আদালতে ডিজিটাল সাক্ষ্য: তত্ত্ব ও ব্যবহারবিধি (পর্ব-১)
আদালতে ডিজিটাল সাক্ষ্য:তত্ত্ব ও ব্যবহারবিধি

আদালতে ডিজিটাল সাক্ষ্য: তত্ত্ব ও ব্যবহারবিধি (পর্ব-১)

মতিউর রহমান: বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষ এতটাই বিশাল যে, বিচারিক কাজে ডিজিটাল সাক্ষ্যের ব্যবহারের আবশ্যকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আইনগত শূন্যতা দূরীকরণে ২০২২ সালে সাক্ষ্য আইনের সংশোধনের মাধ্যেম ডিজিটাল সাক্ষ্য সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ডিজিটাল সাক্ষ্য আইনে স্বীকৃত হলেও তা আদালতে গ্রহণযোগ্য করার নিমিত্ত সঠিকভাবে উপস্থাপন ও ব্যবহার একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যার জন্য বিচার সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এই জন্য ডিজিটাল সাক্ষ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপন পদ্ধতি, বিভিন্ন প্রকার ডিজিটাল রেকর্ড, ডিজিটাল ফরেনসিক ও সংশ্লিষ্ট আইন বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা থাকা আবশ্যক। বাংলাদেশের সাক্ষ্য আইনের ডিজিটাল সাক্ষ্য সংক্রান্ত বিধান ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের সাথে উল্লেখযোগ্য সাদৃশ্য বহন করে। ডিজিটাল সাক্ষ্য আদালতে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভ্রান্তিগুলোর বিষয়ে উভয় দেশের উচ্চ আদালত কর্তৃক বিভিন্ন মামলায় প্রদত্ত সিদ্ধান্ত হতে একটি কার্যকর ব্যবহার বিধি পাওয়া যায়।

ডিজিটাল সাক্ষ্য বলতে বোঝায় কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইস দ্বারা সৃজিত, সংরক্ষিত বা প্রেরিত এমন রেকর্ডবা ডকুমেন্টযা আদালতে প্রাসঙ্গিক ও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপনযোগ্য। সংশোধিত সাক্ষ্য আইনে ডিজিটাল সাক্ষ্যকে দালিলিক বা ডকুমেন্ট সাক্ষ্যের  অন্তর্ভুক্ত করা হলেও একটি সাধারণ ডকুমেন্ট এবং ডিজিটাল রেকর্ডের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তাই আইন প্রণেতারা ডিজিটাল ডকুমেন্টকে দালিলিক সাক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও এই বিষয়ে বিশেষ বিধান করেছেন।

বিচার্য বিষয়ের সাথে প্রাসংগিক ডিজিটাল সাক্ষ্য আইনে নির্ধারিত ধারা ৬৫খ অনুসারে আদালতে উপস্থাপন হলে তা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে। সাক্ষ্য আইনের ধারা ৫-৫৫ পর্যন্ত প্রাসংগিকতা নিয়ে আলোচনা আছে। উক্ত ধারাগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে ডিজিটাল সাক্ষ্যের বিষয় বিশেষভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের উচ্চ আদালতের কয়েকটি সিদ্ধান্তে কিছু ক্ষেত্রে ডিজিটাল সাক্ষ্যের প্রাসংগিকতা বিশেষভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ইউসুফ ইসমাইল নাগরী বনাম মহারাষ্ট্র (1) মামলায় টেপ-রেকর্ড করা কথোপকথন, Ghanshyambhai Madhavlal Patel Vs. State of Gujarat and Ors. (2) মামলায় ঘটনার পরপরই সাক্ষীর মিডিয়ায় প্রদত্ত বক্তব্যর সিডি res gestae নীতির আলোকে প্রাসঙ্গিক সাক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারতীয় আদালত। Surendra Vs. State of M.P.(3) এই মামলায় ডিজিটাল রেকর্ডের ভিত্তিতে প্লি অফ এলিবাই প্রমাণ স্বীকৃতি পায়।

