আদালতে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করলেন বয়োবৃদ্ধ বাবা
চট্টগ্রাম আদালত

হত্যাকাণ্ডকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ওসিসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় এক ডাম্পার চালককে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল আহম্মদ ও  উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমদ পাটোয়ারীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছেন নিহতের মা রোকেয়া বেগম।

চট্টগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গতকাল বুধবার (২৫ জুন) দায়ের করা মামলায় চাঞ্চল্যকরভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, স্থানীয় প্রভাবশালী ও পুলিশের কিছু সদস্য মিলে এই হত্যাকাণ্ডকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে চালিয়ে দিতে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন এবং বাদীকে হুমকি দিয়েছেন।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী জিয়াবুল আলম ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার অপর ১০ আসামি হলেন –

১. শিহাবুজ্জামান চৌধুরী
২. আবছার শিকদার
৩. সিরাজ সওদাগর
৪. মান্নান
৫. ওয়াসিম
৬. সবুজ
৭. সাজ্জাদ ড্রাইভার
৮. মোঃ নোমান
৯. শাহেদ হোসেন
১০. মোঃ আলমগীর

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

নিহত দেলোয়ার আনোয়ারার স্থানীয় বাসিন্দা ও পেশায় ডাম্পার চালক ছিলেন। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে আনুমানিক ৬টায় বাদীর বাড়িতে ১-১০ নম্বর আসামিরা উপস্থিত হয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে হত্যা করার হুমকি দেওয়া হয়। পরে বাদী ও দেলোয়ারকে জোরপূর্বক একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পাটানীকোটা এলাকার একটি খালি ঘরে।

হত্যাকাণ্ডের বিবরণ

ওই ঘরে ১-১০ নম্বর আসামিরা দেলোয়ারকে হাত-পা বেঁধে তার শরীরে ইলেকট্রিক শক দেয় এবং ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। ঘটনার পর বাদীকে ছেড়ে দিয়ে হুমকি দেওয়া হয় যেন বিষয়টি কাউকে না জানান।

পুলিশের ভূমিকা ও অভিযোগ

বাদী আনোয়ারা থানায় জানালে ওসি (অভিযুক্ত ১১ নম্বর আসামি) এসআই ফারুক (১২ নম্বর আসামি) কে ঘটনাস্থলে পাঠান। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে ১ নম্বর আসামির সঙ্গে কথোপকথনের পর বাদীকে থানায় নিয়ে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয় এবং ঘটনার পর “বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু” বলে অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করা হয়।

বাদী অভিযোগ করেন, মামলা করতে চাইলে তাকে ‘ক্রসফায়ার’-এ হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। থানার পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে মামলাটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টারও অভিযোগ করা হয়।

মামলার ধারা ও প্রার্থনা

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১০৯/৩২৩/৩২৫/৩০২/৩২৬/৩৮৪/৪৪৯/২০১/৩৪/৫০৬(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাদী আদালতের কাছে ওয়ারেন্ট ইস্যু ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।