ধর্ষকের পক্ষে ওকালতি, বৈষম্যবিরোধীদের সাথে সংঘর্ষে চার আইনজীবীসহ আহত ১১

ধর্ষকের পক্ষে ওকালতি, বৈষম্যবিরোধীদের সাথে সংঘর্ষে চার আইনজীবীসহ আহত ১১

জামালপুরে আইনজীবী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে চারজন আইনজীবীসহ উভয়পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন।

আজ সোমবার (১০ মার্চ) দুপুরে জামালপুর জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে এই ঘটনা ঘটে।

শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সম্প্রতি ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জে দুইটি ধর্ষণের বিচারের দাবিতে শহরের দয়াময়ী চত্বরে মানববন্ধন করে ছাত্র-জনতা। মানববন্ধন শেষে ওই ধর্ষণ মামলা দুটির আসামির পক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে যায় তারা। এসময় অভিযুক্ত এক আসামির বয়স কম দেখানোর বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে ছাত্র-জনতার বাকবিতণ্ডা হয়।

জানা গেছে, সোমবার দুপুরে জেলা জজ আদালতে একটি ধর্ষণ মামলায় আইনজীবীরা আসামীর পক্ষে অংশ নিয়ে শুনানি করেন। আসামীকে নির্দোষ দাবি করে ধর্ষণের ঘটনাটি মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন আসামীপক্ষের আইনজীবীরা। ধর্ষকের পক্ষে আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নেওয়ায় আদালত চত্বরে অবস্থান নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার নেতাকর্মীরা।

শুনানি শেষে ওই মামলার আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম তরফদারকে জেরা শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আব্দুল আওয়াল ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা আইনজীবীদের উপর চড়াও হন এবং হামলা করে বলে অভিযোগ করা হয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।

আরও পড়ুনধর্ষণ মামলায় জামিন নিষিদ্ধ: ন্যায়বিচার নাকি বাড়তি ঝুঁকি?

এ সময় অ্যাডভোকেট খলিলুর রহমান (৮০), অ্যাডভোকেট আব্দুল আওয়াল (৫৫), অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক (৪৭), অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম তরফদার (৫৫), আইনজীবীর সহকারী রুকনুজ্জামান (৪০) আহত হন।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দয়াময়ী এলাকার ইমন (২০) ও ইশান (১৫), সদর উপজেলার ইটাইল এলাকার মোয়াজ (১৯), হাসিল বটতলা এলাকার তারেক (২৩), পৌর শহরের মুসলিমাবাদ এলাকার শিশির (১৮), ইসলামপুর উপজেলার হৃদয় (২৩) আহত হন।

আহতদের মধ্যে অ্যাডভোকেট খলিলুর রহমান জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোয়াজ, হৃদয়, তারেককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি মোয়াজ জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। সেসময় তার পায়ে গুলি লাগে।

শিক্ষার্থী ও আইনজীবীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ইমন ও ইশান নামে সহোদর দুই ভাইকে আটক করে তালাবদ্ধ করে রাখেন আইনজীবীরা। পরে পুলিশ তাদের নিরাপদে আদালত থেকে বের করে নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র মাহমুদুল হাসান বিবেক বলেন, “এক প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের মামলায় আসামীপক্ষের আইনজীবীরা ধর্ষণের বিষয়টি মিথ্যা প্রমাণিত করতে জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদে আদালতে অবস্থান নেন। আসামীপক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশে কতিপয় আইনজীবীরা আমাদের উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। আমাদের দাবী যেসব আইনজীবী আমাদের উপর হামলা করেছে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হোক।”

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রিশাদ রেজওয়ান বাবু বলেন, “আদালত চলাকালীন সময়ে কিছু দুষ্কৃতিকারী লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রবেশ করে আইনজীবীদের হুমকি দেয়। তারা এ সময় আইনজীবীদের উপর হামলা চালিয়ে চারজন আইনজীবীকে আহত করে। জেলা আইনজীবী সমিতির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আইনগত পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন, “নিজের বিচার নিজেই করে ফেলার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আইনজীবীদের সঙ্গে ছাত্রদের ঝামেলা হয়েছে। ঝামেলার বিস্তৃতি কতটুকু তা পর্যালোচনা করে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”