সাক্ষ্য আইনের ১৭ ধারায় সংশোধনীতে ডিজিটাল মাধ্যমে স্বীকৃতি(admission) এর বৈধতা দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল রেকর্ডের বিষয়বস্তু অবশ্যই ডিজিটাল রেকর্ড দিয়েই প্রমাণ করতে হবেমর্মে ধারা ২২ক তে বলা হয়েছে। তবে, ডিজিটাল রেকর্ডের সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হলে সেই বিষয়ে মৌখিক সাক্ষ্য দেয়া যেতে পারে।

ডিজিটাল মাধ্যমে রেকর্ডকৃত Extra Judicial Confession উচ্চ আদালত কর্তৃক প্রাসংগিক হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। State Vs. Yeasin Khan Palash and Ors.(4) মামলায় Extra Judicial Confession  এরঅডিও রেকর্ড সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হয়। Major Bazlul Huda and Ors. Vs. State(5), মামলায় আদালত ভিডিও ক্যাসেটে রেকর্ডকৃত এই ধরণের স্বীকারোক্তিমূলকবিবৃতির প্রাসঙ্গিকতা স্বীকার করেন। The State and Ors. Vs. Shah Selim and Ors.(6)এই মামলায় আদালত অডিও রেকর্ডে মৃত্যুকালীন ঘোষণার প্রাসঙ্গিকতা ও গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতি দেয়।

বিশেষ অবস্থায় প্রদত্ত বিবৃতিগুলোর প্রাসংগিকতা বিষয়ে ধারা ৩৪-৩৮ তে উল্লেখ আছে যেখানে সংশোধনীর মাধ্যেম ডিজিটাল রেকর্ডও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই বিষয়গুলো বিশেষ অবস্থায় তৈরি বিবৃতি হিসেবে প্রাসঙ্গিক, যদিও বিবৃতি সৃজনকারী উক্ত মামলার পক্ষ হোক না কেন বা তাঁকে সাক্ষী হিসেবে পরীক্ষা করা হোক না কেন। সাক্ষ্য আইনের ধারা ৩৪ এর মাধ্যমে ডিজিটাল আকারে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা অ্যাকাউন্ট বইগুলোতে এন্ট্রিগুলো আদালতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

ধারা ৩৫ অনুসারে, কোনো সরকারি রেজিস্টার, অফিসিয়াল তথ্য ডিজিটাল রেকর্ডে থাকলে তা আদালতে প্রমাণ হিসেবে প্রাসঙ্গিক হয়েছে। ধারা ৩৬-এর অধীনে জনসাধারণের জন্য বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বা সরকারি ভাবে প্রকাশিত ডিজিটাল মানচিত্র, চার্ট বা পরিকল্পনাও সাক্ষ্য হিসেবে প্রাসঙ্গিক হয়েছে। ধারা ৩৯ অনুসারেযদি কোনো বিবৃতি বা প্রমাণ দীর্ঘ ডিজিটাল রেকর্ডের অংশ হয়, তাহলে কেবলমাত্র সেই অংশ আদালতে পেশ করা যাবে যা মামলার প্রাসঙ্গিক বিষয় বোঝার জন্য যথেষ্ট।

ডিজিটাল সাক্ষ্যের সত্যতা ও অখণ্ডতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য, ডিজিটাল ডিভাইস হতে সাক্ষ্য উদ্ধার এবং বিশ্লেষণ করতে বিশেষজ্ঞের সহযোগিতা আবশ্যক হয়ে পড়ে। সাক্ষ্য আইনের ধারা ৪৫ এর সংশোধন আনয়ন করে ডিজিটাল রেকর্ড বিষয়ে ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের মতামতকে প্রাসঙ্গিক করা হয়েছে। ধারা ৪৭ক ডিজিটাল স্বাক্ষর সম্পর্কে ডিজিটাল স্বাক্ষর সার্টিফিকেট প্রত্যয়নকারী কর্তৃপক্ষের মতামত প্রাসঙ্গিক করেছে।

