মোঃ আরিফ হোসেন: বাংলাদেশে মোটামুটি অনেকগুলো সেবা ডিজিটাল হয়ে গেলেও তার একমাত্র ব্যতিক্রম বিচার ব্যবস্থা। বিচার ব্যবস্থা ডিজিটাল করার জন্য এ টু আই প্রকল্প চালু হওয়ার কথা থাকলেও সেটাও খুব বেশি দূর আগায়নি। সেই মান্ধাতার আমলের সিস্টেমে চলে আদালতগুলোর সব সিস্টেম, পেমেন্ট সিস্টেমও তার ব্যতিক্রম নয়।
এখনও আদালতগুলোতে প্রিয়েমটরি ক্যাশের সিস্টেম আছে। যেখানে একজন ক্যাশিয়ার থাকবে তার কাছে সব টাকা জমা হবে, সেই টাকা নিয়ে সে রিসিট দিবে, সেই রিসিট আবার আদালতগুলোতে টাকা জমা দেওয়ার প্রমান হিসাবে দাখিল করতে হবে। এইরকম জটিল ব্যবস্থা এখনও দেশের সব আদালতে চলমান।
ক্যাশিয়ার আবার দিন শেষে ৫০০০/১০০০০ টাকার বেশি নিজের কাছে রাখতে পারবে না, তাকে ট্রেজারিতে জমা দিতে হবে। আবার কেউ টাকা তুলতে গেলে ট্রেজারি থেকে টাকা তুলে এনে তাকে দিতে হবে। এতে যেমন আদালতের হিসাব বিভাগে অতিরিক্ত মানুষের প্রয়োজন হয় তেমনি সবকিছু প্রসেস করা, হিসেব রাখাও জটিল ব্যাপার হয়ে যায়, হাজার হাজার কর্মঘন্টার হয় অপচয়।
অথচ, এই জটিল পেমেন্ট সিস্টেমটা একটা সিম্পল কাজ দিয়ে সমাধান করা যায়। আদালতগুলোতে প্রতিদিন অনেক টাকার লেনদেন হয়, সরকারি/বেসরকারি ব্যাংকের একটা বুথ অনায়াসেই একটা আদালতে চলতে পারে। একটা বুথ থাকলেই টাকা পয়সা ব্যাপারগুলো তারা দেখতে পারে। তাতে প্রত্যেক আদালতের নামে আলাদা ব্যাংক একাউন্ট থাকবে এবং সেই একাউন্টে টাকা জমা দিয়ে রিসিটটা শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট আদালতে দাখিল করলে হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন : চেকের মামলা দেওয়ানী মোকদ্দমার মতো সংশোধনী ও প্রাসঙ্গিক আইন
আবার টাকা তোলার সময় সংশ্লিষ্ট আদালতের প্রিসাইডিং অফিসার একটা চেক দিয়ে দিবে,তখন আর এমন জটিল প্রি ক্যাশ ডিপার্টমেন্টের প্রয়োজন হবে না। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এ্যানালগ কোর্ট ফি। কোর্ট ফি এখনও ম্যানুয়ালি আদায় করা হয়। স্ট্যাম্প বা ডাকটিকেটের মাধ্যমে তা আদায় হয়। এভাবে আদায় করার ফলে সেখানে যেমন জালিয়াতির সুযোগ থাকে, তেমনি স্ট্যাম্প ভেন্ডারদের অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সুযোগও তৈরি হয়।
স্ট্যাম্প জালিয়াতি তো একটি কমন বিষয় হয়ে গেছে।আবার জাল স্ট্যাম্প শনাক্ত করার প্রযুক্তিও আদালতগুলোতে নাই। শুধুমাত্র এর কারনেই অনেক অনেক টাকার রাজস্ব থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। ডিজিটালি কোর্ট ফি আদায় করলে সেটা বিচারপ্রার্থী, আইনজীবি, আদালত সবার জন্যই সুখকর হবে। অথচ আদালতের ব্যাংক হিসাবে কোর্ট ফি জমা করে একটা রিসিট আরজির সাথে সংযুক্ত করার নিয়ম চালু করলেই এই বিষয়টা সমাধান হয়ে যায়।
আদালতের পেমেন্ট সিস্টেমে শুধুমাত্র এতটুকু পরিবর্তন করতে পারলেই হাজার হাজার কর্মঘন্টা বেঁচে যাবে, আদালতের কয়েকটা বিভাগের উপর অতিরিক্ত চাপ কমবে, রাজস্ব আদায়ে আসবে গতি।
লেখক : মোঃ আরিফ হোসেন; সহকারী জজ, ঝালকাঠি।