শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান
শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান

কাজী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ও তার কারাজীবন

শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান : গণমানুষের মুক্তিরসংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের কারণে পৃথিবীতে যে কজন কবি কায়েমি শোষকদের অধীনে কারানির্যাতন ভোগ করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম তাদের অন্যতম। ১৯২২ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর কাজী নজরুল সম্পাদিত অর্ধ-সাপ্তাহিক ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার দ্বাদশ সংখ্যায় তার লেখা ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ ৭৯ পঙ্তির একটি দীর্ঘ প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক কবিতা ও ২০শে অক্টোবর পঞ্চদশ সংখ্যায় ১১ বছরের ছোট মেয়ে শ্রীলীলা মিত্রের লেখা ‘বিদ্রোহীর কৈফিয়ৎ’ প্রকাশিত হয়। এই দুটি লেখায় ব্রিটিশ রাজ সরকারের মর্যাদাকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগে ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার উক্ত দুটি সংখ্যা বাজেয়াপ্তসহ পত্রিকার সম্পাদক কাজী নজরুল ও প্রকাশক এবং মুদ্রাকর হিসেবে মুহাম্মদ আফজালুল হক-এর বিরুদ্ধে সমকালে প্রচলিত ভারতীয় দণ্ডবিধি, ১৮৬০ আইনের ১২৪ক ও ১৫৩ক এই দুটি ধারার অভিযোগে কলকাতা চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়।

এ ধরনের মামলা করার জন্য উক্ত আইনে আগে সরকারের অনুমতির নেওয়ার বিধান রয়েছে। কাজী নজরুল ইসলাম ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার আগে তদানীন্তন ভারতের ভাইসরয় কিংবা বাংলা সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে এই মামলা করা হয়েছিল। এই মামলায় ১৯২২ সালের ৮ই নভেম্বর মুহাম্মদ আফজালুল হককে কলকাতা এবং ২৩শে নভেম্বর কাজী নজরুলকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়। মুহাম্মদ আফজালুল হক কিছুদিন প্রেসিডেন্সী জেলে হাজতি হিসেবে থাকেন। পরে তাঁর আত্মীয় তদানীন্তন বিশিষ্ট উকিল মুহম্মদ আজিজুল হকের (১৮৯২-১৯৪৭) সাহায্যে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা ও অঙ্গীকার করে জামিনে মুক্তি লাভ এবং পরবর্তীকালে চূড়ান্তভাবে মামলা থেকে অব্যহতি লাভ করেছিলেন।

১৯২২ সালের ২৫শে নভেম্বর কলকাতার চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে কাজী নজরুলকে হাজির করা হলে ২৯শে নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য করা হয়। ১৯২২ সালের ২৯শে নভেম্বর মাত্র একটি দিন শুনানি করে অতি সংক্ষিপ্ত বিচারে কাজী নজরুলের এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে ১৯২৩ সালের ১৬ই জানুয়ারি কলকাতা চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট মি. সুইন হো রায় প্রদান করে। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে তিনি আপিল করেননি। তিনি কারাজীবনের দিনগুলো প্রেসিডেন্সি জেল, আলিপুর সেন্ট্রাল জেল, হুগলি জেল ও বহরমপুর জেলে অতিবাহিত করেন।

এই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার পূর্বাপর ইতিহাস পাঠে জানা যায়, পুরো ইংরেজ শাসনামলই ছিল উপমহাদেশের মানুষের জন্য সংকটময় এক দুঃসময়। যদিও তারা নিজেদের ক্ষমতাকে এক চেটিয়া করার জন্য ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইন ও শাসন কাঠামোর বিন্যাস, ইংরেজি শিক্ষাবিস্তার, রেলপথ নির্মাণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, সমাজ সংস্কারমূলক কাজ ইত্যাদি কল্যাণসাধন করলেও তাদের নিষ্ঠুর শাসন ও শোষণ আজও কালের সাক্ষ্য হয়ে রয়েছে। কাজী নজরুলের সমকালে গোটা ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল এক বিক্ষুব্ধ সময়। এ সময় রাজনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাপক বিপর্যয় ঘটে। এর কারণ আর কিছু নয়, ইংরেজ সরকারের শাসন, শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন। ভারতবর্ষে এ সময়ে যে অগ্নিমূর্তি ধারণ করেছিল বঙ্গভঙ্গের (১৯০৫) সময়েও তা হয়নি। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। এই অগ্নিযুগের চালচিত্র ঔপনিবেশিক দলিলপত্রে প্রমাণ পাওয়া যায়। উত্তাল এ সময়ে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক পরিস্থিতির তালিকায় রয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর (১৯১৪-১৯১৮) ভারতবর্ষে প্রভাব, খিলাফত আন্দোলন (১৯১৮-১৯২০), অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-১৯২২), রাওলাট আইন, ১৯১৯; ভারত শাসন আইন, ১৯১৯; জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ড (১৩ই এপ্রিল, ১৯১৯), চৌরিচৌরার ঘটনা (৪ঠা ফেব্রুয়ারি ১৯২২) ইত্যাদি।

দেশ ও জাতির রাজনৈতিক পরাধীনতা, আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক এই ঘটনাবলি কাজী নজরুল-মানসকে গভীরভাবে আলোড়িত করে। পরাধীন ভারতবর্ষের রাজনীতির এই টালমাটাল সময়ে তিনি সদ্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক জীবন থেকে দেশে ফিরে আসার পর সাংবাদিকতায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ছিলেন সক্রিয় জাতীয়তাবাদী প্রত্যয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ একজন রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি। কাজী নজরুল কিশোর বয়স থেকে জীবনের প্রত্যেকটি পর্যায়ে দারিদ্র্য, সামাজিক প্রতিকূলতা, পরাধীনতা, অত্যাচার, নির্যাতন, শোষণ, বঞ্চনা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বেড়ে উঠেছেন। বিদ্রোহ ও সংগ্রামী জীবন তাঁর ধমনিতে মিশে ছিল গভীর একাত্মতায়।

২.

১৯১৭ সালে কবি নজরুল শিয়ারশোল রাজ হাইস্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় ব্রিটিশের হয়ে সৈনিক হিসেবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিতে করাচিতে গিয়েছিলেন। সাদা চোখে ব্রিটিশ সরকারকে সন্তুষ্ট করে ভিতরে ভিতরে যুদ্ধবিদ্যা শিখে দেশের স্বাধিকার আন্দোলনে কাজে লাগাবেন, সশস্ত্র সংগ্রামের পক্ষে কাজ করবেন এই উদ্দ্যেশ্যই তিনি যুদ্ধে গিয়েছিলেন। ব্রিটিশরা বিশ্বযুদ্ধচলাকালীন যুদ্ধের অজুহাতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ, খাদ্য, অর্থ ও অন্যান্য সরঞ্জাম ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটেনে নিয়ে যায়। বিশ্বযুদ্ধের সময় ইংরেজ সরকার স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতির শর্তে ভারতবাসীর সাহায্য ও সহযোগিতা পেয়েছিল। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধ শেষে ব্রিটিশরা চিরাচরিত শঠতার আশ্রয় নিলেন। ব্রিটিশরা রাজনৈতিক ক্ষমতার দ্বন্দ্বে মুসলমানদের খেলাফত অর্থাৎ ধর্মজগতে মুসলমানদের এক জাতীয়তা ভাঙনে লিপ্ত হলেন। ভারতীয় দণ্ডবিধি, ১৮৬০ আইনে দেশদ্রোহিতার ধারা ১২৪-ক ও ১৫৩-ক যুক্ত করে তা লঙ্ঘনের দায়ে শত শত রাজনীতিবিদকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে অভিযুক্ত করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়।

ব্রিটিশ সরকার রাওলাট নামক কালো আইনের শৃঙ্খলে মুক্তিকামী হাজার হাজার জাতীয়তাবাদী নেতা-কর্মীকে স্বাধীনতা হরণ করে বিনা বিচারে কারাগারে অন্তরীণ করলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামী আইনজীবীদের কারও কারও বার সনদ তুলে নেয়া হলো। মিছিল, মিটিং, পত্রিকার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হলো। অসংখ্য পত্রপত্রিকা নিষিদ্ধ এবং শত শত বিপ্লবীকে কারারুদ্ধ করা হয়।। স্বাধীনতাকামী সাধারণ জনগণ হরতাল, সভা, বিক্ষোভ, শোভাযাত্রা করে সারা ভারতবর্ষ কাঁপিয়ে তুলল। আন্দোলন অহিংসার পথ ধরে না চলে সহিংস হতে লাগল। ব্রিটিশ সরকার আন্দোলন দমন করতে অত্যন্ত নিষ্ঠুর আচরণ শুরু করল। এই সংঘাত ও সংঘর্ষের চূড়ান্ত পরিণাম পাঞ্জাবের অমৃতসরে জালিয়ানওয়ালাবাগে ইংরেজ সৈন্যরা নিরীহ জনগণের ওপর নৃশংস হত্যাকাণ্ড (১৩ই এপ্রিল ১৯১৯) চালাল। এরই প্রতিবাদে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) নাইটহুড উপাধি বর্জন করলেন।

৩.

তারুণ্যের প্রতীক কাজী নজরুল ইসলাম ৪৯নং বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্যারাক থেকে ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচার নির্যাতনের সব খবরই জানতেন। এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক রাজনীতির সর্বশেষ পরিস্থিতির সম্পর্কে খবর রাখতেন। এজন্য করাচীর সেনানিবাসে অবস্থানকাল থেকেই ব্রিটিশ সরকারের গোয়েন্দাবাহিনী তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখে এসেছিল। সান্ধ্য দৈনিক ‘নবযুগ’ (১৯২০) পত্রিকায় কর্মরত থাকাকালে কাজী নজরুলের সম্পাদকীয় প্রবন্ধগুলো পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গণমানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল। এই প্রবন্ধসমূহে তিনি রুশ বিপ্লব, আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা সংগ্রাম, সামন্ততান্ত্রিক শৃঙ্খলমুক্ত নতুন তুরস্ক এবং পরাধীন ভারতের মুক্তির সংগ্রামকে এক সূত্রে গ্রথিত করেছিলেন। ফলে অসহযোগ আন্দোলন ও খিলাফত আন্দোলন বিপুল গতি সঞ্চার করেছিল। নবযুগে প্রকাশিত কাজী নজরুলের সম্পাদকীয় প্রবন্ধের কারণে পত্রিকা ডিক্লারেশনের জন্য জমা করা জামানত এক হাজার টাকা ব্রিটিশ ভারত সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিল এবং কাজী নজরুলকে সতর্ক করা হয়। ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ তাঁর লেখালেখি বিষয়ে ফাইল খুলে গোয়েন্দা নজরদারি করত।

যুদ্ধফেরত সৈনিক কাজী নজরুল সরকারি চাকরি কিংবা অন্যকোনো জীবিকার দিকে না তাকিয়ে নিজেকে দেশের জন্য, দেশের স্বাধীনতার জন্য, মুক্তিকামী মানুষের জন্য উৎসর্গ করলেন। তার মনে ব্রিটিশবিরোধী চেতনা ঝড়ের গতি পেল। জাতির প্রতি দায়বদ্ধতায় কবি এ-সময় নিজের ইচ্ছানুযায়ী পত্রিকায় লেখালেখির সুযোগ না পেয়ে, সেই সুযোগ তৈরি করার জন্য নিজ উদ্যোগে অর্ধ সাপ্তাহিক ‘ধূমকেতু পত্রিকা প্রকাশ করলেন।

    ধূমকেতু পত্রিকা

‘ধূমকেতু’ নামটি কাজী নজরুলের দেওয়া। পত্রিকাটির সম্পাদক স্বয়ং কাজী নজরুল ইসলাম, যিনি নিজেকে সম্পাদক না লিখে ‘সারথি’ বলে উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্য, সমকালে পত্রিকার নাম সওগাত, মোহাম্মদী, ছোলতান প্রভৃতি ইসলামি শব্দ দিয়ে হতো। এ ক্ষেত্রে ‘ধূমকেতু’ নামটিও ব্যতিক্রম।

৪.

বিপ্লবীদের মুখপত্র খ্যাত ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা ১১ই আগস্ট ১৯২২ (১৩২৯ বঙ্গাব্দে ২৬শে শ্রাবণ) সালে প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকার উদ্দেশ্যই ছিল বিপ্লব, কৃষক-মজদূর ও নিম্নমধ্যবিত্তের জাগৃতি এবং ইংরেজ সরকারের সরাসরি বিরুদ্ধাচরণ। পরাধীন ভারতবর্ষে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর মধ্যে ‘ধূমকেতু’ ছিল সম্পূর্ণরূপে ব্যতিক্রম। বিপ্লবীদের মধ্যে এ পত্রিকার প্রবল প্রভাব ছিল। এ পত্রিকা সম্বন্ধে ব্রিটিশ সরকারের গোয়েন্দা অভিমত ছিল-(Dhamketu) “Started from 11th August, 1922. Preches emancipation from all restrains-Political, Social or religions, Independent in tone.”

কাজী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ‘ধুমকেতু মামলা’ বুঝতে হলে তার সম্পাদিত ‘ধূমকেতু’ পত্রিকাকে সর্বাগ্রে বুঝতে হবে। ‘ধূমকেতু’র গদ্য, বিশেষ করে সম্পাদকীয়র ভাষা ছিল তীব্র জ্বালাময়ী। ‘কালির বদলে রক্তে ডুবিয়ে লেখা’ হতো-এর সম্পাদকীয় প্রবন্ধগুলো। তার সম্পাদকীয়র একটি নমুনা :

‘…সর্বপ্রথম ধূমকেতু ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়। স্বরাজটরাজ মানি না। কেননা ও কথাটার মানে এক এক মহারথী এক এক রকম করে থাকেন। ভারতবর্ষের এক পরমাণু অংশও বিদেশির অধীনে থাকবে না। যারা এখন রাজা বা শাসক হয়ে এ দেশে মোড়লি করে দেশকে শ্মশানভূমিতে পরিণত করছেন, তাদের পাততাড়ি গুটিয়ে, বোঁচকা-পুঁটলি বেঁধে সাগরপারে পাড়ি দিতে হবে।’

উল্লেখ্য, সমকালে স্বাধীনতার দাবি করা ছিল ফৌজদারি অপরাধ। এ কারণে জাতীয়তাবাদী নেতাগণ হোমরুল, স্বরাজ, স্বায়ত্বশাসন প্রভৃতি প্রত্যয় ব্যবহার করতেন।

৫.

১৯২২ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বরে (৯ই আশ্বিন ১৩২৯) ‘ধূমকেতু’র ১২তম সংখ্যায় কাজী নজরুল রচিত ৭৯ পঙ্ক্তির ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ এবং ২০শে অক্টোবর ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার ১৫শ সংখ্যায় ১১ বছরের ছোট মেয়ে লীলা মিত্রের (অধ্যাপক সাতকড়ি মিত্রের বোন) ‘বিদ্রোহীর কৈফিয়ৎ’ প্রকাশিত হলে কবি ব্রিটিশ সরকারের রাজরোষে পড়েন। ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ১২৪ক ও ১৫৩ক এই দুটি ধারায় অভিযোগে কাজী নজরুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করে। এ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা বের হয়। গ্রেফতারি পরোয়ানার খবরে কেউ কেউ কাজী নজরুলকে গা-ঢাকা দিতে পরামর্শ দেন। তদানীন্তন কমিউনিস্ট ইন্টার-ন্যাশনালের পক্ষে তাঁকে ইউরোপে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলো। কাজী নজরুল বিদেশে যাওয়ার প্রস্তাবে রাজি হননি। কাজী নজরুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলাটি সমকালে ‘ধূমকেতু মামলা’ নামে বিখ্যাত।

সেই সময়ে ভারতবর্ষে ইংল্যান্ডের রাজার নামে শাসন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত ছিল। সেই হিসেবে মামলার ফরিয়াদি ছিলেন স্বয়ং রাষ্ট্র বা রাজা। এজন্য সমসাময়িককালে রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের হওয়া ফৌজদারি মামলা ব্রিটিশ ভারত সম্রাট বনাম আসামী পক্ষের নাম থাকলেও কোনো কোনো মামলা ঘটনার নামে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিল। যেমন-The Emperor Vs Aurobindo Gosh and others, যা ইতিহাসে Alipore Bomb Case নামেই বেশি পরিচিতি লাভ করেছিল। আরও একটি বিখ্যাত মামলা The Emperor Vs Khudiram Bose-এর চেয়ে ক্ষুদিরামের মামলা নামে সমধিক পরিচিত ছিল। কাজী নজরুলের নামে দায়েরকৃত মামলাটির সঠিক নাম পাওয়া না গেলেও এ মামলাটি ‘ধূমকেতু’র মামলা কিংবা The Emperor Vs Kazi Nazrul Islam And Others নামে পরিচিতি।

কাজী নজরুল তাঁর ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে তিনি ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে মুখোমুখি অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। এ কবিতায় তিনি ইঙ্গিতে সমকালীন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অবস্থা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ব্রিটিশবিরোধী ভূমিকার গোটা চিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন। কাজী নজরুল তাঁর দীর্ঘ দিনের লালিত ক্ষোভ, ব্যথা, একই সঙ্গে ভারতবর্ষের রাজনীতি, ইংরেজ শক্তির দানবীয় রূপ, স্বাধীন ভারতের আকাঙক্ষা ইত্যাদি প্রত্যয় এ কবিতায় রূপক অর্থে প্রকাশ করলেন। গান্ধী, অরবিন্দ, চিত্তরঞ্জন, সুরেন্দ্রনাথ, বারীন্দ্রকুমার, পুলিনবিহারীসহ ছোট–-বড় অনেক নেতার নাম এ কবিতায় এসেছে। রবীন্দ্রনাথের কথাও এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, যে রবীন্দ্রনাথ জনসাধারণের মধ্যে চৈতন্যের শিখা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এ কবিতার প্রথম স্তবকেই কাজী নজরুল তীব্র শ্লেষ, তির্যক বিদ্রূপাত্মক ভঙ্গি ও জিজ্ঞাসু কণ্ঠে লিখেন :

আর কতকাল থাকবি বেটী মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল?

