গ্রেফতার (ছবি - প্রতীকী)
গ্রেফতার (ছবি - প্রতীকী)

গ্রেপ্তারি ক্ষমতা চান প্রসিকিউটর ও তদন্ত কর্মকর্তারা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার করতে নিজস্ব ক্ষমতা চান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটররা। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কার্যবিধি-২০১০ সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

ইতোমধ্যে তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন শাখা থেকে কার্যবিধি সংশোধনে একটি প্রস্তাব ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে, যা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ঈদের পরেই কার্যবিধি সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষমতা চেয়ে ট্রাইব্যুনালের বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা ট্রাইব্যুনালে বিবেচনাধীন। ঈদের পর এটা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রসিকিউটরদের আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষমতা থাকলে অনেক ক্ষেত্রে সুবিধা আছে। অনেক সময় আসামি চিহ্নিত হওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল থেকে ওয়ারেন্ট আদেশ নিয়ে যেতে যেতে আসামি পালিয়ে যায়। ফলে তাদের আর ধরা যায় না। কিন্তু যখন আমাদের ক্ষমতা থাকবে, তখন সম্ভাব্য আসামিকে আগেই গ্রেপ্তার করে ফেলব। তাতে করে পালানোর সুযোগটা কমে যাবে।’

প্রসিকিউটরদের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হলে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত করতে সাহায্যে করবে বলে মনে করেন তিনি।

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ভারতে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৪ অক্টোবর পুনর্গঠন করা হয়। গত পাঁচ মাসে ট্রাইব্যুনাল আইনের দুটি ধারা ইতোমধ্যে সংশোধন করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যবিধি সংশোধনে এই প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুনট্রাইব্যুনালে আরও চার নতুন প্রসিকিউটর নিয়োগ

বর্তমানে জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৪২ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। প্রসিকিউশন সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৮ জনকে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারার ক্ষমতাবলে ৯টি কারণে পুলিশ যে কাউকে বিনা পরোয়ানায় বা আদেশ ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারে। পুলিশের পাশাপাশি দুদক, র‌্যাব, পিবিআই, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিজিবিসহ কয়েকটি সংস্থার আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষমতা রয়েছে।

এ ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের কার্যবিধি সংশোধন করতে হলে খসড়া একটি প্রস্তাবনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে পাঠাতে হবে। সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাইয়ের পর বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে চূড়ান্ত সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন সূত্র জানায়, প্রধান সমন্বয়কসহ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় ২৩ জন তদন্ত কর্মকর্তা কর্মরত। এ ছাড়া প্রসিকিউশন বিভাগে চিফ প্রসিকিউটরসহ ১৮ জন প্রসিকিউটর রয়েছেন।

ট্রাইব্যুনালের আইন অনুযায়ী, প্রসিকিউটররা তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তা ছাড়া প্রসিকিউটর বা তদন্ত কর্মকর্তারা তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সহযোগিতা করবেন।

ট্রাইব্যুনালের কার্যবিধি অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনাল কারও বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাস্তবায়ন করে থাকে। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটরদের আসামি গ্রেপ্তারের কোনো ক্ষমতা নেই। তাদের ক্ষমতা দিতে হলে ট্রাইব্যুনালের কার্যবিধি সংশোধন করতে হবে।

তাছাড়া কার্যবিধি অনুযায়ী, গ্রেপ্তারের পর পুলিশকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির করতে হয়। কিন্তু কার্যবিধি সংশোধনের প্রস্তাবনায়, গ্রেপ্তার করার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ বা তদন্ত কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনাল বা যে কোনো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আসামিকে হাজির করবেন। এ ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের কার্যবিধিতে কোনো সংশোধনী আনা হলে তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে।