একজন মেধাবী মানুষের সান্নিধ্যে ২৪ ঘন্টা
ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল

একজন মেধাবী মানুষের সান্নিধ্যে ২৪ ঘন্টা

ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল : বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুদক, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সংস্কারের জন‍্য ৬টি কমিশন গঠন করে। প্রতিটি কমিশন তাদের স্ব স্ব প্রতিবেদন দাখিল করে।

দাখিলকৃত প্রতিবেদনের আলোকে জাতীয় ঐক‍্যমত‍্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক‍্যমত‍্য কমিশন গঠন করা হয়। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক প্রফেসর ড. আলী রিয়াজ ঐক‍্যমত‍্য কমিশনের সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আগামী দিনের রাষ্ট্র সংস্কারে জাতীয় ঐক‍্যমত‍্য কমিশনের সাথে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র মতামত শেয়ার করার জন‍্য বিএনপি ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল মনোনীত করে।

বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন

১। জনাব নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য;
২। জনাব সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য;
৩। জনাব ইসমাইল জবিউল্লাহ, অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা;
৪। জনাব মিয়া মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান খান, সাবেক সংস্থাপন সচিব;
৫। ব‍্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সদস্য, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটি।

মূলত জনাব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বিএনপি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিগত ১৭ই এপ্রিল, ২০ এপ্রিল ও ২২ এপ্রিল বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সদস‍্য হিসাবে ঐক্যমত‍্য কমিশনের সঙ্গে সর্বমোট ২৪ ঘন্টা বৈঠক মত বিনিময় করেছি।

ঐক্যমত‍্য কমিশনের পক্ষে ছিলেন

১। প্রফেসর ড. আলী রিয়াজ, সহ-সভাপতি, ঐক‍্যমত‍্য কমিশন;
২। প্রফেসর ড. ইফতেখারুজ্জামান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান;
২। ড. বদিউল আলম মজুমদার, নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান;
৩। বিচারপতি মো এমদাদুল হক, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস‍্য;
৪। জনাব সফররাজ খান, সাবেক পুলিশ প্রধান ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান ও
৫। জনাব মনির হায়দার, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও ঐক‍্যমত‍্য কমিশনের সদস্য-সচিব।

ঐক্যমত‍্য কমিশনের সকলেই বিদ্বান ব্যক্তি। সকলেই দীর্ঘদিনের পেশাগত জীবনের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে সংস্কার কমিশনগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ গুরুদ্বায়িত্ব পালনকালে যথাযথ সংস্কারের লক্ষ্যে নেতৃবৃন্দ দেশের সংবিধান, প্রচলিত আইন, উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর রাষ্ট্র কাঠামো নিয়ে বিস্তর গবেষণাসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মতামত নিয়ে সংস্কার প্রস্তাবনা তৈরি করেছেন। নিঃসন্দেহে তারা দুরুহ কাজ করেছেন- যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

কিন্তু এখানে আমি বলছি আমাদের প্রতিনিধিদলের নেতা জনাব সালাহ উদ্দিন আহমেদের কথা। আমি একজন আইনজীবী। পেশার প্রয়োজনে আমাকে প্রতিদিন সংবিধান ও বই দেখে আইনের চর্চা করতে হয়। সংবিধান বা আইনের কিছু মৌলিক অনুচ্ছেদ/ধারা আমার মুখস্থ আছে। কিন্তু পুরো সংবিধানের বিসমিল্লাহ থেকে শেষ অবধি? বলতে গেলে এটা একপ্রকার অসম্ভব! আমার ধারণা, আমার চেয়ে মেধাবী আইনজীবীদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

কিন্তু খুবই অবাক করা বিষয় যে বাংলাদেশের সংবিধান পুরোটা যাঁর মুখস্থ তিনি হলেন আমাদের দলনেতা জনাব সালাহ উদ্দিন আহমেদ। ঐক্যমত‍্য কমিশনে তাঁর সঙ্গে ২৪ ঘন্টা কাজ করার সুবাদে তাঁকে নতুন করে চিনেছি। যদিও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগে আমার অগ্রজ, কিন্তু বিএনপির সংবিধান ও বিচার বিভাগ সংস্কার বিষয়ক অভ‍্যন্তরীর কমিটির সদস্য হিসেবে তাঁর সঙ্গে আমার সংবিধান, সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী মামলা, ১৩তম সংশোধনী সংক্রান্ত রিভিউ মামলা বিষয়ে আইনী পর্যালোচনা করার সুযোগ হয়েছে।

আরও পড়ুনএকজন শাজনীনের বিষন্ন দৃষ্টি, বিচারের গল্প এবং শাস্তি নির্ধারণ

কিন্তু এবারের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। ঐক‍্যমত‍্য কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কার প্রস্তাব বিষয়ে তিনি সম‍্যক অবহিত প্রতিটি বিষয়ে। বিএনপি’র অবস্থান কি এবং কেন তাঁর যৌক্তিকতা তিনি তুলে ধরেন নিমিষেই বিভিন্ন দেশের রেফারেন্সসহ। মিডিয়া ব্রিফিং-এ সাবলীলভাবে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন আইনের ধারা উপধারাসহ। আমি বিমোহিত হয়ে যাই এত মেধাবী মানুষ হয় কিভাবে?

জনাব সালাহ উদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে এলএলবি (অনার্স) ও এলএলএম (মাস্টার্স) করেছিলেন। পরবর্তীতে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন। ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সহকারী একান্ত সচিব। পরে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে কক্সবাজার-১ আসন থেকে পর পর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন।

বিগত ফ‍্যাসীবাদী আমলে গুমের শিকার হন। সংবিধান ও বিচার বিভাগ সংস্কার বিষয়ক অভ‍্যন্তরীর কমিটির সদস্য হিসেবে গুম জীবনের এক পর্যায়ে ভারতের মাটিতে তিনি আবিষ্কৃত হন। ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ফৌজদারি বিচারের মুখোমুখি হন। বিচারে খালাস পান। কিন্তু দেশে ফিরতে পারেননি। ভারতেই কেটেছে টানা ৯ বছর। আমার ধারণা, ভারতে অবস্থানকালে তিনি প্রচুর পড়াশুনা করেছেন। নিজের জ্ঞানের ভান্ডার আরো সমৃদ্ধ করেছেন।

বিএনপি’র কমিটির আমি সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। কিন্তু তিনি মতামত প্রকাশে আমাকেও সমান সুযোগ দিয়েছেন। ঐক্যমত‍্য কমিশনের সামনে দলের পক্ষ থেকে।

দেশে যখন সবাই বিভিন্ন সেক্টরে মেধাবীদের তালাশ করেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সেক্টরে জনাব সালাহ উদ্দিন আহমেদ নিঃসন্দেহে একজন দক্ষ, যোগ্য ও মেধাবী রাজনীতিক।

লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটির নির্বাচিত সদস্য, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ৩ বারের নির্বাচিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক।