অর্থ আত্মসাতের মামলায় কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজিরা দিতে এসে হামলার শিকার হয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. আবু তাহের।
সোমবার (১৭ মার্চ) আদালতে প্রবেশের সময় তাঁর ওপর হামলা চালিয়েছেন একদল আইনজীবী।
মো. আবু তাহের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। অর্থ আত্মসাতের মামলায় উচ্চ আদালতের আগাম জামিন শেষে হাজিরা দিতে এসেছিলেন আবু তাহের। তবে জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক মো. মাহাবুবুর রহমান।
কুমিল্লা আদালত পুলিশের পরিদর্শক সাদেকুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশের পর আবু তাহেরকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে দুপুরে আদালতের এজলাসে প্রবেশের সময় কয়েকজন বিক্ষুব্ধ আইনজীবী তাঁর ওপর হামলা করেছেন বলে তিনি শুনেছেন।
আদালত সূত্র ও আইনজীবীরা জানান, দায়িত্ব পালনকালে প্রায় সোয়া চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তাহের ও হিসাবরক্ষক কাজী সুমনের বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে মামলা করেন আইনজীবী সমিতির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া।
আরও পড়ুন : ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে শরীয়তপুর আদালত চত্বরে অভিযোগ বাক্স স্থাপন
অভিযোগ ছিল, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ কার্যকালে তাঁরা দুজনে মিলে ৪ কোটি ২৪ লাখ ৭২০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ওই মামলায় আবু তাহের উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনে ছিলেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সোমবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসেন তিনি। মাস্ক পরে আদালতের এজলাসে যাওয়ার পথে একদল আইনজীবী তাঁকে দেখে ধাওয়া দেন।
একপর্যায়ে দৌড়ে এজলাসে প্রবেশ করার আগেই তাঁকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারা হয়। পরে তিনি এজলাসে ঢুকে পড়েন। এ সময় ওই আইনজীবীরা তাঁকে সেখানেও মারধরের চেষ্টা করলে বিচারক চলে আসেন। পরে ওই আইনজীবীরা এজলাসের বাইরে অবস্থান নেন। এরই মধ্যে আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাহেরকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
আওয়ামী লীগ নেতা ও আইনজীবী আবু তাহেরকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণের সময় আবারও আইনজীবীরা জড়ো হতে থাকেন। পরে বেলা তিনটার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সদস্যরা নিরাপত্তা দিয়ে তাঁকে প্রিজন ভ্যানে তোলেন। এ সময় আবু তাহেরের মাথায় হেলমেট ও শরীরে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় দেখা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনজন আইনজীবী বলেন, আবু তাহের একটানা দুই দফা সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকার সুযোগে আইনজীবীদের টাকা মেরে খেয়েছেন। আজ বিক্ষুব্ধ আইনজীবীদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
জানতে চাইলে কুমিল্লা আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) কাইমুল হক বলেন, আইনজীবী সমিতির টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আইনজীবীরা তাঁকে ধাওয়া করেছেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিচারক তাঁকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।