চেকের মামলা দেওয়ানী মোকদ্দমার মতো সংশোধনী ও প্রাসঙ্গিক আইন
অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

বয়নামা দলিল কখন স্বত্বের দলিল হিসেবে পরিগণিত হয়?

সিরাজ প্রামাণিক: বয়নামা বা নিলাম ক্রয়ের দলিলাদিকে ইংরেজীতে Sale Certificate বলে। আদালত কর্তৃক কোন সম্পত্তি নিলামে বিক্রির পর উক্ত নিলাম ক্রেতাকে নিলামকৃত সম্পত্তি হস্তান্তরের প্রমাণ স্বরূপ যে সনদ প্রদান করা হয়ে থাকে সেটায় হচ্ছে বয়নামা। নিলাম ক্রেতাকে সর্বদা সংশ্লিষ্ট আদালত হতে বয়নামা ও দখলনামা সংগ্রহ করে নিতে হয়।

বয়নামা রেজিস্ট্রি করতে হয় না। কেননা সিপিসির আদেশ ২১ বিধি ৯৪ অনুযায়ী তা রেজিস্ট্রি সমতুল্য। এ কারণ ক্রেতাকে উক্ত জমির স্বত্বলাভের প্রমাণ স্বরূপ আর আলাদাভাবে রেজিস্ট্রি অফিসের রেজিস্ট্রি করতে হয় না। তবে উক্ত বয়নামার অনুলিপি বা কপি সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করতে হবে যাতে রেজিস্ট্রার তা সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি বইয়ের সাথে সংযুক্ত করে রাখতে পারেন।

দেওয়ানী আদালত বা রাজস্ব আদালত অথবা কালেক্টর কিংবা অন্য কোন রাজস্ব কর্মকর্তা কর্তৃক প্রকাশ্য নিলামে বিক্রিত সম্পত্তি খরিদের প্রমাণস্বরূপ বয়নামা দিয়ে থাকেন। Bengal Land Revenue Sale Act, 1859 এর ২৮ ধারা অনুযায়ী নিলাম খরিদ্দারের বরাবরে বয়নামা বা Sale Certificate সম্পাদন হয়ে থাকে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই বয়নামা দলিল বা Sale Certificate স্বত্বের বাহক কি-না? যেহেতু বয়নামা দলিল সম্পাদনের সাথে সাথে দখল হস্তান্তর বা দখলদেওয়া হয়ে থাকে না তাই বয়নামা দলিল কে স্বত্বের দলিল বলা যায় না। দখল হস্তান্তর নিলাম খরিদ্দারের বরাবরে প্রদান করা হয় তখনই দখল হস্তান্তর দলিল ও বয়নামা দলিল একত্রে একসাথে একটি স্বত্বের দলিলে পরিণত হয়। একটির অভাবে অন্যটিকে স্বত্বের দলিল বলা যাবে না।

আরও পড়ুনচেকের মামলা দেওয়ানী মোকদ্দমার মতো সংশোধনী ও প্রাসঙ্গিক আইন

সুতরাং আমরা বলতে পারি, বয়নামা দলিল ও দখল হস্তান্তর দলিল (দখল দেওয়ানি) একত্রে স্বত্বের দলিলে রূপান্তর হয়। এই বিষয়ে উচ্চ আদালত বলছে বয়নামা বা Sale Certificate স্বত্ব সৃষ্টি করেনা, তবে স্বত্বের সাক্ষ্য বহন করে। (৭ ডিএলআর ৮০)। বয়নামা দলিলের সাথে নিলাম খরিদ্দার কবুলিয়ত প্রদান করলে তা স্বত্বের দলিলে পরিণত হয়। (৫ ডিএলআর ২৮৫)।

সাধারণত প্রজাদের ভূমি-রাজস্ব বকেয়া পড়লে মালিকরা আদালতে খাজনার নালিশ করে ডিক্রি করতেন। প্রজা ওই ডিক্রিকৃত টাকা জমিদারকে প্রদান না করলে ওই খাজনার ডিক্রি জারি দিয়ে ওই ভূমি নিলাম করা হতো। ওই নিলাম উপরস্থ মালিকসহ সর্বসাধারণের খরিদ করার অধিকার ছিল। যে ব্যক্তি বেশি টাকায় নিলামের ডাক ওঠাতেন তিনি ওই নিলামের খরিদ্দার বলে গণ্য হতেন।

খাজনার ডিক্রি ছাড়া আরো কয়েক প্রকারের নিলাম হয়ে থাকে। যেমন সরকার কর্তৃক ভূমির বকেয়া রাজস্ব উত্তোলনের জন্য কিংবা দেওয়ানি মোকদ্দমার খরচের টাকা আদায়ের জন্য ও রেহানি ঋণের কারণে। যিনি নিলাম খরিদ করতেন তাকে একটি নিদর্শনপত্র বা সার্টিফিকেট দেয়া হতো, তাকে বয়নামা বলা হয়।

এ বয়নামা নিদর্শণপত্রগুলো জেলার কালেক্টরের রেকর্ডরুমে সংরক্ষিত আছে। বয়নার অণুলিপি রেজিস্ট্রি অফিসে সরবরাহ করা থাকলে সংশ্লিষ্ট জেলার রেজিস্ট্রি অফিসেও পাওয়া যেতে পারে।

তবে অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক প্রেরিত মালিকানা সনদ এবং রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৬ ধারা অনুযায়ী বিক্রয় আদেশের কপি রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইনগবেষক। ই-মেইল: seraj.pramanik@gmail.com