স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি-চাঁড়াল।

দেব-শিশুদের র্মাছে চাবুক, বীর যুবাদের দিচ্ছে ফাঁসি,

ভূ-ভারত আজ কসাইখানা, আসবি কখন সর্বনাশী?

দেব-সেনা আজ টানছে ঘানি তেপান্তরের দ্বীপান্তরে,

রণাঙ্গনে নাম্বে কে আর তুই না এলে কৃপাণ ধ’রে?

বিষ্ণু নিজে বন্দী আজি ছয়-বছরী ফন্দি-কারায়,

চক্র তাঁহার চরকা বুঝি ভণ্ড-হাতে শক্তি হারায়।

মহেশ্বর আজ সিন্দু-তীরে যোগাসনে মগ্ন ধ্যানে

অরবিন্দ-চিত্ত তাঁহার ফুটবে কখন কে সে জানে!

সদ্য অসুর-গ্রাসচ্যুত ব্রহ্মা চিত্তরঞ্জনে হায়

কমণ্ডলুর শান্তি-বারি সিঞ্চি যেন চাঁদ নদীয়ায়।

সুরেন্দ্র আজ মন্ত্রণা দেন দানব রাজার অত্যাচারে,

দম্ভ তাঁহার দম্ভোলি ভীম বিকিয়ে দিয়ে পাঁচ হাজারে।

রবির শিখা ছড়িয়ে পড়ে দিক হতে আজ দিগন্তরে,

সে কর শুধু পশল না মা অন্ধকারার বন্ধ ঘরে।

গগন-পথে রবি-রথের সাত সারথি হাঁকায়-ঘোড়া,

মর্ত্তে দানব মানব-পিঠে সও্য়ার হয়ে মারছে কোঁড়া।

বারী-ইন্দ্র বরুণ আজি করুণ সুরে বংশী বাজায়,

বুড়ি-গঙ্গার পুলিন বুকে বাঁধছে ঘাঁটি দস্যু-রাজায়।

এ কবিতায় সমকালের কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম এসেছে পুরাণের প্রতীকরূপে। যেমনÑ গান্ধী = বিষ্ণু, অরবিন্দ = মহেশ্বর, চিত্তরঞ্জন =ব্রহ্ম, সুরেন্দ্রনাথ = সুরেন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ = রবি, বারীন্দ্র =বরুণ ইত্যাদি প্রতীকে। ১৯২২ সালের ৮ই নভেম্বর কাজী নজরুলের বিরুদ্ধে রুজ্জুকৃত মামলায় তাঁকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ একই সাথে ধূমকেতু অফিস ও ছাপাখানাসহ সম্ভাব্য সকল জায়গায় তল্লাসি করে। তাঁকে না পেয়ে পত্রিকার ১২শ ও ১৫শ সংখ্যার যে কয়টি কপি পায় তা জব্দ করে এবং বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির বাড়ি থেকে ‘ধূমকেতু’র মুদ্রাকর ও প্রকাশক মুহম্মদ আফ্জালুল হককে গ্রেফতার করে। তিনি কিছুদিন প্রেসিডেন্সী জেলে হাজতি হিসেবে থাকেন। পরে তাঁর আত্মীয় তদানীন্তন বিশিষ্ট উকিল মুহম্মদ আজিজুল হকের (১৮৯২-১৯৪৭) সাহায্যে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা ও অঙ্গীকার করে জামিনে মুক্তি লাভ করেছিলেন।

৬.

আফ্জালুল হকের জামিন লাভের কিছুদিন পরই ১৯২২ সালের ২৩শে নভেম্বর কুমিল্লা থেকে কাজী নজরুলকে গ্রেফতার করা হয়। ঐদিনই তাঁর সদ্য প্রকাশিত প্রবন্ধের বই ‘যুগবাণী’ ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ৯৯ক ধারানুসারে বাজেয়াপ্ত করা হয়। কুমিল্লায় গ্রেফতারের দিনই তাঁকে চাটগাঁ মেইল ট্রেনে কলকাতা এনে মামলার বিচার কাজ শুরু করা হয়। ১৯২২ সালের ২৫শে নভেম্বর কলকাতার চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ‘ধূমকেতু মামলা’য় তাকে চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট ইংরেজ কবি সুইন হো’র আদালতে হাজির করা হলে ২৯শে নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য করা হয়। সমকালে কলকাতার চিফ প্রেসিডেন্সী কোর্টকে (বর্তমানে মেট্রোপলিটন সেশন কোর্ট বা নগর দায়রা জজ আদালত) পুলিশ কোর্ট বলা হতো।