ধারা ৬৫খ এর বিধানে বর্ণিত শর্ত পূরণ সাপেক্ষ এবং বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণে উপস্থাপিত হলে ডিজিটাল রেকর্ড সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।  ধারা৬৫ সাধারণ নথির ক্ষেত্রে মাধ্যমিক প্রমাণ দেওয়ার বিষয়ে বলে। একইভাবে, ধারা ৬৫ক ডিজিটাল রেকর্ড সম্পর্কিত বিশেষ বিধান হিসেবে ধারা ৬৫খ এর বিষয়ে বলে। এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে ধারা ৬৫খ -এর বিধানটি non-obstante clause দিয়ে শুরু হয়, তাই ধারা ৬৫খ-এর বিধান বাস্তবায়নের সময় সাক্ষ্য আইনের অন্য কোন বিধান বাধা হবেনা। ধারা ৬১ থেকে ৬৫ এর অধীনে, “ডকুমেন্ট বা ডকুমেন্টের বিষয়বস্তু” প্রমাণের বিষয়ে বলা থাকলেও ডিজিটাল ডকুমেন্টের জন্য বিশেষভাবে ৬৫ক ও ৬৫খ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা আইনসভার অভিপ্রায়কে স্পষ্ট করে দেয় অর্থাৎ ধারা ৬১-৬৫ পর্যন্ত ধারার প্রযোজ্যতা শুধু সাধারণ ডকুমেন্ট বিষয়ে।

ধারা ৬৫খ-এর সমস্ত উপ-ধারা একটি অপরটির সাথে সম্পর্কিত এবং বাধ্যতামূলক। ধারা ৬৫খ (১) এর অধীনে কম্পিউটার আউটপুট বলতে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন সহ যাবতীয় ডিজিটাল গ্যাজেট বা ডিভাইসের মাধ্যমে উৎপাদিত ডিজিটাল রেকর্ডকে বোঝায়। এই ধারার অধীনে ডিজিটাল রেকর্ড সাক্ষ্য হিসেবে যেকোন স্টোরেজ মাধ্যমে কপি করে বা প্রিন্ট আকারে আদালতে দাখিল করার সুযোগ করে দিয়েছে। মূল ডিভাইসসহ আসল ডিজিটাল রেকর্ড দাখিলের বা প্রমাণের আবশ্যকতা হতে অব্যহতি দিয়েছে। অর্থাৎ, আউটপুটকৃত মাধ্যমিক ডিজিটাল রেকর্ড সাক্ষ্য হিসবে গ্রহণযোগ্য করা হয়েছে।

ধারা ৬৫খ(২) ডিজিটাল রেকর্ডকে গ্রহণযোগ্য ‘কম্পিউটার আউটপুট’ হিসাবে গণ্য হতে আবশ্যকীয় শর্ত উল্লেখ করেছে। কম্পিউটার বা সংশ্লিষ্ট ডিভাইস কর্তৃক নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রবেশ করানো ডেটা হতে নিয়মিত কার্যক্রমের সময়ে আউটপুট হিসেবে ডিজিটাল রেকর্ড উৎপাদন করতে হবে। ধারা ৬৫খ(৩) উল্লেখ করে যে, ডিজিটাল রেকর্ড উৎপাদনের কাজে একাধিক ডিভাইস জড়িত থাকলেও তা সম্মিলিতভাবে একটি হিসেবে গণ্য হবে।

ধারা ৬৫খ(৪) সাক্ষ্য হিসেবে দাখিলী ডিজিটাল রেকর্ড ও সংশ্লিষ্ট ডিভাইস বিষয়ে সার্টিফিকেট দেয়া বাধ্যকর করেছে। উক্ত সার্টিফিকেট ডিজিটাল রেকর্ড উৎপাদনকারী ডিভাইসের দায়িত্বে থাকা একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি কর্তৃক প্রদান করতে হবে। সার্টিফিকেটে ডিজিটাল রেকর্ড, সেটি উৎপাদন ও সংশ্লিষ্ট ডিভাইস বিষয়ে তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ধারা ৬৫খ(৪) অনুসারে ডিজিটাল সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য করার জন্য সার্টিফিকেট দাখিলের বাধ্যবাধকতা উল্লেখ করেছে। কিন্তু, সর্বদা সার্টিফিকেট সংগ্রহ ও দাখিল সম্ভব না হতেও পারে। এই বিষয়ে ভারতীয় উচ্চ আদালত সমাধান খুঁজেছে।

