সব আদালতে ‘প্রসিকিউশন কার্যালয়’ চায় মাদক অধিদপ্তর

সব আদালতে ‘প্রসিকিউশন কার্যালয়’ চায় মাদক অধিদপ্তর

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সংস্কারে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রস্তাব করেছে খোদ সংস্থাটি। মাদক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে সাজার হার বাড়াতে সব আদালতে ‘প্রসিকিউশন কার্যালয়’ স্থাপন করতে চায় অধিদপ্তর।

এ লক্ষ্যে বিশেষ আইনজীবী নিয়োগ অথবা অধিদপ্তরের আইনজীবীকে পাবলিক প্রসিকিউটরের ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। এ ছাড়া মাদকবিরোধী অভিযানে অস্ত্র ব্যবহারের দীর্ঘদিনের দাবি, ডিজিটাল ফরেনসিক পরীক্ষাগার, অর্থ পাচার রোধ ইউনিটসহ নতুন কার্যক্রম গ্রহণ এবং জনবল ও লজিস্টিকস বাড়িয়ে কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে সরকারের কাছে এক ডজন প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

জানা গেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সংস্কারের চিন্তাভাবনা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ সেপ্টেম্বর সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সময়াবদ্ধ সংস্কারের পরিকল্পনা চেয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তাদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ১২টি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সময় প্রস্তাব করে। বেশিরভাগ পরিকল্পনা এক বছর মেয়াদি হলেও জনবল ও লজিস্কটিকস বাড়াতে তিন বছর মেয়াদি পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে সংস্থাটি।

প্রস্তাবগুলো থেকে জানা যায়, মাদক মামলার গতি ধীর। তাই এগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তিতে সহায়তার জন্য প্রতিটি জেলার আদালতে প্রসিকিউশন কার্যালয় স্থাপনে সিএমএমসহ সব আদালতে নির্দিষ্ট কক্ষ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তার মাধ্যমে মাদক সংশ্লিষ্ট মামলায় সাজার হার দ্রুত বাড়বে। একই সঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ৪৯২ (১) ধারা অনুযায়ী বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ অথবা অধিদপ্তরের প্রসিকিউটরকে পাবলিক প্রসিকিউটরের ক্ষমতা দেওয়ার দাবি করা হয়েছে।

আরও পড়ুনট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে সাবেক ১৩ মন্ত্রী-উপদেষ্টা-বিচারপতি-সচিবকে

এতে আরও বলা হয়, মাদকের গডফাদার বা পৃষ্ঠপোষকদের অর্থ পাচার মামলার আওতায় আনতে মানিলন্ডারিং ইউনিট গঠন, ডার্কওয়েব, ডিপওয়েব এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহারের মাধ্যমে মাদকের কেনাবেচা ও প্রসার রোধ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার বন্ধে সাইবার ক্রাইম ইউনিট স্থাপন করতে চায় সংস্থাটি।

এ ছাড়াও তাৎক্ষণিক মাদক শনাক্ত সহজে পোর্টেবল ড্রাগ ডিটেকটিং মেশিন ও স্ক্যানার ব্যবহার বাড়াতে চায় সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। মাদক অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণে সহায়তার জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক পরীক্ষাগার স্থাপন, এবং কঠিন, তরল কিংবা অন্য যে কোনো ধরনের মাদক শনাক্ত করতে বিমানবন্দরগুলোয় ডগ স্কোয়াড প্রচলন করতে চায় সংস্থাটি। এজন্য আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়নের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পরিকল্পনা প্রস্তাবগুলোয় স্থান পেয়েছে।

এ ছাড়া জনসচেতনতা বাড়াতে দেশজুড়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মাদক নিরাময় কেন্দ্রসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাদকবিরোধী সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড স্থাপন, শূন্য পদে নিয়োগ ও দ্রুত পদোন্নতি প্রদান, লজিস্টিকস সাপোর্ট বৃদ্ধি, মাদক অপরাধের গোপন তথ্য সংগ্রহে হটলাইন অথবা কল সেন্টার চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ডের গতি বাড়বে।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সংস্কার প্রস্তাবগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রস্তাবের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এমনকি কিছু কিছু প্রস্তাব নিয়ে এরই মধ্যে বৈঠকও হয়েছে। অধিদপ্তরের দীর্ঘদিনের দাবি মাদকবিরোধী অভিযানের সময় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তার খাতিরে অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন প্রসঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মাসুদ হোসেন বলেন, প্রস্তাবগুলোর সবই নতুন। এগুলো বাস্তবায়ন হলে মাঠপর্যায়ের কাজ গতি পাবে এবং সুবিধা হবে। মাদক চোরাচালানের সঙ্গে অর্থপাচার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এজন্য এ প্রস্তাবটি গুরুত্বপূর্ণ। তেমনি গুরুত্বপূর্ণ বিচারের বিষয়টি। সবার আগে প্রয়োজন মাদক শনাক্তকরণ। এর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফলে ডগ স্কোয়াডও যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।