মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : এক লক্ষ পিচ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধারের মামলায় ৪ রোহিঙ্গা আসামীকে যাবজ্জীবন অর্থাৎ ৩০ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড, একইসাথে প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর করে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ মঙ্গলবার (৪ মার্চ) এ রায় প্রদান করেন। একই আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।
দন্ডিত আসামী হলেন-কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের ছলিমুল্লাহ’র পুত্র রোহিঙ্গা এনায়েত উল্লাহ (২৫), উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের মো: ইয়াছিনের পুত্র রোহিঙ্গা আবদুল হামিদ (২২), উখিয়া বালুখালী পানবাজার রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের রশিদ সালামের পুত্র রোহিঙ্গা করিমুল্লাহ (২৬) এবং উখিয়া থাইংখালী রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের মৃত নুর আহম্মদের পুত্র রোহিঙ্গা মোঃ রশিদুল্লাহ (২৪)। রায় ঘোষণার সময় দন্ডিত আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্র পক্ষে একই আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম এবং আসামীর পক্ষে অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম গুন্দু মামলাটি পরিচালনা করেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী দুপুর ১ টা ৩৫ মিনিটের দিকে কক্সবাজার শহরের খুরুস্কুল ব্রীজের উত্তর পাশে হক সাহেবের ঘাটের কাছে র্যাব-৭ এর একটি টিম অভিযান চালিয়ে একটি কাঠের তৈরি ইঞ্জিন বোট আটক করে।
পরে ইঞ্জিন বোটে থাকা রোহিঙ্গা এনায়েত উল্লাহ, রোহিঙ্গা আবদুল হামিদ, রোহিঙ্গা করিমুল্লাহ এবং রোহিঙ্গা মোঃ রশিদুল্লাহ’র স্বীকারোক্তি মতে তাদের হেফাজত থেকে এক লক্ষ পিচ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় র্যাব-৭ এর কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে আটক রোহিঙ্গা এনায়েত উল্লাহ, রোহিঙ্গা আবদুল হামিদ, রোহিঙ্গা করিমুল্লাহ এবং রোহিঙ্গা মোঃ রশিদুল্লাহকে আসামী করে কক্সবাজার সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
যার কক্সবাজার সদর থানা মামলা নম্বর : ৬১, তারিখ : ১৫/০২/২০১৯ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ১৮১/২০১৯ ইংরেজি (রামু) এবং এসটি মামলা নম্বর : ২২৩৪/২০১৯ ইংরেজি।
বিচার ও রায়
২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার কাজ শুরু হয়। মামলায় ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে তাদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা, আসামীর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে মামলাটি বিচারের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য্য করা হয়।
ধার্য্য দিনে কক্সবাজারের বিজ্ঞ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণির ১০ (গ) আসামী রোহিঙ্গা এনায়েত উল্লাহ, রোহিঙ্গা আবদুল হামিদ, রোহিঙ্গা করিমুল্লাহ এবং রোহিঙ্গা মোঃ রশিদুল্লাহকে দোষী সাব্যস্থ করে যাবজ্জীবন অর্থাৎ ৩০ বছর করে কারাদন্ড, একইসাথে এক লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর করে কারাদন্ড প্রদান করেন।
রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা মূলে দন্ডিত আসামী ৪ জন কে কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী দেলোয়ার হোসাইন জানিয়েছেন।