বাংলাদেশ ব্যাংকে স্বতন্ত্র ইসলামিক ডিপার্টমেন্ট ও শরীয়াহ বোর্ড প্রতিষ্ঠায় হাইকোর্টের রুল
হাইকোর্ট এবং বাংলাদেশ ব্যাংক

হাইকোর্টের রুল জারির দিনই ইসলামি ব্যাংকিং রেগুলেশনস অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট চালু করল বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশের শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠায় বিষয়ে হাইকোর্টের রুল জারির দিনই স্বতন্ত্র ইসলামিক ডিপার্টমেন্ট ও শরীয়াহ বোর্ড চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশের শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকে স্বতন্ত্র ইসলামিক ডিপার্টমেন্ট ও শরীয়াহ বোর্ড প্রতিষ্ঠার দাবিতে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ মাহমুদুল হাসান।

জনস্বার্থে দায়েরকৃত এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি বিচারপতি রাজিক আল জলিল এবং বিচারপতি সাথিকা হোসাইনের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করেন।

ওই রুল জারির দিনই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে নতুন চারটি বিভাগ গঠন করা হয়। সেগুলো হচ্ছে—ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৯, পরিদর্শন পরিপালন বিভাগ, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিভাগ এবং ইসলামি ব্যাংকিং রেগুলেশনস অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী বৃহস্পতিবার এক চিঠির মাধ্যমে নতুন চার বিভাগ গঠনের বিষয়টি সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান।

এতে বলা হয়, ব্যাংক পরিদর্শন ও পরিপালনসংক্রান্ত কার্যক্রম আরও গতিশীল; ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের আওতাধীন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও তাদের শাখায় পরিদর্শন পরবর্তী পরিপালনসংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পাদন, ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও ২০১৯ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালায় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে সম্পাদন এবং ইসলামি ব্যাংকিং–সংক্রান্ত প্রবিধি, নীতি প্রণয়নসহ আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড বাস্তবায়নের জন্য নতুন চারটি বিভাগ গঠন করা হয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-১–এর আওতায় সোনালী ও রূপালী ব্যাংক এবং ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-১–এর আওতায় জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক থাকবে।

আরও পড়ুনবাংলাদেশ ব্যাংকে স্বতন্ত্র ইসলামিক ডিপার্টমেন্ট ও শরীয়াহ বোর্ড প্রতিষ্ঠায় হাইকোর্টের রুল

এর আগে বাংলাদেশের আপামর মুসলিম জনগোষ্ঠীর পক্ষে শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকে স্বতন্ত্র ইসলামিক ডিপার্টমেন্ট ও শরীয়াহ বোর্ড প্রতিষ্ঠার দাবিতে হাইকোর্টে দায়ের করা রিট পিটিশনে বলা হয়, বাংলাদেশের দুই ধরনের ব্যাংকিং সিস্টেম চালু আছে, প্রথমত সুদ ভিত্তিক কনভেনশনাল ব্যাংকিং, দ্বিতীয়ত ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং। বাংলাদেশের ইসলাম ধর্মাবলম্বী জনণন তাদের ধর্ম পালনের অংশ হিসেবে শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে লেনদেন করে থাকেন কারণ ইসলাম ধর্মে সুদ খাওয়া হারাম।

এছাড়া বাংলাদেশ সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ধর্মচর্চা করা মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, বাংলাদেশের শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলো সরাসরি সুদের সাথে জড়িত হয়ে যাচ্ছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলো অন্যান্য সুদ ভিত্তিক ব্যাংক থেকে সুদে টাকা ধার নিয়েছে এবং ইসলাম ধর্মের নীতি লংঘন করেছে।

অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান করা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান দায়িত্ব। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক তার আইনি দায়িত্ব পালনে ব্যার্থ হয়েছে।

রিট আবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২, অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান করা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান দায়িত্ব হলেও ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন ইসলামী ডিপার্টমেন্ট নেই।

পাশাপাশি শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর প্রোডাক্টগুলো পর্যালোচনা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব কোন শরীয়াহ বোর্ড নেই । ফলশ্রুতিতে, বাংলাদেশ ব্যাংক তার অধস্তন শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ব্যার্থতার কারণে বাংলাদেশের শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলো সুদ ভিত্তিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত হয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের আপামর মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাথে প্রতারণা করছে।

এ বিষয়ে রিট আবেদনকারী আইনজীবী মাহমুদুল হাসান ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে জানান, ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে স্বতন্ত্র “ইসলামী ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্ট” চালুর দাবিতে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেছিলাম। রিট মামলা শুনানি শেষে মহামান্য হাইকোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে রুল জারি করে। উক্ত মামলার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করে “ইসলামী ব্যাংকিং রেগুলেশন এন্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট” প্রতিষ্ঠা করেছে।