পাবনা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের চত্বর ও আশপাশে রাজনৈতিক ব্যানার, ফেস্টুন ও শুভেচ্ছা বার্তা ঝোলানোয় আদালতের পরিবেশ ও মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে—এমন উদ্বেগের প্রেক্ষিতে সরাসরি নোটিশ পাঠিয়েছে আদালতের প্রশাসনিক দফতর।
নোটিশে বলা হয়েছে, আগামী ১০ জুলাই ২০২৫-এর মধ্যে সকল রাজনৈতিক প্রচার উপকরণ অপসারণ করতে হবে, অন্যথায় আদালত নিজেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সরেজমিনে দেখা গেছে, পাবনার চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকসহ চারপাশে টানানো হয়েছে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ছবি-সংবলিত ব্যানার। কেউ অভিনন্দন জানাচ্ছেন, কেউ দলীয় দায়িত্বপ্রাপ্তির পোস্টার টাঙাচ্ছেন, আবার কেউ ভবিষ্যৎ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তবে এসব ব্যানারের কোথাও আদালতের কার্যক্রম, আইনি সেবা বা বিচারপ্রাপ্তির তথ্যের কোনও উল্লেখ নেই।
একজন প্রবীণ আইনজীবী বলেন,
আদালতের দেয়াল ন্যায়ের প্রতীক, নিরপেক্ষতার প্রতিচ্ছবি। অথচ এখানে এখন রাজনৈতিক প্রচার চলছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখিনি।
চিফ কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান,
আমরা আদালতের মর্যাদা রক্ষায় কাজ করছি। কারও সম্মান ক্ষুণ্ন না করেই ব্যানার সরানোর বিষয়ে নেতাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তারা সহযোগিতা করবেন।
পাবনা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার বলেন,
এসব ব্যানারের মধ্যে আমার ছবিও ব্যবহার হয়েছে, যদিও আমি এমন প্রচারের পক্ষে নই। অনেকেই নিজ উদ্যোগে এসব ব্যানার লাগিয়েছে। আমরা জেনেই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। আদালতের দেয়াল কোনোভাবেই রাজনৈতিক প্রচারের জায়গা হতে পারে না। আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের ব্যানার সরিয়ে নিতে বলেছি। আশা করি, আগামী ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই সব ব্যানার অপসারণ হয়ে যাবে।
সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) আশরাফুজ্জামান হালিম বলেন,
আদালত চত্বরের দেয়াল এভাবে রাজনৈতিক ব্যানারে ঢেকে যাওয়া বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এটি দৃষ্টিকটু ও অত্যন্ত অগ্রহণযোগ্য। দ্রুত এসব ব্যানার সরানো উচিত, না হলে জনগণের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে।
তিনি আরও বলেন,
একটি রাষ্ট্রের আইন ও বিচারব্যবস্থা যখন রাজনৈতিক প্রচারের আবরণে ঢাকা পড়ে যায়, তখন সেটা বিচারপ্রার্থীদের জন্য আশঙ্কাজনক বার্তা বহন করে।
দৃষ্টিকটু এই বিষয়টি নিয়ে আদালত চত্বরে আসা বিচারপ্রার্থীদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আদালতের নিরপেক্ষতা ও মর্যাদা রক্ষা করতে এবং জনগণের আস্থা অটুট রাখতে আইন ও রাজনীতির সীমানা পৃথক রাখা জরুরি। আদালতের দেওয়াল যেন ন্যায়ের প্রতীকই থাকে, রাজনৈতিক প্রচারের প্ল্যাটফর্ম না হয়—এমন প্রত্যাশাই সকলের।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন