সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতি লাগবে কি না, রায় কাল
সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ

২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়োগের রায় পুনর্বহাল

২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নিয়োগবঞ্চিত প্রার্থীদের তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ দিতে নির্দেশ দিয়ে ১৬ বছর আগে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তা পুনর্বহাল করেছেন আপিল বিভাগ।

এই বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত ১ হাজার ১৩৭ জনের পক্ষে করা পৃথক আপিল সর্বসম্মতিতে মঞ্জুর করে এ রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।

২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়া নিয়োগবঞ্চিত ১ হাজার ১৩৭ জনের পক্ষে তিনটি আপিল করা হয়। এই আপিলের ওপর গতকাল বুধবার শুনানি শেষে আপিল বিভাগ আজ রায়ের দিন ধার্য করেন। আজ সকাল ১০টার দিকে রায়ের সিদ্ধান্ত অংশ ঘোষণা করেন আদালত।

ওই বিসিএসে প্রথমবারের মৌখিক পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের অপর এক বেঞ্চের দেওয়া রায় বহাল রেখে ২০১০ সালের ১১ জুলাই আপিল বিভাগ রায় দিয়েছিলেন। এই রায় আজ বাতিল ঘোষণা করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

আদালতে আপিলকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন ও মো. রুহুল কুদ্দুস এবং আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া। রায় ঘোষণার সময় নিয়োগবঞ্চিত প্রায় শতাধিক প্রার্থী আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

রায়ের পর আপিলকারী প্রার্থীদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন বলেন, এ রায়ের ফলে প্রায় ১ হাজার ২০০ জনের মধ্যে যাঁরা যোগদান করতে চাইবেন, তাঁরা ২৭তম ব্যাচে ধারণাগত জ্যেষ্ঠতাসহ নিয়োগ পাবেন।

আইনজীবীর তথ্যমতে, এক-এগারোর সরকারের সময় ২৭তম বিসিএসে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১ হাজার ১৩৭ জন চূড়ান্ত সুপারিশের পর চাকরিতে প্রবেশ করবেন, এ পর্যায়ে ওই সিদ্ধান্ত হয়।

১৭ বছরের আইনি লড়াই

দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়ে হাইকোর্টে মামলা হয়। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ২৭তম বিসিএস পরীক্ষার প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অবৈধ ঘোষণা করেন। এ ক্ষেত্রে ২০৫ জন হাইকোর্টে রিট করেছিলেন।

২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে যোগদান করা ব্যক্তিরা চাকরিতে থাকবেন এবং রিট আবেদনকারীদের জ্যেষ্ঠতা আইন অনুসারে নির্ধারিত হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

পাশাপাশি রিট আবেদনকারীদের তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ দিতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। আপিল বিভাগের আজকের রায়ে হাইকোর্টের ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর দেওয়া রায় পুনর্বহাল করা হয়েছে।

এর আগে ২৭তম বিসিএস পরীক্ষার প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ ঘোষণা করে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে নিয়োগবঞ্চিত ২৫ জন আপিল বিভাগে দুটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন।

আরও পড়ুন: ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বাড়ি নিয়ে হাইকোর্টের রায়

এদিকে হাইকোর্টের দ্বিতীয় রায়ের বিরুদ্ধে সরকার তিনটি লিভ টু আপিল করে। কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে আপিল বিভাগ সরকারের লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে ২০১০ সালের ১১ জুলাই রায় দেন। এই রায়ে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া সঠিক বলা হয়।

আপিল বিভাগের এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ১ হাজার ১৩৭ জনের পক্ষে ১৪০ জন গত বছর পৃথক আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে গত বছরের ৭ নভেম্বর আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

এর ধারাবাহিকতায় পৃথক তিনটি আপিলের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ আজ আপিল মঞ্জুর করে রায় দেন। আজকের রায়ে ২০১০ সালের ১১ জুলাই আপিল বিভাগের দেওয়া রায় বাতিল করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি ২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় ৩ হাজার ৫৬৭ জন উত্তীর্ণ হন। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ওই বছরের ৩০ মে প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পিএসসি ওই বছরের ১ জুলাই প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে। ওই বছরের ২৯ জুলাই দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষায় ৩ হাজার ২২৯ জন উত্তীর্ণ হন। পরে তাঁদের চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।