সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আশা প্রকাশ করেছেন, বিচার বিভাগ দেশ ও জনগণের আইনি এবং মৌলিক অধিকার রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর মতো দায়িত্ব পালন করে যাবে।
আজ রোববার (২০ এপ্রিল) সকালে আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত দুই বিচারপতি—বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি ফারাহ মাহবুবকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
বক্তব্যে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, “প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বিচার বিভাগকে আধুনিক, সময়োপযোগী ও গতিশীল একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন, তিনি তা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিচারপ্রার্থী জনগণ অচিরেই এ রোডম্যাপের সুফল পাবেন।”
তিনি আরও বলেন, “বিচার বিভাগের মূল দায়িত্ব হলো—সুনির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিকের আইনের আশ্রয় লাভ ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা। সুবিচার প্রতিষ্ঠায় শুধু বিজ্ঞ বিচারকদের নয়, আইনজীবীদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একইসাথে আদালতের অফিস সহায়ক থেকে শুরু করে সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এ প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ।”
আরও পড়ুন : আপিল বিভাগে নতুন দুই বিচারপতিকে সংবর্ধনা
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব উল্লেখ করেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সেই সময় থেকে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমানে আপিল বিভাগের একমাত্র নারী বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, “এক সময় আমাদের দেশে সাধারণ ধারণা ছিল, আইন পেশা নারীদের জন্য উপযোগী নয়। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীরা সেই বাধা অতিক্রম করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আইন পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে আইনজীবীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী রয়েছেন, যারা সরাসরি মামলা পরিচালনায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।”
তিনি আরও জানান, “বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে নারী বিচারকের সংখ্যা মোট বিচারকের প্রায় ৩৫ শতাংশ। উচ্চ আদালতে বর্তমানে ১০ জন নারী বিচারক রয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, এই সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। এটি শুধুমাত্র নারীর ক্ষমতায়নের দিক থেকেই নয়, বরং ন্যায়বিচারের অভিগম্যতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।”
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঐতিহ্য অনুযায়ী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন দুই নবনিযুক্ত বিচারপতির জীবনী তুলে ধরে বক্তব্য দেন। এরপর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ, আপিল বিভাগের সব বিচারপতি এবং এজলাস কক্ষ আইনজীবীদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ ছিল।