সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় একাত্তর টিভির সাবেক সাংবাদিক ফারজানা রুপাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত সম্প্রতি এ আদেশ দেন।
আদালতের আদেশ হওয়ায় ফারজানা রুপাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে টাস্কফোর্স।
পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়েছে, সাংবাদিক মেহেরুন রুনির সঙ্গে ফারজানা রুপার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সময় ফারজানা রুপা এটিএন বাংলার সাংবাদিক ছিলেন। সাগর–রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়েও ফারজানা একাধিক প্রতিবেদন করেছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত আগস্টে গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত বছরের ২১ আগস্ট ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন ফারজানা ও তাঁর স্বামী একাত্তর টিভির সাবেক সাংবাদিক শাকিল আহমেদ।
এর আগে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি পশ্চিম রাজাবাজারের যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, সেই বাসার নিরাপত্তা প্রহরী এনামুল ও পলাশ রুদ্র পালকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এ আদেশ দেন ঢাকার সিএমএম আদালত।
সব মিলিয়ে সাগর-রুনি খুনের মামলায় এখন পর্যন্ত মোট আটজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন- রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, আবু সাঈদ, মিন্টু, কামরুল হাসান ওরফে অরুণ, সাগর-রুনির ভাড়া বাসার নিরাপত্তা প্রহরী এনামুল, পলাশ রুদ্র পাল এবং রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান।
আরও পড়ুন : ‘ক্ষমতার সবরকম অপব্যবহার করেছেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ’
তাঁদের মধ্যে প্রথম পাঁচজনই মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র হত্যার ঘটনায় র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে তাঁদের সাগর-রুনি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
বর্তমানে তানভীর, পলাশ রুদ্র জামিনে মুক্ত আছেন। অন্যদিকে মিন্টু এ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেও অন্য মামলায় কারাগারে আছেন।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় এই সাংবাদিক দম্পতি নৃশংসভাবে খুন হন। সাগর মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক ছিলেন। রুনি ছিলেন এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক।
সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে এ মামলা তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত র্যাবকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। তখন থেকে মামলাটির তদন্ত করছিল র্যাব।
গত বছরের ২৩ অক্টোবর এ মামলার তদন্তে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। টাস্কফোর্সকে মামলার তদন্ত ছয় মাসের মধ্যে শেষ করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। গত বছরের ৪ নভেম্বর র্যাবের কাছ থেকে মামলার নথিপত্র বুঝে নিয়েছে পিবিআই।
২০১৭ সালের ১৫ মার্চ র্যাবের পক্ষ থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাগর–রুনির ছেলে মাহিরের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আটজনকে।
র্যাব আরও জানিয়েছিল, তখন ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ডিএনএ নমুনা পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের ফরেনসিক ল্যাবে। ডিএনএ প্রতিবেদনে ঘটনাস্থলে অজ্ঞাত দুই পুরুষের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। তাঁদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
টাস্কফোর্সের প্রধান ও পিবিআইয়ের প্রধান মো. মোস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, খুনের রহস্য উদ্ঘাটন হওয়ার মতো এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে টাস্কফোর্স আদালতের নির্দেশমতো কাজ করছে।