📌 সংক্ষেপে:
-
রিপোর্টে গুম ও স্বীকারোক্তিমূলক নির্যাতনের ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে
-
বিচারব্যবস্থা, নাগরিক অধিকার ও প্রমাণ সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়েছে
-
স্বীকারোক্তির নামে সাজানো মামলা দিয়ে বিরোধীদের দমন করা হয়েছে
-
চার্জশিট দুর্বল হলে পুরো বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়ে
-
জবাবদিহির কাঠামো গড়ে তোলার সুপারিশ দিয়েছে কমিশন
বাংলাদেশে গুম, নির্যাতন ও জোরপূর্বক স্বীকারোক্তির সংস্কৃতি বিচারব্যবস্থা ও নাগরিক জীবনের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত গুমবিষয়ক কমিশন।
কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুমের শিকার ব্যক্তিদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের লক্ষ্যে বারবার চালানো হতো নির্মম নির্যাতন, যা ব্যক্তি, পরিবার এবং দেশের বিচারিক কাঠামোকে ভেঙে দিয়েছে।
নির্যাতন ও স্বীকারোক্তির রাজনৈতিক অপব্যবহার
প্রতিবেদনে বলা হয়, অতীত সরকারের আমলে গুম-নির্যাতন ব্যক্তিজীবনের গভীরে ঢুকে পড়েছিল, যা মানুষের নিজ ঘরের নিরাপত্তাবোধও ধ্বংস করে দিয়েছিল। ‘বহুল ব্যবহৃত, স্ক্রিপ্ট-মাফিক স্বীকারোক্তি’ শুধু দোষী সাব্যস্ত করার অস্ত্রে পরিণত হয়েছিল, সত্য উদঘাটনের নয়।
বিচারব্যবস্থার ভারসাম্যহীনতা
কমিশনের মতে, এসব স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মামলা পরিচালনায় প্রমাণ সংগ্রহ, সাক্ষ্য, কিংবা জবাবদিহির প্রয়োজনীয়তা এড়িয়ে যাওয়া হতো। এতে বিচারিক ভারসাম্য ভেঙে পড়ে, এমনকি বেআইনি আটক, নির্যাতন ও আইনজীবীর অনুপস্থিতির মাঝেও স্বীকারোক্তিকেই চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও ভয়ভীতি
কমিশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার স্বরব নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক, বিরোধী আইনজীবী, লেখক ও শ্রমিক নেতাদের দমন করতে বিচারব্যবস্থা ও নিরাপত্তা সংস্থাকে ব্যবহার করেছে।
এসব অপারেশন নির্বাচনের সময়েই বেশি হতো, যা প্রমাণ করে রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনই মূল লক্ষ্য ছিল।
চার্জশিট দুর্বল হলে বিচারও দুর্বল
প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি ফৌজদারি মামলার ভিত্তি হলো চার্জশিট। তদন্ত যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তবে ন্যায়বিচারের কোনো সুযোগ থাকে না। একজন বিচারক হলেন আম্পায়ার—তাকে উভয় পক্ষের সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিতে হবে।
কমিশনের সুপারিশ
-
তদন্ত কর্মকর্তা, কৌঁসুলি ও বিচারকদের জবাবদিহির জন্য উপযুক্ত পর্যবেক্ষণ কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
-
দায়িত্বে অবহেলা করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
-
ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার তিনটি স্তর—তদন্ত সংস্থা, প্রসিকিউশন ও বিচার বিভাগ—এদের স্বাধীনতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।