গ্রীষ্মকালে আইনজীবীদের 'ড্রেস কোড' শিথিলে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন
বিচারক-আইনজীবীর পোষাক (প্রতীকী ছবি)

গরমে কোট-গাউন ছাড়া মামলা পরিচালনার অনুমতি চান আইনজীবীরা

পবিত্র রমজান সঙ্গে প্রচন্ড গরম বেড়ে যাওয়ায় কোট গাউন ছাড়া সাদা শার্ট, সাদা শাড়ি/সালোয়ার কামিজ ও সাদা নেক ব্যান্ড/কালো টাই পরিধান করে মামলা পরিচালনার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন আইনজীবীরা।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির পক্ষে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) এবং আজ বুধবার (১৯ মার্চ) চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ১০ জন সদস্য একই আবেদন জানিয়েছেন।

‎প্রধান বিচারপতি বরাবর লিখা, অ্যাসোসিয়েশনটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলামের সই করা এ সংক্রান্ত চিঠিটি সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

‎চিঠিতে বলা হয়েছে, ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আইনজীবী সমিতি এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম আইনজীবী সমিতি। বর্তমানে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য ৩১ হাজার ৩৬৫ জন। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও অতিমাত্রায় উষ্ণতার কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের তাপমাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনজীবীরা গরমে সীমাহীন কষ্ট ভোগ করছেন।

বিশেষ করে, শুনানিসহ মামলার অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার সময় এবং চারটি এজলাস কক্ষ ব্যতীত অন্যান্য এজলাস কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত না হওয়ায় অনেক গরম অনুভূত হয়। ফলে, মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে।

‎উল্লেখ্য, প্রচণ্ড গরমে গত বছর কোর্ট অঙ্গনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় হিটস্ট্রোক করে অ্যাডভোকেট শফিউল আলম (৪২) মারা গিয়েছিলেন। তা ছাড়া, তীব্র তাপদাহের কারণে প্রতিনিয়ত আইনজীবীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং আইনজীবীদের মধ্যে হিটস্ট্রোকের ভীতি হচ্ছে।

স্থায়ী সমাধান চান চট্টগ্রাম বারের আইনজীবীরা

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ১০ সদস্য যথাক্রমে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ রিদুয়ান, মো. বজলুল সাব্বির অভি, মুহাম্মদ রিয়াজ রহমান, মো. এমরান হোসেন, সারোয়ার জাহান, ইয়ার মোহাম্মদ, আবু তালিব, আবদুল্লাহ আল মামুন, মোহাম্মদ ফয়সাল হামিদ ও মো. সালাউদ্দিন অ্যাড-হক কমিটি বরাবর গ্রীষ্মকালে পোশাকে শিথিলতা আনতে আবেদন জানান।

গরমে কোট-গাউন ছাড়া মামলা পরিচালনার অনুমতি চান আইনজীবীরা

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি বরাবর গ্রীষ্মের দাবদাহে অধস্তন আদালত/ট্রাইব্যুনালসমূহের বিচারকদের বিচারকার্য পরিচালনা ও আইনজীবীদের মামলা শুনানিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কোট-গাউন পরিধানের আবশ্যকতায় শিথিলতা, রেজুলেশন ও স্থায়ী সমাধান চান চট্টগ্রাম বারের আইনজীবীরা।

আবেদনে বলা হয়, ষড়ঋতুর চক্র ভেঙ্গে গেছে, দীর্ঘায়িত হচ্ছে গ্রীষ্মকাল। দরজায় কড়া নাড়ছে গরম তাপপ্রবাহ। আবহাওয়াবিদদের বিশ্লেষণে ২০২২ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত উষ্ণতম বছর হিসেবে ধরা হয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দিনের তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি অনুভূত হয়েছে। বৈশ্বিক পূর্বাভাসকে আমলে নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন ২০২৫ সালে বাংলাদেশে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি গরম পড়তে পারে।

গরম তাপপ্রবাহের কারণে পানিশূন্যতা, অজ্ঞান হয়ে পড়া, শরীরে ভারসাম্যহীনতা, বমি, জ্বর, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া এবং হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে।

প্রতিবছর তীব্র দাবদাহের কারণে আইনজীবীরা অসুস্থ হয়ে পরেন, ফলে হিটস্ট্রোকের ভীতি বাড়ছে। ২০২১ ও ২০২৩ সালে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দুজন আইনজীবী হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর পর গরমকালে পোশাকের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

অধিকাংশ এজলাসে এসি না থাকার কারণে তীব্র তাপপ্রবাহে কোট-গাউন পরিধান করে বিচারকদের বিচারকার্য পরিচালনা ও আইনজীবীদের মামলা শুনানিতে অংশগ্রহণ করা বেশ কষ্টসাধ্য।

এমতাবস্থায় সার্বিক দিক বিবেচনা করে এবং বিচারক ও আইনজীবীদের সুবিধা-অসুবিধা মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট বিধান মোতাবেক কোট-গাউন পরিধানের আবশ্যকতায় শিথিলতা, রেজুলেশন ও স্থায়ী সমাধান করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

পোশাকে শিথিলতা আনতে পরামর্শ অ্যাটর্নি জেনারেলের

গ্রীষ্মকালের তীব্র গরমে আইনজীবীদের পোশাকের নিয়ম শিথিল করতে আহ্বান জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সোমবার (১৭ মার্চ) রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

তিনি এই প্রচন্ড গরমে আইনজীবীদের কালো কোট ও গাউন বাদ দেওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, শুধু সাদা শার্ট প্যান্ট টাই ব্যবহার করে আইনজীবীরা কোর্টে মামলা পরিচালনা করবেন। কারণ এই প্রচন্ড গরমে কালো কোট ও গাউন পড়লে আরও বেশি গরম লাগবে।

আইনজীবীরা বলেন, সিভিল রুলস অ্যান্ড অর্ডারস, ক্রিমিনাল রুলস অ্যান্ড অর্ডারস, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রুলস, ১৯৭৩ এবং আপিল বিভাগের রুলস, ১৯৮৮-তে শীত ও গ্রীষ্মকালে আইনজীবীদের একই ধরনের পোশাক পরিধানের বিধান রয়েছে।

বিধান অনুযায়ী, উচ্চ আদালতের আইনজীবীদের ক্ষেত্রে সাদা পোশাকের ওপর কালো কোট ও গাউনের পাশাপাশি সাদা কলার ব্যান্ড পরিধান বাধ্যতামূলক। তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে।

যেমন কোনো আইনজীবী সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিট আবেদন করে নিজেই শুনানি করলে তার ক্ষেত্রে গাউন, কলার ব্যান্ড পড়ার বাধ্যবাধকতা নেই। অন্যদিকে অধস্তন আদালতে শুনানিকালে আইনজীবীরা সাদা পোশাকের ওপর শুধু কালো কোট, কালো টাই ও গাউন পরিধান করবেন।

জানা যায়, কালো কোট ও গাউন পরিধানের বিষয়টি মূলত ব্রিটিশ ভাবধারা ও আবহাওয়া বিবেচনায় নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনায় বিভিন্ন সময়ে এ ড্রেস কোডের পরিবর্তনও দেখা গেছে।

২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জেরে বিভিন্ন সময় আইনজীবীদের ড্রেস কোডের পরিবর্তন আসে। ২০২১ সালের ৩১ মার্চ ও ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে আইনজীবীদের কালো কোট ও গাউনের বিষয়টি শিথিল করা হয়।