তখন কলকাতার লাল বাজারের ব্যাঙ্কশালে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ভবনে এ আদালত ছিল। এজন্য এ কোর্টকে কখনো কখনো ব্যাঙ্কশাল কোর্টও বলা হতো। রাষ্ট্রের পক্ষে ভয়ংকর ও বিপজ্জনক বলে কাজী নজরুলকে চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জামিন দিতে অস্বীকার করে এবং তাকে বিচারাধীন বন্দি হিসেবে প্রেসিডেন্সী জেলে প্রেরণ করা হয়। সমকালে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ধারার অপরাধের বিচার চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের এখতিয়ার ছিল। তখন বিচারিক কার্য সম্পাদনের জন্য কোনো পৃথক ম্যাজিস্ট্রেট ছিল না। রাষ্ট্রের নির্বাহীরা নির্বাহী প্রকৃতির কাজ সম্পাদন ছাড়াও বিচারিক কাজ সম্পাদন করতেন। কোর্টে কাজী নজরুলের পক্ষ সমর্থনে বেশ কয়েকজন সাহসী আইনজীবী বিনা পারিশ্রমিকে এগিয়ে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে মলিন মুখোপাধ্যায় অন্যতম।

অসহযোগ-খিলাফত আন্দোলনের যুগে নীতিগতভাবেই বিচারাধীন বন্দিগণ আত্মপক্ষ সমর্থন করতেন না। কাজী নজরুল ব্রিটিশ শাসন-শোষণ-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। তাঁর মামলাটিও ঠিক একইভাবে চলেছিল। ধূমকেতু মামলায় কাজী নজরুলকে দণ্ডাদেশ প্রদান করতে সাক্ষী-সাবুদের দরকার পড়েনি। এই মামলায় জামিনে থাকা ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার প্রকাশক ও মুদ্রাকর মুহম্মদ আফ্জালুল হক রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাপ্রুভার সাক্ষী হয়ে কাজী নজরুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।

বিচারের সময় কাজী নজরুল আত্মপক্ষ সমর্থন করে যে বিবৃতি দেন, তা ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ নামে খ্যাত। এ জবানবন্দিতে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন বলতে নিজের কৃতকর্মের দায়িত্ব অস্বীকার করেননি; বরং তিনি যা করেছেন ঠিকই করেছেন। বিচারক সুইনহো যে একজন কবি ছিলেন সেটি কাজী নজরুল ইসলাম জানতেন। তাই জবানবন্দিতে কবি কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ‘শুনেছি, আমার বিচারক একজন কবি। শুনে আনন্দিত হয়েছি। বিদ্রোহী কবির বিচার বিচারক কবির নিকট। কিন্তু বেলা শেষের শেষ খেয়া এ প্রবীণ বিচারককে হাতছানি দিচ্ছে, আর রক্তঊষার নবশঙ্খ আমার অনাগত বিপুলতাকে অভ্যর্থনা করছে; তাকে ডাকছে মরণ, আমায় ডাকছে জীবন; তাই আমাদের উভয়ের অসত্ম-তারা আর উদয় তারার মিলন হবে কিনা বলতে পারি না।

…আজ ভারত পরাধীন। তার অধিবাসীবৃন্দ দাস। এটা নির্জলা সত্য। কিন্তু দাসকে দাস বললে, অন্যায়কে অন্যায় বললে এ রাজত্বে তা হবে রাজদ্রোহ। এ তো ন্যায়ের শাসন হতে পারে না। এই যে জোর করে সত্যকে মিথ্যা, অন্যায়কে ন্যায়, দিনকে রাত বলানো একি সত্য সহ্য করতে পারে? এ শাসন কি চিরস্থায়ী হতে পারে? এতদিন হয়েছিল, হয়ত সত্য উদাসীন ছিল বলে। কিন্তু আজ সত্য জেগেছে, তা চক্ষুষ্মান জাগ্রত-আত্মা মাত্রই বিশেষরূপে জানতে পেরেছে। এই অন্যায় শাসনক্লিষ্ট বন্দী সত্যের পীড়িত ক্রন্দন আমার কণ্ঠে ফুটে উঠেছিল বলেই কি আমি রাজদ্রোহী?’

এই জবানবন্দি তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি জেলে ১৯২৩ সালের ৭ই জানুয়ারি রচনা করেছিলেন। তাঁর এই বিপ্লবী জবানবন্দিটি আদালতে গৃহীত হয়নি।

৭.

১৯২৩ সালের ১৬ই জানুয়ারি কলকাতার চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহো এক প্রহসনমূলক ধূমকেতু মামলার রায় দেন। এ মামলায় কাজী নজরুলকে তিনি এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করেন। বিচারক কবি সুইন হো ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের নিমক হালাল ও আজ্ঞাবহ। তিনি কাজী নজরুলকে আত্মপক্ষের সুযোগ না দিয়ে একটি শুনানি করে অতি সংক্ষিপ্ত বিচারে ‘ধূমকেতু’ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার বিচারিক কাজ শেষ করেন। ফৌজদারি মামলায় প্রতিষ্ঠিত নীতি হলো অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা ও পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বিচারিক কাজ সম্পাদন করা।

‘ধূমকেতু  মামলা’য় তার প্রতিফলন হয়নি। কাজী নজরুল আত্মপক্ষ সমর্থন করে এই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেননি। সেকালে কলকাতা চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেটের প্রদত্ত রাষ্ট্রদ্রোহ ধারার অপরাধের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে আপিল করা যেত। এক্ষেত্রে হাইকোর্টের রায় ও আদেশ কোর্ট অব রেকর্ড হিসেবে থাকত এবং ল’ জার্নালে ছাপা হতো। এ মামলার আপিল না হওয়ায় মামলার মূল রায় ও আদেশ পাওয়া যায় না। ‘ধূমকেতু মামলা’টি হাইকোর্টে আপিল না হওয়ায় চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের নিষ্পত্তিকৃত রায় নিম্ন আদালতের বিধানুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরে নথি ধ্বংস করা হয়। তাছাড়া আদালত, জেল খানার স্থান, বিচারকের পদ-পদবি, বিচার বিভাগের বিচারিক প্রক্রিয়ার ধাপ ইত্যাদি প্রভূত পরিবর্তন হয়েছে। সঙ্গত কারণেই সেই সময়ে এ মামলার বিচারের রায়ের নথিপত্র বা কপি পাওয়া সম্ভব নয়। তবে যে কয়টি ধারা অনুযায়ী তিনি দণ্ডিত হয়েছেনÑসেই তত্ত্বের আইনি ব্যাখ্যা করা যায়।

চিফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে বিশেষ শ্রেণির কয়েদি মর্যাদায় দণ্ডিত কারাবন্দি হিসেবে কাজী নজরুলকে পুলিশের গাড়িতে করে প্রেসিডেন্সী জেলে নিয়ে আসা হয়। তিনি এ জেলে ১৯২২ সালের ২৪শে নভেম্বর থেকে ১৫ই জানুয়ারি ১৯২৩ পর্যন্ত বিচারাধীন রাজবন্দি ছিলেন। ১৬ই জানুয়ারি বিচার প্রক্রিয়া শেষে তাঁর দণ্ড হলে দণ্ডিত রাজবন্দিদের ক্ষেত্রে কারাগারের আলাদা নিয়ম ছিল। জেলের সেই নিয়মানুযায়ী কলকাতার নির্দিষ্ট এলাকার আওতাধীন ফৌজদারি মামলার দণ্ডিত রাজবন্দিদের আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে পাঠানোর নিয়ম ছিল। পরে কারাবিধি অনুযায়ী দণ্ডিত ব্যক্তিকে আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে সময়মতো অন্য জেলে বদলি করা হতো। কাজী নজরুলের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছিল। তাকে দণ্ডিত রাজবন্দি হিসেবে প্রেসিডেন্সী জেল থেকে ১৯২৩ সালের ১৮ই জানুয়ারি সকাল বেলা বিশেষ শ্রেণির কয়েদির মর্যাদা প্রদান করে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে স্থানান্তর করা হয়।

উল্লেখ্য, বর্তমানে ভারতে কারাগারগুলো ১৯৯২ সালের এক আইন অনুযায়ী যা ১৯৯৭ সালে কার্যকরের মাধ্যমে সংশোধনাগার (Correctional Home) নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে কাজী নজরুল বিশেষ শ্রেণির কয়েদির মর্যাদার ব্যবহার পেয়েছিলেন। জেলের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, জেল পুলিশ, কারারক্ষী, সহকয়েদি-বন্দি সকলেই তাঁর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছিলেন। তিনি এখানে বাড়ির মতো পোশাক, প্লেট, গ্লাস, টেবিল-চেয়ার পেয়েছিলেন। তাঁকে উন্নত খাবার সরবরাহ করা হয়েছিল। তিনি চিঠিপত্র, লেখালেখি, বইপত্র-পত্রপত্রিকা পড়াশোনা ও দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর থাকার জায়গা উন্নত ও নির্দিষ্ট ছিল। মশারি-খাটসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। তিনি ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে, সেলে-সেলে ঘোরাঘুরি করতে পারতেন।

৮.

কাজী নজরুলের কারাবরণকে সারা দেশের সচেতন মানুষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখেছিল। জেলজীবনের মধ্যে তিনি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। সারা ভারতবর্ষের শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন। সমকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাঁর কারাবরণের জন্য উদ্বিগ্ন ও বিচলিত হয়েছিলেন। ১৯২৩ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সদ্য রচিত ও প্রকাশিত ‘বসন্ত’ গীতিনাট্য কাজী নজরুলকে উৎসর্গ করলেন। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে কাজী নজরুলের কারাজীবন  কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছিল। দেশে এ সময় কোনো বড়ো ধরনের আন্দোলন ছিল না। আকস্মিক বাংলা প্রাদেশিক সরকারের দণ্ডিত রাজবন্দিদের ব্যাপারে দমন-পীড়নমূলক এক কঠোর মনোভাব পেয়ে বসল। তারা ঠিক করল রাজবন্দিদের দুভাগে ভাগ করে বহরমপুর জেল ও কুখ্যাত হুগলি জেলে রাখা হবে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ রাজবন্দিকে সাধারণ কয়েদির পর্যায়ে নামিয়ে কুখ্যাত হুগলি জেলে প্রেরণ করা হবে, আর অল্প সংখ্যককে বিশেষ শ্রেণির কয়েদির মর্যাদায় বহরমপুর জেলে রাখা হবে।

হুগলি জেলে যাঁদের পাঠানো হলো তাঁদেরকেও মৌখিকভাবে মিথ্যা বলা হলো যে, তারা বহরমপুর জেলে যাচ্ছেন। যাওয়ার সময় তারা যেন কোনো গোলমাল করতে না পারেন এ ভয়ে জেল কর্তৃপক্ষ এই অপকৌশলের আশ্রয় নিলেন। রাজবন্দিদের গায়ে পরিধেয় পোশাক বদলানো হলো না, কিন্তু কর্তৃপক্ষের নিকট রক্ষিত তাদের প্রত্যেকের জেলের হিস্টরিসিটে লিখে দেওয়া হলো যে, এই দণ্ডিত রাজবন্দিকে সাধারণ কয়েদির পর্যায়ে নামিয়ে দেওয়া হলো। ১৯২৩ সালের ১৪ই এপ্রিল তাঁকে আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে বহরমপুর জেলে পাঠাবার নাম করে সাধারণ কয়েদি হিসেবে হুগলি জেলে স্থানান্তর করা হলো। হুগলি জেলের জেল সুপার মি. থার্সটন অত্যন্ত নির্দয় ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির তোষামোদপ্রিয় অফিসার ছিলেন। তিনি রাজবন্দিদের সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করতেন। তিনি তাদেরকে প্রতিদিন নতুন নতুন অত্যাচার-নির্যাতন চালাতেন।

