সাধারণ মানুষের জন্য বিনা খরচে আইনি সহায়তা নিশ্চিতে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাকে অধিদপ্তরে রূপান্তর করার সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। পাশাপাশি মামলাজট কমাতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে জোর দেওয়া হয়েছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে আজ। স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিচার কার্যক্রম আরও গতিশীল ও কার্যকর করতে ৩২ বিষয়ে সুপারিশ থাকবে প্রতিবেদনে।
একটি ভলিউমে প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বে আট সদস্যের কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের হাতে তুলে দেবেন।
২০০০ সালের আইনগত সহায়তা প্রদান আইন রহিত করে মেডিয়েশনের বিধানসংবলিত ‘আইনগত সহায়তা ও মধ্যস্থতা সেবা প্রদান অধ্যাদেশ’ নামে নতুন আইন করার সুপারিশ করা হয়েছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে।
আইনগত সহায়তা প্রদানের বিষয়ে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচার প্রাপ্তি সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের বা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আইনগত সহায়তা কার্যক্রমের সম্প্রসারণ, এর সক্ষমতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।
এ লক্ষ্যে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার বিদ্যমান সেবাসমূহের পরিধি বৃদ্ধি করে আইনগত সহায়তার পাশাপাশি মীমাংসা ও মধ্যস্থতার মাধ্যমে মামলা এবং বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্র সৃষ্টি করে মেডিয়েশন কার্যক্রম সমগ্র বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের লক্ষ্যে সংস্থাকে একটি অধিদপ্তরে রূপান্তর করতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত অধিদপ্তরের কার্যালয় নিজস্ব ভবনে স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস, জেলা লিগ্যাল এইড অফিস, শ্রম আদালত লিগ্যাল এইড অফিস এবং চৌকি আদালত লিগ্যাল এইড অফিসের জন্য পৃথক ভবন বা সুপ্রশস্ত অফিসকক্ষের ব্যবস্থা করতে হবে।
আরও পড়ুন: পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নে থাকছে না পুলিশ ভেরিফিকেশন
প্রতিটি লিগ্যাল এইড অফিসে পর্যাপ্তসংখ্যক অফিসকক্ষ, ক্লায়েন্ট চেম্বার, মেডিয়েশন চেম্বার স্থাপন করতে হবে। ওই অফিসসমূহে সভাকক্ষ, পাঠাগার, ব্রেস্ট ফিডিং রুমসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কক্ষের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বিষয়ে আরবিট্রেশন, নেগোসিয়েশন, মেডিয়েশন, কমপ্রোমাইজ ইত্যাদি নানাবিধ পদ্ধতি অবলম্বন বিষয়ে বেশ কিছু আইনে বিধান করা সত্ত্বেও এসব পদ্ধতির প্রয়োগ এবং সুফল আশানুরূপ নয়। এ বাস্তবতার আলোকে বেশ কিছু সংস্কার প্রয়োজন বলে কমিশন মনে করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনগত পরামর্শ প্রদান, মীমাংসা বা মধ্যস্থতা কার্যক্রম পরিচালনা, মধ্যস্থতা কৌশল, ক্লায়েন্ট কাউন্সেলিং ইত্যাদি বিষয়ে লিগ্যাল এইড অফিসারকে দেশে বিদেশে ব্যাপকভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ রহিত করে আইনগত সহায়তার পাশাপাশি মেডিয়েশন বা মধ্যস্থতার বিধানসংবলিত একটি সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন করা জরুরি।
মধ্যস্থতাকারীদের ফি পরিশোধের বিধান ও নিয়মাবলিসংবলিত নীতিমালা প্রণয়ন করতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে।
জেলা লিগ্যাল এইড অফিসকে মধ্যস্থতার ‘কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে কাজে লাগানোর সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের জনবলকাঠামো পুনর্বিন্যাস এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
এ ছাড়া লিগ্যাল এইড অফিসের আইনি সেবা এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতেও বলেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। এজন্য জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়াসহ সমাজমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।