ বছর বয়সী এক ছেলে তাঁর সঙ্গেই ছিল। বিকেল পাঁচটার দিকে আইনজীবীদের মাধ্যমে শিশুটিকে তাঁর স্বজনদের হাতে তুলে দিয়ে ওই নারীকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: ফ্যানে ঝুলছিল ওড়না, মেঝেতে পড়ে ছিল আইনজীবীর মরদেহ
আদালত সূত্রে ও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া এলাকার ইয়াকুব আলী (৮৩) নামের এক ব্যক্তি স্বজনদের সঙ্গে জমি নিয়ে মারামারির সময় মারা যান।
এ ঘটনায় ওই দিনই ইয়াকুব আলীর মেয়ে মিনারা বেগম ১৯ জনকে আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর গত ১১ ডিসেম্বর সকালে ওই মামলার ১৬ জন আসামি পঞ্চগড় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের একটি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন।
এ সময় বাদী মিনারা বেগম আদালতে উপস্থিত হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে আদালত ১৬ জনের জামিন মঞ্জুর করেন। এ সময় মিনারা উত্তেজিত হয়ে গালিগালাজ শুরু করেন।
একপর্যায়ে কাঠগড়া (বাদীর দাঁড়ানোর নির্ধারিত স্থান) থেকে নামার সময় নিজের জুতা খুলে বিচারকের উদ্দেশে ছুড়ে মারেন। ছুড়ে মারা জুতা আদালতের এজলাসে সামনের সারিতে বসা আইনজীবীদের টেবিলের সামনে গিয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় ওই দিন পঞ্চগড় চিফ জুডিশিয়াল আদালতের অফিস সহায়ক তাজুল ইসলাম বাদী হয়ে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত এবং আদালতের প্রতি চরম অসম্মান প্রদর্শনের অভিযোগে মিনারার নামে একটি মামলা করেন।
মামলাটি দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর বৃহস্পতিবার এ রায় দেন আদালত।
মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী হাবিবুল ইসলাম বলেন, ‘রায় ঘোষণার পর আমরা আদালতে আপিল শর্তে জামিন আবেদন করেছি। কিন্তু আদালত সেটি নামঞ্জুর করেছেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী আরও জানান, ‘রায় ঘোষণার সময় ওই নারীর পাঁচ বছর বয়সী ছেলেটি তাঁর কাছ থেকে অন্য কারও কাছে যেতে না চাওয়ায় তাঁর সঙ্গেই ছিল। তবে ওই নারীকে কারাগারে নেওয়ার সময় শিশুটিকে তাঁর স্বজনদের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে।’