পায়ে দাগী অপরাধীর মতো ডান্ডাবেড়িসহ নানারকম শৃঙ্খল, বন্ধন ইচ্ছামতো সাজার মেয়াদ বৃদ্ধি, নির্জন সেলে স্থানান্তর, পশু খাদ্যের মাড় ভাত সরবরাহ ইত্যাদি ছিল নির্যাতনের পদ্ধতি। ফলে রাজবন্দিরা জেল-জুলুমের প্রতিবাদে জেলে আইন ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেন। কাজী নজরুল হুগলি জেলের জেল সুপারের অপমান, অত্যাচার, উৎপীড়ন অসহনীয় হয়ে উঠলে আমরণ অনশন শুরু করলেন। তার অনশনের খবরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নলিনীকান্ত সরকার, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়, প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখ ব্যক্তি বিচলিত হয়েছিলেন। অনশন ভাঙতে তাকে দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গ অনুরোধ, উপরোধ করেন। জোরপূর্বক তাঁকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেও তারা ব্যর্থ হয়।

শিলং থেকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৩ সালের মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে কাজী নজরুলকে অনশন ভঙ্গ করতে টেলিগ্রাম করেছিলেন। উদ্বিগ্ন রবীন্দ্রনাথ আহ্বান জানিয়েছিলেন কাজী নজরুলকে এই বলে যে, Give up hunger strike, Our literature claims you. (অনশন ত্যাগ কর, আমাদের সাহিত্য তোমায় দাবি করে)। দুর্ভাগ্য যে টেলিগ্রামটি কাজী নজরুলের হাতে তখন পৌঁছায়নি, জেল কর্তৃপক্ষও টেলিগ্রামটি যথাস্থানে পাঠিয়ে দেননি। উল্লেখ্য, সমকালে অবিভক্ত বাংলাসহ সর্ব ভারতের পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীতে কাজী নজরুলের অনশনের খবর ছাপা হয়।

৯.

কাজী নজরুলের অনশনের বিষয়ে ১৯২৩ সালের ২১শে মে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সভাপতিত্বে কলকাতার গোলদীঘি ময়দানে এক বিরাট জনসভা হয়। সভায় সমকালের নেতৃস্থানীয় রাজনীতিক নেতা, কবি-শিল্পী-সাংবাদিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। তারা কাজী নজরুলের অনশনের জন্য সরকারকে দায়ী করলেন। কাজী নজরুলের দাবি যাতে জেল কর্তৃপক্ষ মেনে নেন সভার প্রস্তাব সরকারকে তারা তোলে ধরলেন। তবুও বিষয়টি সুরাহা হয়নি।

সমকালে অত্যন্ত সম্মাননীয় ব্যক্তি বেসরকারি জেল পরিদর্শক স্যার আবদুল্লাহ আল মামুন সোহ্রাওয়ার্দী হুগলি জেলে গিয়ে কাজী নজরুলের সঙ্গে দেখা করে অনশন ভঙ্গের অনুরোধ জানানÑতবুও তিনি অনশন ভঙ্গ করেননি। অনশন ভঙ্গের অনুরোধ জানাতে চুরুলিয়া থেকে তাঁর মা জাহেদা খাতুন এসেছিলেন তাঁর অনুরোধও রাখেননি। অনেক রাজনীতিক নেতা-বিপ্লবী-সাহিত্যিক-সাংবাদিক ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন; এদের কেউ কেউ সাক্ষাৎ করেছিলেন, কারও কারও সাক্ষাতের অনুমতি না মেলায় জেলগেট থেকে ফিরে গিয়েছিলেন।

১৯২৩ সালের ২২শে মে কাজী নজরুলের অনশনের ৩৯ দিন পূর্ণ হওয়ার দিনে কুমিল্লা থেকে এলেন কাজী নজরুলের মাতৃসমা বিরজাসুন্দরী দেবী। তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন বীরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ও পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়। কাজী নজরুলের সঙ্গে বিরজাসুন্দরী দেবীর দেখা করার আবেদন মঞ্জুর হয়। তাঁরই হস্তক্ষেপে ২৩শে মে কাজী নজরুল লেবুর রস পান করে অনশন ভঙ্গ করলেন।

অনশন ভঙ্গের পর কাজী নজরুলকে বিশেষ শ্রেণির কয়েদি হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ আসে। কিন্তু সে নির্দেশও সহসা কার্যকর হয়নি। অনশন ভঙ্গের পরে তাঁর কারাজীবন অপেক্ষাকৃত ভালো পরিবেশে থাকার কথা থাকলেও তা হয়নি, ১৯২৩ সালের ২৪শে মে অর্থাৎ অনশন ভঙ্গের পরের দিন তাঁর কক্ষের বিছানাপত্র খানাতল্লাশ করা হয়। কিন্তু অবৈধ কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। তাঁকে পড়াশোনা, লেখালেখির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। জেলের ভিতরের কথা বাইরে প্রকাশ হয়ে পড়াই তাঁর অপরাধ ছিল। ২৫শে মে তাঁকে জোর করে এক মাসের জন্য নির্জন সেলে স্থানান্তরিত করা হয় এবং জোর করে টানা ১৪ দিন একবার করে নল দিয়ে খাওয়ানো হয়েছিল। তাঁর সেল থেকে পরপর দুবার বিষাক্ত সাপ বের হয়। অনশন ভঙ্গের পরে জেলে তাঁর অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছিল এবং ওজন ২৪ পাউন্ড কমে গিয়েছিল। তাঁরপরও নিপীড়ক ইংরেজ জেল সুপার থার্সটন হুগলি জেল থেকে তাঁকে স্থানান্তর করেননি। অনশন ভঙ্গের প্রায় ২৬ দিন পার হয়ে গেলে জেল কর্তৃপক্ষ কাজী নজরুলকে হুগলি জেলে রাখলেন না। ১৯২৩ সালের ২৮শে জুন হুগলি জেল থেকে তাঁকে বহরমপুর জেলে বদলি করা হয়।

১০.

