নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ১৭১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে ১০ জন এ দলের শীর্ষ পদে আছেন। কমিটিতে স্থান পেয়েছেন ৭ জন আইনজীবী।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এ কমিটি ঘোষণা করেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে প্র্যাকটিসরত অ্যাডভোকেট শাহিন গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে নিয়োগ পান সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল। ছিলেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী সদস্যও। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগদানের কারণে পদত্যাগ করছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির পদ থেকে।
অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, গত কয়েকদিন যাবত নবগঠিত রাজনৈতিক দল, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তে যোগদানের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিল। ফাইনালি গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এনসিপি’তে যোগদান এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে পদত্যাগ এর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শুক্রবার সরকারি অফিস বন্ধ থাকায় যথাযথভাবে পদত্যাগপত্র জমাদানের সুযোগ হয়নি, আগামীকাল রবিবার পদত্যাগপত্র জমা দিবো ইনশাআল্লাহ।
যুগ্ম সদস্য সচিব পদ পাওয়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হুমায়রা নূর ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক করেন। এরপর ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসএস সম্পন্ন করেন।
পূর্বে কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল না। তবে ছাত্রজীবন থেকে মানবিক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। জেসিআই ঢাকা ইয়াং এবং লেন্ড এ হ্যান্ড (লেট আস কেয়ার ফর ইউ) এর সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও ছিলেন হিউম্যান সেফটি ফাউন্ডেশনের জেনারেল বোর্ডের মেম্বার।
চিকিৎসক দম্পতির সন্তান হুমায়রা নূর ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। তাঁর স্বামীও পেশায় আইনজীবী। হুমায়রার মা চেয়েছিলেন বড় মেয়ে ডাক্তারই হোক, কিন্তু মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইটা করতে হলে যে আইনজীবী হওয়া জরুরি সেটা বুঝতে পেরেই পারিবারিক আর সামাজিক প্রতিকূলতা পেরিয়ে আইনজীবী হবার লড়াই চালিয়ে যান৷
আরও পড়ুন: নিরাপদ পানিকে মৌলিক অধিকার ঘোষণা করে হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়
কোন অসহায় বা নিষ্পেষিত মানুষকে সাহায্য না করে কোনদিন ফিরিয়ে দেন নাই। হুমায়রা মনে করেন, হয়তো তাদের দোয়াতে আল্লাহ সুযোগ করে দিয়েছেন রাজনীতি করে জনমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন যেন করতে পারেন, তাদের দাবী পূরণ করতে পারেন।
হুমায়রা নূর ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, জুলাই আন্দোলনে এই ছাত্র জনতা অন্যায় নিপীড়ন দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে আওয়াজ তুলেছিল তাতে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের আপামর জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল, হাজারো শহীদ আর অগণিত আহতদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বৈরশাসক এর জুলুম থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছি।
এখন সময় এসেছে, লুটপাট, বৈষম্য, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দমনমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূল উতপাটন করে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করার, যেখানে নিশ্চিত করা হবে একটি অধিকার ও মর্যাদাভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, যোগ করেন তিনি।
যুগ্ম সদস্য সচিব পদ পাওয়া সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী জহিরুল ইসলাম মুসা যিনি পটুয়াখালী জেলার মুরাদিয়া গ্রামের সন্তান। যে বাড়িতে জন্মেছেন, তার পাশ দিয়েই বয়ে গেছে লোহালিয়া নদী। এই নদীর সাথে মিশে আছে তাঁর শৈশব, কৈশোর, ভাললাগা, রাগ, দুঃখ, অভিমান, আনন্দ। গ্রামীণ জীবনের সব আনন্দ নিতে নিতে, নদীতে সাঁতার কাটতে কাটতে, গ্রামের কোলায় (মাঠে) ক্রিকেট খেলতে খেলতে, যখন বড় হচ্ছিলেন; তখনই একদিন পড়াশুনার ছুতোয় ঢাকায় আসেন।
হারিকেনের আলোয় পড়াশোনা করা গ্রামের সেই ছেলেটি জন্মস্থানের সমস্ত আবেগ, ভালবাসাকে অগ্রাহ্য করে ২০০৪ সাল থেকে ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। একদা বিতর্ক করতেন। সাংবাদিকতাও করেছেন কিছু কাল। সফর তাঁর নেশা। দেশ-বিদেশে ঘুরতে ভাল লাগে।
ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে তিনি বলেন, আইন-রাষ্ট্র-অধিকার-সমাজ নিয়ে কাজ করার আগ্রহ। জীবিকা নির্বাহে আইনের ওপর নির্ভর করছি। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসাবে কাজ করছি।
আরও পড়ুন: অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের সমালোচনা করা বিচারককে বদলী; বিচার বিভাগে নিন্দার ঝড়
তারুণ্য নির্ভন নতুন রাজনৈতিক দলে যোগদান করার বিষয়ে জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, আলহামদুলিল্লাহ্। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন, আইন ও বিচারাঙ্গনে যথাযথ সংস্কার এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারকে বিনা মূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল উইংয়ের প্রতিনিধি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। এখন দায়িত্ব বেড়েছে, জাতীয় পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ মিলেছে। নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ করে যাব জনতার হাতের ক্ষমতা পৌঁছে দিতে।
দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠকের দায়িত্ব পাওয়া অ্যাডভোকেট মনজিলা সুলতানা ঝুমা পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা সদরের মো. আব্দুল মতিন এবং প্রয়াত জরিনা বেগমের পাঁচ কন্যা সন্তানের মধ্যে তৃতীয়।
তিনি মাটিরাঙ্গা পাইলট হাই স্কুল থেকে ২০০৮ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি এবং খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ থেকে ২০১০ সালে মানবিক বিভাগে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকার স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০১৮ সালে ঢাকা জজ কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন এবং ২০২৩ সালে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা থেকে প্রথম নারী হিসেবে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি জুলাই বিপ্লবে আহত এবং শহীদ ছাত্রদের পরিবারকে আইনগত সহযোগিতা প্রদান করেন।
২০২০ সালে তিনি ফেসবুক-ভিত্তিক বিনামূল্যে প্রাথমিক আইনি সহায়তা প্রদানকারী গ্রুপ ‘Know Your Rights – অধিকার জানো’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমে জনসাধারণকে আইনি পরামর্শ প্রদান করছেন।
শিক্ষাজীবনে তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ছোটবেলা থেকেই সহশিক্ষা কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে অধ্যয়নকালে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে পুরস্কৃত হয়েছেন।
অ্যাডভোকেট মনজিলা সুলতানা ঝুমা ভবিষ্যতে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবহেলিত মানুষের জন্য কাজ করে তাদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য কমানোর এবং জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখার ইচ্ছা পোষণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং তার স্বামী একজন দন্তচিকিৎসক।
এছাড়াও কমিটিতে স্থান পাওয়া বাকী তিনজন আইনজীবী হলেন- যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক পদে অ্যাডভোকেট মো. তারিকুল ইসলাম (যুব), দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠকের পদে আছেন অ্যাডভোকেট সাকিল আহমাদ এবং উত্তরাঞ্চলের সংগঠকের পদে আছেন অ্যাডভোকেট শিরীন আক্তার শেলী।