চেকের মামলা দেওয়ানী মোকদ্দমার মতো সংশোধনী ও প্রাসঙ্গিক আইন
অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সম্পত্তির বন্টন দলিল বাধ্যতামূলক!

সিরাজ প্রামাণিক : দেশে পারিবারিক বিরোধের মূলে রয়েছে জমিজমা। ওয়ারিশরা সাধারণত জমি রেজিস্ট্রার্ড বণ্টন দলিল না করে মৌখিকভাবে, সাধারণ কাগজে কিংবা স্ট্যাম্পের উপর লিখে বণ্টন করে ভোগ করে থাকেন। একসময় জমির মূল্য বৃদ্ধি পেলে জমি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ থেকে পারিবারিক বিরোধের শুরু হয়।

পারিবারিক বিরোধ থেকে সামাজিক নানা ধরনের ঝগড়াবিবাদ, মারামারি, খুন এবং দীর্ঘ মেয়াদে মামলা-মোকদ্দমার সূত্রপাত হয়। এ সমস্যা সমাধানে প্রতিটি পরিবারকে জমির বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রার্ড বণ্টন দলিলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। দীর্ঘ সময় পরে হলেও অন্তবর্তীকালীন সরকার বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।

নতুন আইন অনুযায়ী, আপনি উত্তরাধিকার সম্পত্তি নামজারি ও বিক্রয় করতে পারবেন না, যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি আপোষ বণ্টননামা দলিল না করেছেন। এখন থেকে উত্তরাধিকার সম্পত্তি ভাগাভাগি করতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে ‘আপোষ বণ্টননামা দলিলের’ মাধ্যমে। এই দলিল ছাড়া কোনোভাবেই সম্পত্তির নামজারি বা বিক্রয় সম্ভব হবে না।

নতুন এ নিয়ম মানতে কেউ ব্যর্থ হলে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। ২০০৪ সাল থেকেই আপোষ বণ্টননামা দলিল বাধ্যতামূলক করা হয়, কিন্তু বাস্তবে তার প্রভাব ছিল সীমিত।

আরও পড়ুন : পৃথক হচ্ছেন দেওয়ানি আর ফৌজদারি মামলার বিচারক

১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ (খ) ধারামতে, উত্তরাধিকারদের বিষয়ে খতিয়ান সংশোধন করতে হলে যিনি মৃত ব্যক্তির বংশধর বা ওয়ারিশ হিসেবে পরিচয় দেন, তিনি অন্যান্য ওয়ারেশদের পারস্পরিক সম্মতিক্রমে বন্টননামমা দলিল করবেন এবং ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট অনুযায়ী সেই দলিলটি অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে। এরপর রাজস্ব কর্মকর্তা খতিয়ান সংশোধন করে দেবেন।

অনেকেই উত্তরাধিরসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি মৌখিকভাবে বা অরেজিস্ট্রিকৃত চুক্তির মাধ্যমে জমি ভাগ করে নেন, যা ভবিষ্যতে বড় জটিলতা সৃষ্টি করে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী উত্তরাধিকার সম্পত্তি ভাগ করতে হলে আবশ্যিকভাবে দলিল করতে হবে রেজিস্ট্রার অফিসে। মৌখিক বণ্টন আইনসম্মত নয় এবং তা ভবিষ্যতে দলিল সংশোধনের সুযোগও বন্ধ করে দেয়।

বন্টন দলিল ছাড়া জমি ক্রয় বা বিক্রয় করলে আইনগত শাস্তি হবে অনিবার্য। আইন লঙ্ঘনে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী মামলা করে জমি পুনরুদ্ধার করা যাবে। নতুন এ আইনে জমির খাজনা, নামজারি ও দখল নিয়ে আর ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না।

মনে রাখবেন এই আইন সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে তাদের উপর, যাদের পূর্বপুরুষদের জমি এখনো নিয়ম অনুযায়ী বন্টিত হয়নি। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, জমি বিক্রি বা দান করতে হলেও আগে আপোষ বণ্টননামা দলিল করতে হবে। এমনকি বন্টন দলিল ছাড়া নামজারি হলেও তার কোনো বৈধতা থাকবে না।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, পিএইচ. ডি (ফেলো) ও আইনগ্রন্থ প্রণেতা। ইমেইল: seraj.pramanik@gmail.com