বহরমপুর জেলে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে নৈহাটি রেলওয়ে জংশন স্টেশনে কয়েদির পোশাকে কোমরে দড়ি বাঁধা অবস্থায় কাজী নজরুলকে অগণিত ভক্ত-অনুরাগী দেখেছিলেন। কাজী নজরুল মানুষের এমন ভালোবাসা দেখে অভিভূত হয়েছিলেন। বহরমপুর জেলের বন্দিরা তাঁকে অভ্যর্থনা করে বরণ করলেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জেল কর্তৃপক্ষ তাঁকে এবার বিশেষ শ্রেণির কয়েদির মর্যাদা প্রদান করে। বহরমপুর জেলের জেল সুপার বসন্ত ভৌমিকের ব্যবহার সজ্জন প্রকৃতির ছিল। রাজবন্দিদের তিনি শ্রদ্ধা ও বন্ধুর মতো ব্যবহার করতেন। জেল ওয়ার্ডারও ভালো ব্যবহার করতেন। আইন অনুযায়ী এবং নিজের সাধ্যমতো রাজবন্দিদের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করতেন। তিনি কাজী নজরুলের জন্য একটি হারমোনিয়াম সরবরাহ করেছিলেন। কাজী নজরুল হারমোনিয়াম পেয়ে খুশি হয়েছিলেন। তবে বহরমপুরে তার জেলজীবন একেবারে নিষ্কণ্টক ছিল না, তার জেলজীবন আরও বিলম্বিত করার চেষ্টা চলে। এ জেলে থাকাকালে কাজী নজরুলকে জেল আইন, ১৮৮৪-এর ৪২ ধারা ভাঙার অপরাধে বহরমপুরের সাবডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে জেল মামলায় (Jail Case) পড়তে হয়। মুক্তি আসন্নের কয়েকদিন আগে এ মামলা রুজু (ভরষবফ) করা হয়েছিল। তাঁর বিছানার নিচে থেকে কিছু চিঠি, খসড়া লেখালিখির কাগজ জব্দ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

এ পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯২৩ সালের ১০ই ডিসেম্বর মতান্তরে ১৩ই ডিসেম্বরে বহরমপুরের সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট এন কে সেনের কোর্টে তাঁকে উপস্থিত করা হয়। ঐদিন বহরমপুরের শত শত মানুষ কবির পাশে দাঁড়িয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেন। কাজী নজরুলের পক্ষ সমর্থনে বিনা পারিশ্রমিকে বহরমপুরের বাবু ব্রজভূষণ গুপ্তের নেতৃত্বে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে কয়েকজন উকিল এগিয়ে এসেছিলেন। ১৯২৪ সালের ৯ই জানুয়ারি জেল মামলার রায় ও আদেশ নিষ্পত্তির তারিখ নির্ধারিত হয়। কিন্তু সরকার  তার আগেই কাজী নজরুলের প্রতি মানুষের জাগরণ দেখে হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক জেল মামলা আর চালিয়ে নিলেন না।

১৯২৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর কাজী নজরুল কারাবিধি অনুযায়ী বহরমপুর জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন। তিনি হাজতবন্দির দিনগুলোসহ মোট ১ বছর ৮ সপ্তাহ কারাঅন্তরীণ ছিলেন। ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ৩৫ক ধারা অনুসারে কোনো আদালত একজন অভিযুক্তকে কোনো অপরাধে দণ্ডিত করেন, সেক্ষেত্রে ওই আদালত ওই অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি যতদিন জেল-হাজতে থাকবেন, ততদিন কারাদণ্ড থেকে বাদ যাবে। সাধারণত হাজতি বা বিচারাধীন বন্দি (রায় ঘোষণার আগে) জীবনের সুবিধার কথা বিচারকের রায় ও আদেশে উল্লেখ না করলেও তা মানা হয় এবং কারাদণ্ডকাল থেকে তা বাদ দেওয়া হয়। সেই হিসেবে কাজী নজরুল প্রায় ১ বছর ৫৪ দিন কারাভোগ করেছেন। অর্থাৎ ৫৪ দিন বেশি কারাভোগ করেছেন।

১১.

দীর্ঘ দুর্বিষহ কঠিন কারাদণ্ড ভোগকালেও কাজী নজরুল থেমে যাননি। তিনি কারাজীবনকে জীবনবোধের পাঠশালা মনে করতেন। তিনি কারাজীবনের অবর্ণনীয় নির্যাতন, দমন, পীড়নের মধ্যেও লেখনী ধারণ করেছিলেন। কারাবাসের সময় কবি অনেক কবিতা, প্রবন্ধ, গান রচনা ও সুরারোপ করেন যা বাংলা সাহিত্যকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি মুক্তিসংগ্রামী আপামর জনতাকে উদ্বুদ্ধ করে তুলেছে। তার ‘দোলনচাঁপা’ কাব্যগ্রন্থ জেলে থাকাকালেই প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থের বেশকটি কবিতা তিনি জেলে বসেই লিখেন। কাজী নজরুলের কারাজীবনের অধ্যায়টি তাঁর দ্রোহী কবিসত্তারই অংশ। ‘ধূমকেতু মামলা’র প্রাসঙ্গিকতা কখনো ফুরিয়ে যাবে না। যতদিন পৃথিবীতে অত্যাচার, নিপীড়ন, শোষণ, বঞ্চনা থাকবে, ততদিনই ধূমকেতু মামলা এবং তার কারাজীবনের প্রাসঙ্গিকতা থাকবে। ভৌগোলিক অর্থে এখন বাংলাদেশ-পাকিস্তান-ভারত স্বাধীন আলাদা রাষ্ট্র হলেও রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ইতিহাস একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে। সঙ্গগতকারণেই কাজী নজরুলের জীবন ও কর্ম এবং উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জানতে গেলে বোঝতে গেলে ঐতিহাসিক ‘ধূমকেতু মামলা’র পাঠ গ্রহণ করতে হবে।

(ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ-এর কাজী নজরুল ইসলাম অ্যান্ড আব্বাসউদ্দীন আহমদ রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডি সেন্টারের আয়োজনে  বিশেষ সেমিনারে পঠিত বক্তব্যের সংক্ষিপ্তরূপ।)

 লেখক : কাজী নজরুল গবেষক ও প্রাবন্ধিক