সোহরাওয়ার্দী আরাফাত খান: ওয়াকফ সম্পত্তি শাসন, সংরক্ষণ, মোতাওয়াল্লী নিয়োগ ও অপসারণ এবং সর্বপরি ওয়াকফ সম্পত্তি সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তান সরকার ১৯৬২ সালে ওয়াকফ অধ্যাদেশ আইন প্রণয়ন করেন। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল ওয়াকফ সম্পত্তি ১৯৬২ সালের ওয়াকফ অধ্যাদেশ আইন মতে নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে।
ওয়াকফ সম্পত্তিতে স্বত্ব বা মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধের ক্ষেত্রে সরাসরি দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা যাবেনা। ওয়াকফ অধ্যাদেশ, ১৯৬২ এর ৫০ ধারা মতে কোন সম্পত্তি ওয়াকফ সম্পত্তি কিনা এই সংক্রান্তে বিরোধ দেখা দিলে সেই সম্পর্কে যে কোন বিরোধ ওয়াকফ প্রশাসক কর্তৃক নিষ্পত্তি হবে।
অপরদিকে ওয়াকফ অধ্যাদেশ, ১৯৬২ এর ১০২ ধারা মতে মোকদ্দমা দায়েরে বাধা প্রদান করা হয়েছে। ওয়াকফ প্রশাসকের এরূপ কোন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যদি কোন পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে ওয়াকফ অধ্যাদেশ, ১৯৬২ এর ৩৫ (১) ধারা মতে ৯০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
তাছাড়া জেলা জজ আদালতের সিদ্ধান্তে কোন পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে ওয়াকফ অধ্যাদেশ, ১৯৬২ এর ৩৫ (৩) ধারার বিধান মতে ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করার বিধান রাখা হয়েছে।
তাই ওয়াকফ সম্পত্তিতে স্বত্ব বা মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধের ক্ষেত্রে সরাসরি দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা যাবেনা। এই ব্যাপরটিকে Coram – non – Judice বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে Mulla’s Muslim Mahomedan বইতে।
অপর দিকে দেওয়ানি কার্যবিধি ১৯০৮ এর ৯ ধারা মতে প্রত্যক্ষ ভাবে বারিত মামলা ব্যতীত সকল ক্ষেত্রে দেওয়ানি আদালত মামলা আমলে নিতে পারেন। যেহেতু ওয়াকফ অধ্যাদেশ, ১৯৬২ এর ৫০ & ১০২ ধারা মতে এই সংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তির এখতিয়ার ওয়াকফ প্রশাসকের এখতিয়ারধীন তাই দেওয়ানি আদালত এই সংক্রান্ত মামলা আমলে নেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন।
আরও পড়ুন: মামলা করতে গিয়ে নিজেই গ্রেপ্তার ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর
এই সংক্রান্তে হাইকোর্ট বিভাগ অভিমত দিয়েছেন যে – “The Waqf Ordinance being a special statute providing special procedure to be followed. The cognizance of the Civil Court is to that extent excluded”. S. Masud Ali Vs. Md. Asmatullah and Other, 32 DLR (AD) (39) (1980)
হাইকোর্ট বিভাগের উক্ত সিদ্ধান্ত এবং ওয়াকফ অধ্যাদেশ, ১৯৬২ এর ৫০ & ১০২ ধারা মতে আমরা সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারি যে ওয়াকফ সম্পত্তিতে স্বত্ব বা মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধের ক্ষেত্রে সরাসরি দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা যাবেনা।
তাই কোন পক্ষ যদি বাদী হয়ে ওয়াকফ সম্পত্তিতে স্বত্ব দাবি করে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করেন তবে বিবাদী পক্ষ আর্জি খারিজের দরখাস্ত দায়ের করতে পারেন।
সেই ক্ষেত্রে আদালত ওয়াকফ অধ্যাদেশ, ১৯৬২ এর ৫০ & ১০২ ধারা এবং দেওয়ানি কার্যবিধি ১৯০৮ এর ৯ ধারা একত্রে প্রয়োগ করে উক্ত আর্জি খারিজের আদেশ প্রদান করতে পারেন।
তাছাড়া কোন পক্ষ যদি ওয়াকফ প্রশাসকের নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করেন তবে সেক্ষেত্রে দেওয়ানি আদালতে মামলা চলতে অসুবিধা নেই।
তবে সম্প্রতি খতিয়ান সংশোধনের জন্য সরকার ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল গঠন করেছে। যেহেতু খতিয়ান সংশোধন স্বত্ব সংক্রান্ত বিরোধের সাথে সরাসরি জড়িত এবং খতিয়ান সংশোধন সরাসরি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালের এখতিয়ারধীন তাই ওয়াকফ সংক্রান্ত বিরোধীয় ভূমি নিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালে সরাসরি মামলা দায়েরের পূর্বে ওয়াকফ প্রশাসকের নিকট হতে অনুমতি গ্রহন করে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করা সবচেয়ে উত্তম। এই ক্ষেত্রে আর্জি খারিজ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম থাকে।
লেখক: ব্যারিষ্টার এট ল’ এবং অ্যাডভোকেট।