যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার মূল নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
কীভাবে ঘটল ঘটনা?
আদালত সূত্র জানায়, মামলা নম্বর এসসি-১৬৬৯/২০১৮ এর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২২ জুন দিন ধার্য ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। বিচারক নথিপত্র পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে দেখতে পান, মূল নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই।
বিচারক তখন ওপেন এজলাসে বিষয়টি উত্থাপন করলে বেঞ্চ সহকারী জানান, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়ে কিছু তথ্য লিখে নিয়েছিলেন এবং পরে নথি ফেরত দেন।
কিন্তু আইনজীবী দাবি করেন, তিনি শুধু চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন এবং এজাহার সংক্রান্ত কিছু জানেন না।
ঘটনাটি জানাজানি হলে আদালতে উত্তেজনা তৈরি হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে উপস্থিত হন।
বিচারক পরবর্তী শুনানির তারিখ ১৩ আগস্ট নির্ধারণ করেন এবং দুইজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।
কে কী বললেন?
-
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। তিনি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করেননি বলে মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে আইনজীবী কিংবা আইনজীবী সহকারীর মাধ্যমে এমন কোনো ঘটনা ঘটতে পারে বলে মন্তব্য করেন।
-
আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল বলেন, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
-
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম.এ. গফুর বলেন, ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।
মামলার প্রভাব ও গুরুত্ব
আদালত ও আইনজীবী মহলের সূত্র মতে, যদিও এজাহারের মূল কপি নিখোঁজ হওয়াটা অস্বাভাবিক এবং তদন্তযোগ্য, তবে এটি মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে না। কারণ রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে এজাহারের ফটোকপি সংরক্ষিত থাকে এবং অন্যান্য মাধ্যমেও তা পাওয়া সম্ভব। তবে, আদালতের মূল নথিপত্রে এমন অনিয়ম স্বচ্ছ বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা নষ্ট করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।