আইনের ধারা ৬৫খ অনুযায়ী, কম্পিউটার আউটপুটকে আসলটি ছাড়াই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য করা হয়েছে, যা ইঙ্গিত করে যে, মূল ডিজিটাল রেকর্ড ও তার অনুলিপির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। মূল ডিজিটাল রেকর্ড প্রমাণে উপস্থাপন পদ্ধতি বিষয়ে আইনে স্পষ্ট কিছু বলা হয় নি। আনভার পিভি বনাম পিকে বশীর (7) মামলায় ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট উল্লেখ করেছে যে, মূল ডিজিটাল রেকর্ড সরাসরি আদালতে উপস্থাপন করা হলে তা প্রাথমিক প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে। এই ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট দাখিলের আবশ্যকতা নাই। একই সিদ্ধান্ত অর্জুন পণ্ডিতরাও খোটকারের(8)মামলায়ও গৃহীত হয়েছে, যেখানে আদালত বলেছে যে, সার্টিফিকেট ছাড়াই একটি ডিজিটাল ডিভাইসের মালিক নিজেই আদালতে ডিভাইস সহ মূল ডিজিটাল রেকর্ড উপস্থাপন করে প্রমাণ দিতে পারেন।

তবে, যদি ডিজিটাল তথ্য অন্য কোনো মাধ্যম বা ডিভাইসে স্থানান্তর করা হয়, তাহলে তা মাধ্যমিক প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে। এই রায়গুলো যা ইঙ্গিত করে তা হল; যে তথ্যগুলো কোনও মানব হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্ব-উৎপাদিত বা সরাসরি সিডি, ডিভিডি, হার্ড-ড্রাইভ, মেমরিচিপ এবং পেনড্রাইভে রেকর্ড করা হয় এবং সরাসরি সেগুলো প্রমাণ হিসাবে জমা দেওয়া হয়, সেটি প্রাথমিক প্রমাণ হিসাবে বিবেচিত হবে। যদি এই ধরনের ডেটা অন্য স্টোরেজ মিডিয়াম যেমন সিডি, ডিভিডি, হার্ড-ড্রাইভ বা পেনড্রাইভে কিছু পরিমাণে মানুষের হস্তক্ষেপে স্থানান্তরিত হয় বা কাগজে প্রিন্ট হয় তবে এই ধরনের পরিস্থিতিতে এটি মাধ্যমিক সাক্ষ্য হিসাবে বিবেচিত হবে। সেক্ষেত্রে ধারা ৬৫খ(৪) অনুসারে সার্টিফিকেট সহ আউটপুটটি সাক্ষ্য হিসেবে দাখিল করতে হবে। আবার, ডিভাইস প্রতিপক্ষের দখলে থাকতে পারে বা অন্য কোন যৌক্তিক কারণে সার্টিফিকেট সংগ্রহ অসম্ভব হতে পারে। সেই ক্ষেত্রেও সার্টিফিকেট ছাড়াও উপস্থাপিত মাধ্যমিক ডিজিটাল সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে মর্মে ভারতীয় উচ্চ আদালত একাধিক মামলায় সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

৬৫খ(৫) উপ-ধারাটি মানুষের হস্তক্ষেপসহ বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বয়ংক্রিয় ডিভাইস এবং প্রক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ এবং সংরক্ষণের কার্যক্রমের জন্য সুযোগ করেছে। এই উপধারা নিশ্চিত করে যে, মানব হস্তক্ষেপ বা স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন উপায়ে উৎপন্ন ডিজিটাল রেকর্ডগুলো সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য। ৬৫খ  ধারার শিরোনাম নির্দেশ করে যে এই ধারার শর্ত পূরণ সাপেক্ষ দাখিল করা হলে একটি কম্পিউটার আউটপুট ডিজিটাল রেকর্ড আকারে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।

