পাবনা সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের কুলুনীয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুল হাই মিয়া। বয়স ৭৫ পেরিয়েছে, কিন্তু স্বপ্ন দেখার আগুন এখনও মনের ভেতরে জ্বলছে। জীবনের অধিকাংশ সময় পার করেছেন আইনজীবী সহকারী হিসেবে। এখন লক্ষ্য একটাই—বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ২০২৫ সালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পূর্ণাঙ্গ আইনজীবী হিসেবে লাইসেন্স পাওয়া।
স্থানীয়ভাবে পরিচিত “মুহুরি আব্দুল হাই” নামে, তিনি ১৯৬৮ সাল থেকে পাবনা জেলা আইনজীবী বার সমিতিতে দলিল লেখক হিসেবে কর্মরত। এই দীর্ঘ ৫৬ বছরের পেশাগত জীবনে বহু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, শত শত আইনজীবীর সান্নিধ্যে কাজ করেছেন। কিন্তু মন থেকে মুছে ফেলেননি সেই একটিমাত্র স্বপ্ন—একদিনের জন্য হলেও উকিল হবেন।
ছাত্রজীবনে দীর্ঘ বিরতির পর নতুন করে শুরু করেন পড়াশোনা। ২০০১ সালে নিজের সন্তানদের সঙ্গে এইচএসসি, ২০১০ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং ২০১৯ সালে পাবনার শহীদ আমিন উদ্দিন আইন কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেন।
এবার বার কাউন্সিলের চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসেছেন, যা তার জীবনের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ।
প্রতিদিন একটি পুরোনো দুই চাকার সাইকেল চেপে কর্মস্থলে যান হাই মিয়া। সকালে বাসা থেকে বের হন, বিকেল পর্যন্ত কাজ করেন, তারপর রাতে পড়াশোনা। এই কঠিন রুটিনের পেছনে একটি বড় অনুপ্রেরণা—পরিবারের ভালোবাসা ও সমর্থন।
স্ত্রী রওশন আরা বেগম ১৫ বছর বয়সে বিয়ের পর থেকেই জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তার পাশে থেকেছেন। মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করে পাত্রস্থ করেছেন, তাদের সন্তানদের দেখভালও করছেন।
ছোট মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পাস করেছিলেন—বাবা-মেয়ের এই যুগলবন্দি আজো অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে আছে পরিবারে।
হাই মিয়ার প্রথম দিনে আয় ছিল মাত্র ৫০ পয়সা। আজ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কয়েক হাজারে, কিন্তু তিনি কখনো অর্থের পেছনে ছুটেননি। সাধাসিধে জীবন যাপন করেন, মানুষের উপকারে থাকতেই বেশি আগ্রহী।
তার সহকর্মী, আইনজীবী এবং এলাকার মানুষজন তাকে নিয়ে গর্বিত। কেউ বলেন, তিনি এক প্রেরণার নাম, কেউ বলেন, স্বপ্ন পূরণের প্রতীক। পাবনা জেলা আইনজীবী বার সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এই বয়সে এমন চেষ্টা নিঃসন্দেহে দৃষ্টান্তমূলক।”
জীবনের শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য যে সংগ্রাম করছেন আব্দুল হাই মিয়া, তা শুধু তার নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য এক প্রেরণার আলো হয়ে উঠতে পারে।