অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘বিচারকরা জামিনের জন্য সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নন। তাদেরকে মামলার নথির ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে সেই নথির কথায় শেষ নয়। এই ক্ষেত্রে পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিতে হবে। নতুন করে জুরিস ফুটেজ তৈরি করতে হবে। মনে রাখতে হবে কোনোক্রমেই যেন জুলাই বিপ্লবের বিরোধিতাকারী কোনো আসামি আইনের ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে।’
যশোর পিটিআই স্কুল অডিটোরিয়ামে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ বিষয়ক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বার ও বেঞ্চ এক হয়ে ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে এক হয়ে কাজ করতে হবে। ৩৬ জুলাই আন্দোলনের বিরোধিতাকারীরা যেন কোনোভাবেই আইনের ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে বিচারের হাত থেকে রেহাই না পায়, জামিন না পায়-সে ব্যাপারে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। বিগত সরকার দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছিল সেই জায়গা থেকে জাতিকে বের করে আনতে হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মূল স্পিরিটকে ধারণ করতে হবে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গণির সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর (অ্যাটর্নি জেনারেল, আইসিটি) তাজুল ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
আরও পড়ুন: সংস্কার কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে: প্রধান বিচারপতি
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম তার বক্তৃতায় বলেন, ‘বন্দুকের ক্ষমতার জোরে গত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার দেশের বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামো, পুলিশি কাঠামো পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করেছে। তারা দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছিলো। ৩৬ জুলাই আন্দোলনে কীভাবে পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করেছিলো-সেই দৃশ্য বিশ্ববাসী দেখেছে। দেশ আজ একটি যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা যুদ্ধপরিস্থিতির মধ্যেই আছি। ফলে স্বাভাবিকভাবে কোনোকিছু নেয়ার অবস্থায় আমরা নেই। আজ নতুন করে আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছি।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সাংবাদিক মনির হায়দার বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা বুকের রক্ত দিয়ে যে দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছে, সেই দেশে নতুন করে কোনো ফ্যাসিবাদ যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য সকলকে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিগত ফ্যাসিবাদের আমলে পুলিশ যেভাবে অতিরিক্ত বল প্রয়োগের মাধ্যমে গোটা জাতির কাছে গণশত্রুতে পরিণত হয়ে উঠেছিল, সেই জায়গা থেকে ধীরে ধীরে বের হতে হবে। জনবান্ধব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনি বলেন, ‘রাষ্ট্রে ন্যয়-নীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে রাষ্ট্রের ও জনগণের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। পরকালের ভয়ে সবাইকে তটস্থ থাকতে হবে। সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নই।’
কর্মশালায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, অতিরিক্ত আইজিপিসহ (সিআইডি) খুলনা ও বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৬ জেলার পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, জেলা ও দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সকল জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের ঊর্ধ্বতন ৩ শতাধিক কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।