বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায়ের পথ সুগম করে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেওয়া আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কর্তৃক দেওয়া ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়।
এর আগে, ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেন। হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫% হারে আয়কর আরোপকারী দুটি প্রজ্ঞাপনকে অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন।
এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে সর্বোচ্চ আদালত তা মঞ্জুর করে হাইকোর্টের রায় বাতিল করেন।
বিচারপতি বোরহান উদ্দিনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ পৃথক ৪৫টি আপিলের শুনানি শেষে এই রায় দেন।
আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়, এ বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কর আরোপ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার খরচ বৃদ্ধি করবে, তা সঠিক নয়। কারণ আয়কর বা প্রত্যক্ষ কর কেবলমাত্র তখনই প্রদেয় হবে যখন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আয় করবে; তবে ক্ষতি হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কর প্রদান করতে হয় না।
আরও পড়ুন : ফিরে আসা অন্ধকার—অপরাধীর পুনর্জন্ম
রাষ্ট্রপক্ষে মামলায় ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। অন্যদিকে, রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা এ এফ হাসান আরিফ, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, প্রবীর নিয়োগী এবং আইনজীবী ওমর সাদাত ও সাখাওয়াত হোসেন।
প্রসঙ্গত, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০০৭ সালের ২৮ জুন এবং ২০১০ সালের ১ জুলাই দুটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর ১৫ শতাংশ আয়কর আরোপ করে। এ দুটি প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৭ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও এক শিক্ষার্থীসহ মোট ৪০টিরও বেশি রিট আবেদন করা হয়।
আইনজীবীদের তথ্যমতে, রিটকারীদের মধ্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি রয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে এবং হাইকোর্টের রায় স্থগিত করা হয়। এরপর পৃথকভাবে ৪৫টি ‘লিভ টু আপিল’ (আপিলের অনুমতির আবেদন) করা হয়। ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তা মঞ্জুর করে চূড়ান্ত শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়।
সবশেষে, আপিল বিভাগের রায়ে এনবিআরের ১৫ শতাংশ কর আরোপকারী দুই প্রজ্ঞাপন বৈধ বলেই গণ্য হলো, যা দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য কর প্রদানের পথ সুগম করল।