মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : ‘১৪ নভেম্বর’ দেশের বিচার বিভাগের জন্য এক বেদনাময় দিন। এক কালো অধ্যায়। কারণ ১৯ বছর আগে ২০০৫ সালের এদিনে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনকালে জঙ্গিরা বোমা মেরে নবীন ও মেধাবী বিচারক শহীদ সোহেল আহমেদ ও বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে-কে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো। বিচারকদ্বয়ের এ আত্মত্যাগ জাতি শ্রদ্ধাভরে চিরদিন স্মরণ করবে।
ঝালকাঠির দুই বিচারক হত্যার ১৯ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে কক্সবাজার বিচার বিভাগ আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ এসব কথা বলেন।
কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে অন্যানদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সাইফুল ইলাহী, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক রহমত আলী, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক মোঃ মোশারফ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক নিশাত সুলতানা, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মোঃ আমিরুল হায়দার চৌধুরী, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আবুল মনসুর সিদ্দিকী, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহম্মদ খোন্দকার, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাবেদ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গাঁ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মোঃ আসিফ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা সাত্তার, সিনিয়র সহকারী জজ সুশান্ত প্রসাদ চাকমা, সিনিয়র সহকারী জজ মৈত্রী ভট্টাচার্য, সিনিয়র সহকারী জজ ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার সাজ্জাতুন নেছা লিপি, সিনিয়র সহকারী জজ সায়মা আফরিন হীমা, সিনিয়র সহকারী জজ আবদুল মাজেদ, সিনিয়র সহকারী জজ মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, সহকারী জজ মো: রুহুল আমিন, সহকারী জজ ওমর ফারুক প্রমুখ।
আরও পড়ুন: মা নেই, কারাগারে বাবা : শিশুদের দেখভাল করতে যে নির্দেশ দিলেন হাইকোর্ট
অনুষ্ঠানে বক্তারা বিচার বিভাগের মেধাবী ২ কর্মকর্তাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, জঙ্গি গোষ্ঠী নৃশংসভাবে বিচারক হত্যা করে স্বাধীন বাংলাদেশে বিচার বিভাগের অব্যাহত অগ্রযাত্রাকে রোধ করতে চেয়েছিলো। যা কখনো সম্ভব নয়। বক্তারা বলেন, এ কলংকময় ঘটনা ভবিষ্যতে আর যাতে না ঘটে, সেজন্য বিচারকদের সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে কাজ করা দরকার। বক্তারা বিচারকদের আরো অধিকতর নিরাপত্তা সুবিধার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
আলোচনা সভা শেষে দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন, জজ কোর্ট ভবন মসজিদের ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আয়ুব আলী।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে সরকারি বাসা থেকে কর্মস্থলে যাবার পথে বিচারকদের বহনকারী মাইক্রোবাসে নৃশংস বোমা হামলা চালায় জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সিনিয়র সহকারী জজ শহীদ সোহেল আহম্মেদ এবং বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান সিনিয়র সহকারী জজ জগন্নাথ পাঁড়ে।
এ সময় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি বিধ্বস্ত হয়। আহত অবস্থায় ধরা পড়ে হামলাকারী জেএমবি সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য ইফতেখার হাসান আল মামুন। এরপর জেএমবি’র শীর্ষ নেতারা আটক হয়।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রেজা তারিক আহমেদ ২০০৬ সালের ২৯ মে এ ঘৃণ্য ও বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের মামলার সাতজন আসামীকে ফাঁসির আদেশ দেন। উচ্চ আদালতে সে রায় বহাল রাখার পর দেশের বিভিন্ন জেলখানায় ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ ৬ শীর্ষ জঙ্গির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
এরা হলেন-জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, সামরিক শাখাপ্রধান আতাউর রহমান সানি, উত্তরাঞ্চলীয় সমন্বয়কারী আবদুল আউয়াল, দক্ষিণাঞ্চলীয় সমন্বয়কারী খালেদ সাইফুল্লা ও বোমা হামলাকারী ইফতেখার হাসান আল মামুন।
২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর আরেক জঙ্গি আসাদুল ইসলাম আরিফের ফাঁসি কার্যকর করা হয় খুলনা কারাগারে।