৪৪ বছর ধরে বন্ধ থাকা ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর পুনরায় চালুর দাবিতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার সন্তান অ্যাডভোকেট মো. কামরুজ্জামান।
হাইকোর্টের বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফ সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চে রিটটি দায়ের করা হয়েছে, যার নম্বর ৮৬৩০/২০২৫। মামলাটি শিগগিরই শুনানির জন্য কার্যতালিকায় রয়েছে।
রিটের বিষয়ে অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান বলেন, “আমি বিগত ২৭ এপ্রিল সরকারের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলাম বিমানবন্দরটি চালুর লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের একটি সরকারি কমিটি গঠনের অনুরোধ জানিয়ে। কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমি নিজেই পিটিশনার হয়ে হাইকোর্টে রিট করেছি।”
রিট আবেদনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা ও আইন মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (CAAB) ও ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসককে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটে হাইকোর্টের কাছে একটি রুল ও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে যাতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করবে—
১) বিমানবন্দরটি চালু করতে প্রয়োজনীয়তা ও কাঠামো,
২) দীর্ঘদিন ধরে এটি বন্ধ থাকার ফলে এলাকার জনজীবন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও উদ্যোক্তাদের ওপর প্রভাব,
৩) নেপাল-ভুটান-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বাণিজ্য ও পর্যটনের সম্ভাবনা,
৪) কৌশলগত গুরুত্বের কারণে এই বিমানবন্দরটির সামরিক ও বেসামরিক সম্ভাব্য ব্যবহার।
‘অদৃশ্য হস্তক্ষেপেই প্রকল্প থমকে’, দাবি রিটকারীর
অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান বলেন, “সরকারের অনেক কর্তা ব্যক্তি অতীতে বিভিন্ন সময় এ বিমানবন্দর চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু প্রকৃত কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। কারণ, এটি চালু না করার পেছনে রয়েছে এক ধরনের কৌশলগত ‘অদৃশ্য বাধা’। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর ভারতের ‘চিকেননেক’-এর সন্নিকটে অবস্থিত। ফলে এটির কৌশলগত গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।”
তিনি আরও বলেন, “এই বিমানবন্দর চালু হলে ভারতীয় আধিপত্যের একটি বড় ধাক্কা লাগবে এই অঞ্চলে। ব্রিটিশ আমলেই এটি সামরিক ও বেসামরিক উভয় কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটেও এর প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়েছে। ভারত-পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনার মধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এটি একটি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো।”
‘যাত্রীসংখ্যার অভাব নয়, বাস্তবতাই দাবি করছে চালুর’
রিট আবেদনকারীর মতে, “বলা হয়, যাত্রী না থাকায় এটি চালু করা যাচ্ছে না—এটি সত্য নয়। এখন ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের বহু মানুষ প্রতিদিন বিমানে যাতায়াত করেন। সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করতে গিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৯০-১০০ জন ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়ের যাত্রী সময়, খরচ ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “ঠাকুরগাঁও থেকে সৈয়দপুর প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে, যেতে সময় লাগে প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা। সেই তুলনায় রেল অনেক বেশি সহজ। কিন্তু যদি ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু হয়, এই এলাকার মানুষের যাতায়াত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দ্বার খুলে যাবে।”
বিমানবন্দর চালু হলে বদলে যাবে ৪৫ লাখ মানুষের ভাগ্য
রিটে উল্লেখ করা হয়েছে, ঠাকুরগাঁও সদর, রাণীশংকৈল, পীরগঞ্জ, হরিপুর, বালিয়াডাঙ্গি, রুহিয়া, পঞ্চগড়, দেবীগঞ্জ, বোদা, তেঁতুলিয়া, আটোয়ারী, দিনাজপুর ও নীলফামারীর কিছু অংশ মিলিয়ে এই অঞ্চলে প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ বাস করেন। এই বিমানবন্দরটি তাদের অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক ও নিরাপত্তাগত চাহিদা পূরণে মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
“বিমানবন্দর চালু হলে এ এলাকায় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান, রপ্তানিমুখী কারখানা ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠবে,” বলেন অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান। “এই অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে অঞ্চলটির মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে, এবং এই অঞ্চল জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”