বিদ্যুৎ নিয়ে ভোক্তা ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর অভিযোগ নিষ্পত্তিতে সারা দেশে আরও ৯৮টি বিদ্যুৎ আদালত স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ লাঘব ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এসব আদালত স্থাপনের অভিপ্রায় জানিয়েছেন বলে সুপ্রিম কোর্টের চিঠিতে জানানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত ওই চিঠি গত ১৩ মার্চ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। নির্ভরযোগ্য সূত্র গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির জন্য সারা দেশে ২৪টি বিদ্যুৎ আদালত রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস থেকে পদায়িত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা দেশের ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির আওতাধীন এলাকাসমূহের মধ্যে বিদ্যুৎ আইন, ২০১৮ অনুযায়ী সংঘটিত অপরাধের বিচারকাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে যাচ্ছেন।
তবে বাংলাদেশের সব জেলায় এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ আদালত স্থাপিত হয়নি। এর ফলে বিচারপ্রার্থী জনগণ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। একই সঙ্গে তারা প্রতিনিয়ত ন্যায়বিচার প্রপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গত বছর জুলাই পর্যন্ত দেশের ২৪ বিদ্যুৎ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২৮ হাজার ৭২২টি। এর মধ্যে বাবিউবোর আট আদালতে ৭ হাজার ৬৫১, বাপবিবোর দুই আদালতে ৭ হাজার ১০৬, ডিপিডিসির চার আদালতে ২ হাজার ৭১৯, ডেসকোর এক আদালতে ৩৬৫, নেসকোর পাঁচ আদালতে ৯ হাজার ৮৯ এবং ওজোপাডিকোর চার আদালতে ১ হাজার ৭৯২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
আরও পড়ুন : স্বতন্ত্র শিশু আদালত চান সুপ্রিম কোর্ট
এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বিবরণী শাখার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের সিএমএম ও সিজেএম আদালতে বিদ্যুৎ মামলা বিচারাধীন রয়েছে সংখ্যা ১৬ হাজার ৯৬৬টি। এ মামলাগুলোর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩ হাজার ১০৭, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৩৮, রাজশাহী বিভাগে ৯৫২, খুলনা বিভাগে ৫৫৬, বরিশাল বিভাগে ৫৫, সিলেট বিভাগে ১ হাজার ৪৯৭, রংপুর বিভাগে ৭ হাজার ৬২৪ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২ হাজার ২৩৭টি বিদ্যুৎসংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
মামলার পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকলেও নতুন আদালত স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) ড. মো. আতিকুস সামাদ বলেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের জন্য সারা দেশে মাত্র দুটি বিদ্যুৎ আদালত রয়েছে, তা-ও ঢাকায়। এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কেউ অভিযোগ দিতে চাইলে তাকে ঢাকা আসতে হচ্ছে। এর ফলে অনেকের অভিযোগ থাকলেও তারা কিন্তু আর অভিযোগ দিতে আসছেন না। ফলে ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার কিন্তু নিশ্চিত হলো না।
একই রকম উদাহরণ অন্য কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও রয়েছে। এসব কারণে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ লাঘব ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই এ আদালতগুলো স্থাপনের অভিপ্রায় জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি, যোগ করেন তিনি।
আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সুপ্রিম কোর্টের চিঠির তথ্যানুযায়ী, দেশে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির মধ্যে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) বাদে প্রতি জেলায় বাকি পাঁচ কোম্পানির আওতাধীন এলাকাসমূহের জন্য একটি আদালত স্থাপন করতে বলা হয়েছে। নতুন আদালত স্থাপন হলে সেখানে প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অথবা ক্ষেত্রমতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পদায়ন করতে হবে।
প্রস্তাবিত ৯৮ আদালতের মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাবিউবো)-এর জন্য ১৩, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো)-এর জন্য ৫৫, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)-এর জন্য ১১, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)-এর জন্য ১৭ এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)-এর জন্য ২টি বিদ্যুৎ আদালত স্থাপন করতে বলা হয়েছে।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন