বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা বিধানে দ্বৈত প্রশাসন ব্যবস্থা বিলুপ্তর সুপারিশ করেছে সেচ্ছাসেবী মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন।
একইসঙ্গে অধস্তন আদালতের সুষ্ঠু তদারকির জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে দ্রুত পৃথক সচিবালয় চালু, মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিল সংশোধন তথা আইন প্রণয়নের এখতিয়ার সচিবালয় থেকে সংসদে স্থানান্তর, বিচারকদের নিয়মিত বদলি, বিচারক নিয়োগে দৃশ্যমান অনুসরণযোগ্য নিয়মকানুন প্রণয়ন, সর্বস্তরে প্রয়োজনের সংখ্যক বিচারক নিয়োগের উদ্যোগসহ আইনশিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষাক্রমকে ঢেলে সাজানোর সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।
বুধবার (২০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ ১৭ বছর’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনা সভায় লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী ৭২-এর সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই বিভাগ কোনও সময়ই সরকারের কাছে থেকে যথাযথ গুরুত্ব পায়নি।
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, বঞ্চনা, নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে বিচার বিভাগকে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে। এতে বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। বিদ্যমান ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থা উপমহাদেশে নেই। বিশ্বে কোথাও আছে বলে জানা যায় না। এটি একটি সমান্তরাল বিচার ব্যবস্থা চালু করেছে। এক দেশে দুই বিচার চলছে। মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিল সংশোধন তথা আইন প্রণয়নের এখতিয়ার সচিবালয় থেকে সংসদে স্থানান্তর করতে হবে।
আরও পড়ুন: দ্রুততম সময়ে বিচার বিভাগীয় সচিবালয় চান বিচারকরা
অধস্তন আদালতের সুষ্ঠু তদারকির স্বার্থে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে অবিলম্বে পৃথক সচিবালয় চালু করাসহ অধস্তন আদালতের বিচারকরা যাতে একটি কর্মস্থলে তিন বছরের মেয়াদ পুরো করতে পারেন সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিচারক হিসেবে যোগদানের পর থেকে প্রতিটি স্তরে ফৌজদারি বিচার কার্যক্রমের পাশাপাশি দেওয়ানি বিচার কার্যক্রমের উপরও দক্ষতা অর্জন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং শহরাঞ্চলে বিশেষ করে প্রেষণে থাকা বিচারকদের যে যেখানেই কর্মরত থাকুন, তিন বছর পরে তাকে নিয়মিতভাবে বদলি করার সুপারিশ করেন শফিকুর রহমান।
মামলাজট নিরসনের উদ্যোগসহ সর্বস্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়োগ দেওয়া বিচার বিভাগের জন্য যথাযথ বরাদ্দ ও উন্নত অবকাঠামো নিশ্চিতের দাবি জানান সংগঠনটির চেয়ারম্যান।
অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, আইন শিক্ষার মান উন্নয়ন, সিলেবাস সংস্কার, আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী দ্বৈত শিক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ করে শিক্ষাপদ্ধতির আধুনিকায়নপূর্বক শিক্ষাক্রমকে ঢেলে সাজানো ও সাক্ষ্য ব্যবস্থাপনা এবং সাক্ষী ব্যবস্থাপনাকে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আধুনিকীকরণ করা অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে।
আলোচনা সভায় আরও ছিলেন- বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ইকতেদার আহমেদ, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ড আ কা ফিরোজ, গণমাধ্যম কমিশনের সদস্য জিমি আমীর, গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বরিশাল) ভিসি ড. আনিসুজ্জামান প্রমুখ।