মো. ওবাইদুল্যাহ আল মামুন সাকিব : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০০ তে বলা হয়েছে “রাজধানীতে সুপ্রীম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকিবে, তবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লইয়া প্রধান বিচারপতি সময়ে সময়ে অন্য যে স্থান বা স্থানসমূহ নির্ধারণ করিবেন, সেই স্থান বা স্থানসমূহে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইতে পারিবে”।
এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন হতে পারবে। তার মানে হলো, এটা অস্থায়ী এবং অধিবেশন অনুষ্ঠান করতে সুপ্রীম কোর্ট বাধ্য নয়। চাইলে অধিবেশন হতে পারে অথবা নাও হতে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে কী কোন হাইকোর্ট আছে? নাকি সুপ্রীম কোর্ট আছে? বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৪ অনুযায়ী, বাংলাদেশে একটি সুপ্রীম কোর্ট প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে যার দুইটা ডিভিশন থাকবে। একটি হলো আপীল বিভাগ এবং আরেকটি হলো হাইকোর্ট বিভাগ।
এই দুইয়ের সম্মিলিত আদালতই হলো বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট। ফলে, হাইকোর্টের স্থায়ী আসন বলতে যা বুঝায় সেটা মূলত বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের স্থায়ী আসন যা ১০০ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্ধারিত। এই নির্দিষ্ট অখণ্ডতাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করার কোন আইনগত অধিকার নেই।
বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১ অনুযায়ী, বাংলাদেশ একটি এককেন্দ্রিক, স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র। সুতরাং এখানে এককেন্দ্রিক কাঠামো মানে হলো বাংলাদেশের সকল কার্যক্রম একটা নির্দিষ্ট কেন্দ্রকে ভর করে পরিচালিত হবে। এখানে শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর ভাঙার সুযোগ নেই। প্রশ্ন হলো, সরকার কী চাইলেই এগুলো পরিবর্তন করতে পারবে? উত্তর সরাসরি- না। তাহলে এর সমাধান কী?
রাষ্ট্র এবং জনগণের সম্পর্ক একটি বিমূর্ত ধারণা। অদৃশ্য এই সম্পর্ক শুধু অনুভব করা যায়। ধরা যায় না, ছোঁয়াও যায় না! তবে, সরকার চাইলে একটা গঠন মূলক উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করতে পারে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই রাষ্ট্র এখনো এককেন্দ্রিক। ফলে, চাইলেই রাজনৈতিক দলগুলোকে জিম্মি করে ঐক্যমত্য কমিশনে সিগনেচার করার চেষ্টা করা অযৌক্তিক।
এই রাষ্ট্রে বহু কিছু বিকেন্দ্রীকরণ করার আছে। একজন মুমূর্ষু রোগী টেকনাফ বা তেতুলিয়া থেকে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে আসা যত কষ্ট ঠিক ততটা কষ্ট কিন্তু সুপ্রীম কোর্টের জন্য হয় না। মানুষ অসুস্থ শরীর নিয়ে যখন বিভিন্ন হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে তখন কী সরকারের দয়া হয় না? পিজি হাসপাতালের বহু অধ্যাপক আছেন, তাদেরকে পারলে বিভাগীয় শহরে আগে পাঠান সকল প্রকার চিকিৎসা উপকরণ দিয়ে। মানুষের জীবন বাঁচান আগে। তারপর আসেন বিচার বিভাগে।
যাদের দুইবেলা খেতে কষ্ট হয় তাদের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইন্ডাস্ট্রি করুন। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ ঢাকার আশপাশে যে পরিমাণ গার্মেন্টস করে রাখছে সেটার সমাধান করুন। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের জন্য এই চারটি জেলা সবচেয়ে বেশি দায়ী অথচ ওনারা পড়ে আছেন সুপ্রীম কোর্ট সরাতে!
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে ক্লায়েন্ট আসে মিনিমাম দুই একটা মামলায়। আগাম জামিনের জন্য আসামিকে আদালতে আসতে হয়। এছাড়া, আর তেমন কোন মামলায় কোন পক্ষকে আসতে হয় না।
অথচ অধ্যাপকরা বলছেন, হাজার হাজার লোক নাকি সুপ্রীম কোর্টে আসে! দুঃখজনক হলেও সত্যি, ওই সব অধ্যাপকরা জানেন না বা সচিবালয়, পিজি হাসপাতালের লাইন কখনো দেখেন নি! পিজি হাসপাতালে যেই অধ্যাপক ভোর চারটার লাইন দেখেনি, তার বাংলাদেশ নিয়ে ভাবা অবান্তর। দরিদ্র, অসহায়, অসুস্থ শরীর নিয়ে গ্রাম থেকে আসা অসুস্থ শরীরের মানুষের কান্না দেখে যাদের মায়া হয় না তাদের থেকে এদেশ কোন কিছুই আশা করে না!
লেখক : মো. ওবাইদুল্যাহ আল মামুন সাকিব; রাজনীতি বিশ্লেষক এবং অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।