রিফাত বীন হক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে নিম্ন আদালতে অর্থাৎ জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ সব ট্রাইবুনালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬৬টি। এর মধ্যে দেওয়ানী মামলা ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ২০০টি এবং ফৌজদারী মামলা ২১ লাখ ৯২ হাজার ৬৬টি।
এই বিপুল সংখ্যক মামলার চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আদালতের বিজ্ঞ বিচারকগণ। প্রতি বছর পুরাতন পরিসংখ্যানের সাথে গড়ে প্রায় ২ লাখ অনিষ্পন্ন মামলা নতুন করে যুক্ত হচ্ছে।
মামলা দায়েরের তুলনায় নিষ্পত্তি অনেক কম হওয়ায় মামলা বৃদ্ধির এ ঊর্ধ্বগতি। এর একমাত্র কারণ নিম্ন আদালতের তীব্র বিচারক সংকট। বর্তমানে বাংলাদেশে নিম্ন আদালতে কর্মরত বিচারকবৃন্দের সংখ্যা মাত্র ২ হাজার। মামলা জটের এই জাঁতাকলে পিষ্ট বিচারপ্রার্থীরাও।
সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানিয়ে রাখছি যে, সারাদেশের চিকিৎসক সংকট দূর করার জন্য ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ৩৯তম বিশেষ বিসিএস (এমসিকিউ এবং ভাইভা) পরীক্ষার মাধ্যমে প্রায় ৭ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
পরবর্তীতে ২০২০ সালে করোনা মহামারী ভয়াবহ আকার ধারণ করলে পরিস্থিতি সামাল দিতে তৎকালীন সরকার বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ২০২০ সালের নভেম্বরে বিশেষ বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবং ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত এই বিশেষ বিসিএস (এমসিকিউ এবং ভাইভা) পরীক্ষার মাধ্যমে প্রায় ৪ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন : মাগুরার শিশু ধর্ষণ মামলার বিচার শুরু হবে এক সপ্তাহের মধ্যে: আইন উপদেষ্টা
এখন প্রশ্ন হল যদি দেশের চিকিৎসক সংকট দূর করার জন্য বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার আয়োজন করা যায় তাহলে নিম্ন আদালতের বিপুলসংখ্যক মামলাজট ও তীব্র বিচারক সংকট দূর করার জন্য কি একটি বিশেষ বিজেএস পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে না? প্রতি বছর প্রায় ১০০ জনের মত সহকারী জজ নিয়োগ দেয়া হয় যা খুবই অপ্রতুল।
এই অল্প সংখ্যক বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে কোনভবেই নিম্ন আদালতের এত বিপুলসংখ্যক মামলাজট নিরসন করা সম্ভব নয়। তাই একটি বিশেষ বিজেএস (এমসিকিউ এবং ভাইভা) পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে নিম্ন আদালতে আরো অধিক সংখ্যক বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে এই মামলাজট নিরসন করা সম্ভব।
মানুষের ন্যায় বিচার পাওয়ার শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে বিচার বিভাগ। শুধুমাত্র বিচারক সংকটের কারনে যদি সাধারণ মানুষ ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে সেটি খুবই দুঃখজনক, দুর্ভাগ্যজনক এবং একই সাথে হতাশাব্যাঞ্জক।
পরিশেষে, নিম্ন আদালতের বিপুলসংখ্যক মামলাজট এবং তীব্র বিচারক সংকট দূরীকরণে যত দ্রুত সম্ভব একটি বিশেষ বিজেএস (এমসিকিউ এবং ভাইভা) পরীক্ষা গ্রহণ করার বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয় এবং বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয়ের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক : অ্যাডভোকেট, জজ কোর্ট, ঢাকা।