বাংলাদেশে আইনজীবীদের আর্থিক নিরাপত্তা: কে নেবে দায়িত্ব?

বার কাউন্সিল লিখিত ২০২৫: সহজ প্রশ্ন, কঠিন বাস্তবতা!

বোরহান উদ্দিন খান শাকের : আইন পেশায় প্রবেশের সিঁড়ি, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অ্যাডভোকেটশিপ লিখিত পরীক্ষা ২০২৫ অনুষ্ঠিত হলো। প্রতিবারের মতো এবারও প্রশ্নপত্র নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া—কারো কাছে সহজ, কারো কাছে কঠিন, আবার অনেকের কাছেই “চেনা পথে অচেনা বাঁক”।

 প্রশ্নপত্র দেখে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় অনেকেই বলছেন ‘সহজ’ শব্দের আড়ালেই লুকিয়ে আছে আইনজীবী হবার পথের নির্মম বাস্তবতা। চলুন, ধাপে ধাপে বিশ্লেষণে দেখে নেওয়া যাক:

সিভিল পার্ট (CPC & SR Act)

আত্মবিশ্বাসের জয়, কিন্তু অর্ডার ১, ৬, ৭, ৯ এবং স্পেসিফিক রিলিফ অ্যাক্টের ডিক্লারেশন ও প্রিভেনটিভ রিলিফ—এই পরিচিত টপিকগুলো থেকে এসেছে প্রশ্ন। বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী এখানে পূর্ণ নম্বর তোলার আশা করছেন। তবে হলের ভেতরের চাপ, সময়ের দৌড় আর নার্ভাসনেসে সহজ প্রশ্নের উত্তরেও ঢুকে পড়েছে ভুলের ছায়া। প্রস্তুতি যারা রুটিনমাফিক নিয়েছেন, তাদের জন্য এ পার্ট ছিল আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি।

ক্রিমিনাল পার্ট (CrPC)

জিডি, এফআইআর-এর পাশাপাশি উঠে এসেছে ‘অপ্রাকৃতিক মৃত্যু (UD)’ সংক্রান্ত জটিল প্রশ্ন—যা অনেকের সিলেবাসের বাইরেই ছিল। দ্বিতীয় এফআইআর-এর টেকনিক্যাল প্রশ্নও চ্যালেঞ্জিং ছিল। জাস্টিস হামিদুল হক স্যারের গ্রন্থ যারা গভীরভাবে পড়েছেন, কেবল তারাই এখানে পূর্ণ নম্বরের আশা রাখতে পারেন। আর ৫ নম্বর প্রশ্নে ‘ড্রাফটিং’ চাওয়ায় গাইডনির্ভর শিক্ষার্থীরা হিমশিম খেয়েছেন—অনুশীলন না থাকায় ১০ নম্বরই হারিয়েছেন অনেকে।

দণ্ডবিধি (Penal Code)

৬ নম্বরে ফ্যাক্ট-ভিত্তিক দুই প্রব্লেম প্রশ্ন সহজ মনে হলেও সঠিক আইনি বিশ্লেষণে ঘাম ছুটেছে অনেকের। ৭ নম্বরে থিওরি (১০) ও প্রব্লেম (৫)—এই কম্বিনেশনে প্রস্তুত শিক্ষার্থীরা লিখে এসেছেন দেদার, কিন্তু যারা শেষ মুহূর্তে রিভিশন দিয়েছেন, তাদের উত্তর হয়েছে অসম্পূর্ণ। এখানে ‘পড়া’ আর ‘বুঝা’র পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সাক্ষ্য আইন (Evidence act)

সাক্ষ্য আইনের ৮ ও ৯ নম্বর প্রশ্নে থিওরি ও প্রব্লেমের মিশ্রণ ছিল। এই বিভাগে পরীক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স তুলনামূলক ভালো—কারণ প্র্যাকটিক্যাল কোর্ট প্র্যাকটিসে এই আইনের গুরুত্ব বেশি বলে শিক্ষার্থীরা এতে সময় দেন বেশি।

Limitation act

লিমিটেশন আক্ট এর ১০ ও ১১ নম্বর প্রশ্নের প্রব্লেম অংশও ছিল সরল। ফলে এ বিভাগে অনেকেই নিশ্চিন্তে লিখে এসেছেন। প্রস্তুতি থাকলে এখানে নম্বর তোলা কোনো ব্যাপারই নয়।

বার কাউন্সিল অর্ডার

১২ ও ১৩ নম্বর প্রশ্নে ১০ নম্বরের উত্তর লিখতে পেরেছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। সিলেবাসের এই অংশটি তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট হওয়ায় এখানে ভরসা ছিল অনেকের।

সার্বিক মূল্যায়ন: সহজ প্রশ্ন? না, প্রস্তুতির পরীক্ষা!

এবারের পরীক্ষা প্রমাণ করল প্রশ্ন সহজ নাকি কঠিন—তা নির্ধারিত হয় প্রস্তুতির গভীরতায়। যারা সিলেবাসের প্রতিটি স্তর বুঝে পড়েছেন, নোট তৈরি করেছেন, প্রব্লেম সলভ করেছেন—তাদের কাছে প্রশ্নপত্র ছিল আত্মবিশ্বাসের খাতা। আর গাইডের শর্টকাটে ভরসা করা, রাতজাগা রটনায় নির্ভরশীলদের কাছে ‘সহজ’ প্রশ্নও হয়ে উঠেছে দুর্গম পাহাড়।

শেষকথা: আইনের পথ শেখার পথ

এই পরীক্ষা শুধু পাসের জন্য নয়, বরং আইনের সেবক হওয়ার প্রথম ধাপ। প্রশ্নপত্রের ‘সহজ’ মুখোশ সরালেই দেখা যায়—আসল চ্যালেঞ্জ হলো ধারাবাহিক অধ্যবসায়, বিশ্লেষণী দক্ষতা আর আইনের প্রতি গভীর মমত্ববোধ। যারা এ পথে হাঁটছেন, তাদের জন্য রইল শুভকামনা। মনে রাখবেন, আইনজীবী হওয়ার যাত্রাপথ জ্ঞানার্জনের এক অন্তহীন অভিযাত্রা।

লেখক: বোরহান উদ্দিন খান শাকের; আডভোকেট, জজ কোর্ট, ফেনী। মেইল: advborhan24@gmail.com