টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়ি দখল করে ‘পাগলের আশ্রম’ চালু করার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কারী মারইয়াম মুকাদ্দাসকে (মিষ্টি) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আকুরটাকুর হাউজিং এলাকায় নিজ বাসা থেকে গতকাল রোববার (৯ মার্চ) দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার মারিয়ামের স্বামীর নাম শাহ আলমাস, বাবার নাম মাজাহারুল ইসলাম। তাঁদের গ্রামের বাড়ি বাসাইল উপজেলার যশিহাটী গ্রামে।
এর আগে গতকাল রাতে সাবেক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের স্ত্রী রওশন আরা খান বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি মামলা করেন। এতে আসামি হিসেবে মারইয়াম মুকাদ্দাসের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর সহযোগী অজ্ঞাতনামা আরও আট থেকে নয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারের উল্লেখ করা হয়েছে, ৮ মার্চ বেলা ১১টার দিকে টাঙ্গাইল শহরের আকুরটাকুরপাড়া ছোট কালীবাড়ি সড়কে জোয়াহেরুল ইসলামের পাঁচতলা ভবনের কেঁচিগেটের ছয়টি তালা ভেঙে মারইয়াম মুকাদ্দাস অজ্ঞতনামা আরও আট থেকে নয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ভবনে ঢোকেন। তাঁরা ৫ লাখ টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়ে যান। এ ছাড়া আসবাবপত্র ভাঙচুর করে আনুমানিক ৫০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে অনলাইন ব্যবসায়ীদের জন্য হাইকোর্টের ৯ দফা নির্দেশনা
পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাঁরা ১৭ জন মানসিক ভারসাম্যহীন ছিন্নমূল মানুষকে ভবনের কক্ষে প্রবেশ করিয়ে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে রাখেন। এ ঘটনার খবর পেয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাদী (রওশন আরা খান) বাসায় গিয়ে মারইয়াম মুকাদ্দাসকে ঘটনার বিষয় জিজ্ঞাসা করেন।
এ সময় মারিয়াম ক্ষিপ্ত হয়ে রওশন আরাকে বলেন, এ বাড়িতে বসবাস করতে হলে ১০ কোটি টাকা চাঁদা দিতে হবে। অন্যথায় আগামী সাত দিনের মধ্যে বাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহম্মদ বলেন, গ্রেপ্তার মারিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে তাঁকে আজ সোমবার সকালে আদালতে পাঠানো হবে। মামলার অজ্ঞাতনামা আসামিদের শনাক্তসহ গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, মারইয়াম মুকাদ্দাসের নেতৃত্বে গত ৬ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য প্রয়াত সভাপতি ফজলুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম ও সাবেক পৌর মেয়র জামিলুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি দখল করে বৃদ্ধাশ্রম, পাগলদের আশ্রম, পশু আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার ঘোষণা দেন।
গত শনিবার জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়ি দখল করে ছিন্নমূল মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের ওঠানো হয়। পরে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুহুল আমিন শরিফের নেতৃত্বে ১৭ জন ছিন্নমূল মানুষকে উদ্ধার করে দখল হওয়া বাড়িটি খালি করা হয়।
শনিবার রাত দুইটার দিকে মুচলেকা নিয়ে মারিয়ামকে ছেড়ে দেওয়া হয়। উদ্ধার করা ১৭ জন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সমাজসেবা বিভাগের মাধ্যমে ময়মনসিংহের ধলা ও গাজীপুরের কাশিমপুর আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়।