তবে, সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হলেই বিষয়বস্তু প্রমাণিত হিসেবে গণ্য হবে না। উপস্থাপিত ডিজিটাল সাক্ষ্যের সত্যতা, অখণ্ডতা ও নির্ভরযোগ্যতা চ্যালেঞ্জ হতে পারে যা পরিস্থিতিগত প্রমাণ, চেইন অব কাস্টডি, হ্যাশ ফাংশন (গাণিতিক এলগরিদম যা সাধারণ নথিতে আঙ্গুলের ছাপের ন্যায়), ডিজিটাল স্বাক্ষর, ডিজিটাল টাইম স্ট্যাম্পিং ও বিশেষজ্ঞের মতামতের মাধ্যমে প্রমাণীকরণ (authentication) করা যায়। প্রমানীকরণের সময় ডিজিটাল স্বাক্ষর প্রমাণের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। ধারা ৬৭ক অনুসারে সুরক্ষিত ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে ডিজিটাল স্বাক্ষরটি স্বাক্ষরকারীর তা দাবীকারীকেই প্রমাণ করতে হয়। ধারা ৭৩ক অনুসারে ডিজিটাল স্বাক্ষর যাচাই করার নিমিত্ত ডিজিটাল স্বাক্ষর সার্টিফিকেট দাখিল করতে বা সংশ্লিষ্ট public key ব্যবহার করতে আদালত সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিতে পারেন।

ডিজিটাল সাক্ষ্য সম্পর্কে আদালতকে কিছু নির্দিষ্ট খণ্ডনযোগ্য অনুমান করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সংশোধিত সাক্ষ্য আইনে। ধারা ৮১ক অনুযায়ী আদালত সরকারি গেজেটে প্রকাশিত বা আইন দ্বারা নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী সংরক্ষিত ডিজিটাল রেকর্ডের সত্যতা অনুমান করবে। ধারা ৮৫ক আদালতকে ডিজিটাল স্বাক্ষরযুক্ত চুক্তিকে বৈধ অনুমান করতে ক্ষমতা দিয়েছেধারা ৮৫খ নিরাপদ ডিজিটাল রেকর্ড ও নিরাপদ ডিজিটাল স্বাক্ষরের প্রমাণমূলক মান সম্পর্কে আদালতের অনুমান বিষয়ে। এগুলোর সত্যতা, অখণ্ডতা ও নির্ভরযোগ্যতা সাধারণের তুলনায় বেশি। ধারা ৮৫গ যাচাইকৃত তথ্য ব্যাতীত ডিজিটাল স্বাক্ষর সার্টিফিকেটে থাকা তথ্য সঠিক মর্মে অনুমানের সুযোগ করেছে। ধারা ৮৮ক অনুসারে যেই ডিজিটাল বার্তা পাঠানো হয়েছে সেটিই নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছেছে মর্মে আদালত অনুমান করতে পারে,তবে কে এটি পাঠিয়েছে সে সম্পর্কে অনুমান করতে পারবে না। ধারা ৯০ক-তে৫ বছরের অধিক পুরনো ডিজিটাল রেকর্ড সঠিকভাবে ডিজিটাল স্বাক্ষর দ্বারা সম্পাদিত মর্মে অনুমান করার ক্ষমতা আদালতকে দেয়া হয়েছে। এই সংশোধীত বিধানগুলোর ফলেডিজিটাল রেকর্ড ও স্বাক্ষরের আইনগত গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ডিজিটাল নথির ব্যবহারকে আরও সহজ ও নিরাপদ করেছে।

ডিজিটাল সাক্ষ্য ও সার্টিফিকেট সংগ্রহ, বিচারেব্যবহার, ডিজিটাল সাক্ষ্যের প্রদর্শনী চিহ্নিতকরণ ও ডিজিটাল ফরেনসিক বিষয়ে লিখবো পরবর্তী পর্বে।

উল্লেখ্য যে, উচ্চ আদালতের নজীর ও উদাহরণ সহ সংশ্লিষ্ট আইনের ব্যাখ্যা, ডিজিটাল ফরেনসিক, বিভিন্ন প্রকার ডিজিটাল রেকর্ড সম্পর্কে ধারণা ও সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার পদ্ধতিবিষয়ে বিস্তারিত আমার প্রকাশিতব্য বই “আদালতে ডিজিটাল সাক্ষ্য:তত্ত্ব ও ব্যবহারবিধি” তে পাওয়া যাবে।

লেখক : মতিউর রহমান, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বাগেরহাট।

তথ্যসূত্র –

1. AIR 1968 SC 147

2.Manu/Gj/1456/2014.

3.https://www.casemine.com

4.29 BLD HCD 2007

5.18 BLT AD 2010 7

6.LEX/BDHC/0351/2022

7.1 Scc(cri) 24

8.MANU/SC/0521/2020